somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিকতার শিকারে ঐশী আজ করুণার পাত্র

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মো: ইখতিয়ার উদ্দিন রিবা
___________________________________
অপরাধের সংজ্ঞা তিনটি। এর তিনটি ইংরেজি শব্দের তিন অর্থ। Sin অর্থে ধর্মীয় বিধান, Vice অর্থে নৈতিকতা এবং Crime অর্থে রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করা। ক্রাইম দমনের দায়িত্ব পুলিশের এবং প্রথম দু’টি ঠেকানো সমাজের। বস্তুবাদে বিশ্বাসী পাশ্চাত্যে বলতে গেলে প্রথম দু’টির ভালাইহীনতায় শেষেরটিতে হচ্ছে সমাজ নিয়ন্ত্রিত। বিয়ের আগেই বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের ছড়াছড়িতে কুমারী কন্যার মহাদুর্ভিক্ষে জারজ সন্তান সেখানে যেন পোড়া মরিচ আর তালাক হলো পান্তাভাত। তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন খুবই শিথিল। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে অপরাধের তিন সংজ্ঞায় নিয়ন্ত্রিত প্রাচ্যের সমাজ। কিছু শিক্ষিত ভুঁইফোড়দের অনুকরণীয় পাশ্চাত্যের এ ধরনের সংস্কৃতির প্রভাবে অবক্ষয় ঘটতে শুরু করেছে প্রথমোল্লিখিত দু’টির। আমাদের মতো রক্ষণশীল সমাজে কন্যার হাতে মা-বাবা খুনের ঘটনা যেন অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, চাঞ্চল্যকর এবং গোটা সমাজকে হতভম্বকর হাজার বছরেরও এক অনন্য ঘটনা। তাই নানা প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়ায় মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধে নয়তো বয়ফ্রেন্ডের সহায়তায় এমন খুনের ঘটনা সম্প্রতি ভারতে ঘটে বলে সনি এবং লাইফ ওকে টিভি চ্যানেলে মাঝে মধ্যেই দেখা যায়। সামাজিক সীমান্ত না থাকায় এই ব্যাধিতে যেন আমরাও সংক্রামিত হচ্ছি। ঐশীর ক্ষেত্রটি হয়তো ভিন্ন। কারণ খুনের সাথে বাবার ল্যাপটপটি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পেছনে ঐশীর স্বার্থ থাকার বিষয়টি প্রমাণ ছাড়া সঠিক ধারণা করা অসম্ভব। আপাতদৃষ্টিতে ঐশীকেই মূল খুনি বিবেচনায় আমরা অনেকেই তার মাদকাসক্তি, অবাধ পারিবারিক স্বাধীনতা, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধহীনতা, অপসংস্কৃতি অনুসরণ ইত্যাদি বিষয়কেই কারণ বলে মনে করছি। ঘরে মা-বাবার পরে রাস্তায় প্রবীণদের এবং শিক্ষাঙ্গনে গুরুজনদের যে অভিভাবকত্বে আমরা লালিত ও শাসিত হয়েছি, তা আজ অনুপস্থিত। পথে-ঘাটে কোনো যুবক-যুবতীর অশোভন চালচলনে বা এমনকি প্রতিবেশীর মাদকাসক্তি দেখেও না দেখার বা শুনেও না শুনার ভানে প্রবীণরা নিজেদের আড়াল করে রাখেন; কিন্তু কেন? আমরা স্বীকার করি আর নাই করি; এর কারণÑ সমাজে অস্বচ্ছ রাজনীতির বিষাক্ত ছোবল, যার বিষে ঐশীর মতো হাজারো যুবক-যুবতী আজ আক্রান্ত। সুবিখ্যাত উপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘নারীর রূপের রূপ বৃদ্ধি এক প্রকার দোকানদারি।’ অপসংস্কৃতির প্রবক্তাদের কাছে কথাটি মূল্যহীন; কিন্তু রুচি ও আত্মমর্যাদাশীলদের কাছে অতি মূল্যবান। ইংরেজিতে Teddy boy I girl তাদের বলা হয়, যারা বাতিকগ্রস্ত শাসনাতীত কিশোর-কিশোরী ইংল্যান্ড-রাজ সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের সময়ের পোশাক পরিচ্ছদ পরে। ১৯৬৪-৬৫ সালের দিকে আমাদের উচ্চমধ্যবিত্ত কিছু কিছু শিক্ষিত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মাঝে হঠাৎ টেডি-প্যান্ট পরার হুজুক শুরু হয়। বছর দুয়ের মধ্যেই এ প্যান্ট উধাও হয়ে যায়। ঢাকায় নিউ মার্কেটে অজ্ঞাতরা রূপের রূপবৃদ্ধিকারী এমন মেয়েদের নিতম্বে হঠাৎ ব্লেডের পোচে প্যান্ট কেটে দেয়ার ঘটনা এর কারণ বলে শোনা গেল। পাশ্চাত্যের ভালোটির দোহাই দিয়ে খারাপটির প্রবর্তনে আমাদের সচেষ্ট থাকাটা নতুন নয়। এর সমর্থকেরা নিজের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবজ্ঞাপূর্ণ ধ্যান-ধারণা, বেশভূষা ও ভাবভঙ্গিতে যেন ব্রিটিশ পিয়্যার (ভূম্যধিকারী) ও কাশ্মিরি ব্রাহ্মণ (উঁচু মানের সুযোগ্য পণ্ডিত) বলে সমাজে নিজেকে জাহির করতে চান। এরাই যখন সুযোগ দিয়েছেন টিভি পর্দায় প্রায় উলঙ্গ মুম্বাইয়া লাস্য (স্ত্রী নৃত্য) দর্শনের, তখন তা উপভোগে যুবসমাজ নেশাগ্রস্ত হলে দায়ী কে? ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণান তার 'The Eastern religion and Wester thought' নামের অমূল্য বইয়ে লিখেছেন The higher a person is in the social scale, the greater are the obligations' যার যত বড় সামাজিক মানদণ্ড, তার তত বড় নৈতিক দায়িত্ব; কিন্তু এর বিচ্যুতি নেই, এমনটা বলা হয়তো যায় না। প্রায় শত বছর আগে বাংলার একজন প্রসিদ্ধ লেখক ও সমালোচক অক্ষয় চন্দ্র সরকার তারই ভাষায় লিখেছেন, ‘শিক্ষিত যুবক অশিক্ষিতের আবাসস্থান পল্লীগ্রামে পদার্পণ করে নাÑ অশিক্ষিতের পরিধেয় ধুতি চাদর পরিত্যাগ করিয়াছেন। অশিক্ষিত মুষ্টিভিক্ষা দান করে, শিক্ষিত সাবস্ক্রিপসন দেন। অশিক্ষিত অবগাহন করে, শিক্ষিতের তোলা জলে স্নান। অশিক্ষিতে তৈলমর্দন করে, শিক্ষিতের রুক্ষতা শ্রেয়। অশিক্ষিত গান করে, সঙ্গীত আমাদের শিক্ষিতের পক্ষে হৃৎকর্ণশূল। যে কাজে অশিক্ষিত নীরবে নিভৃতে রোদন করে, সেই কাজেই শিক্ষিতগণ সহস্র লোক একত্র করিয়া বাহু আস্ফালন করিয়া অভিনয় করেন। কালু, কিনু, তনু, মধু যে ধর্মে বিশ্বাস করে ভুজেন্দ্র ভূষণ এমএ, যোগেন্দ্রজীবন বিএদের সে ধর্মে বিশ্বাস করিলে অপমান হইবে না?’ এ সমালোচনায়ই রয়েছে আমাদের আজকের সামাজিক বিপত্তির ও ঐশীর বিপথগামী হওয়ার কারণগত উত্তর। এ থেকে উত্তরণের দায়ভার শিক্ষিত সমাজের ওপরেই বর্তায় বৈকি।

২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জঙ্গি শক্তির ছায়া, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×