somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুজিবাদী রাষ্ট্রে শান্তি ফ্রি

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিখবো না লিখবো না করেও লিখতে বসলাম। কি হবে আর এসব লিখে? মনের ক্ষোভগুলো বুদবুদ আকারে প্রকাশ পেতে পেতে এখন আগ্নেয়গি্রির লাভার মত বেরিয়ে পরছে।লিখে মনের ক্ষোভ মিটানোর ছোট্ট প্রয়াস মাত্র আর কি।

কলেজের গন্ডি পের হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায় আমার। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই দু সন্তানের মা। কৈশোর জীবনের স্বাদ মিটতে না মিটতেই স্বপ্নের ভুবন থেকে দায়িত্বপূর্ণ এক জীবনে চলে আসলাম।আচমকা পৃথিবীর বাস্তবতার সম্মুখীন আমি। ঐটুকুন বয়সে আমি দুনিয়ার ঘূর্নিপাকের চক্রে পরে গেলাম। আমার কাছে মনে হলো জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো সন্তানদের লালন পালন করা। সন্তানরা যত বড় হচ্ছে আমি ততই এটা উপলব্ধি করছি।

সন্তান মানুষ করার নামে আমরা এই পুজিবাদী রাষ্ট্রে সবাই কেমন আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। আর নিজেদের বংশধরদের সেদিকেই ঠেলে দিচ্ছি।সারাক্ষন ছুটে চলা। ছুটে চলা সর্বচ্চো ভাল জিনিস আহরনের ক্ষেত্রে। আমরা সন্তানদের শিখাচ্ছি ভালো মত পড়ালেখা করলে একটি ভালো চাকরি পাবে, গাড়ি হবে, বাড়ি হবে। তারপর একটা সাজানো সংসার। এরপর কি? সেটা কি আমরা বলতে পারি? পারি না। সবাই ব্যস্ত এখন কিভাবে বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ানো যায়। দরকার হলে ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি, গাড়ি কেনা দরকার। শুধু তাই না, বিদেশে বেড়াতে যাওয়া বা প্রিয়জনকে দামী উপহার দেওয়ার জন্য আজকাল ব্যাংকগুলো ১০০% পজিবাদী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। কারণ আমাদের মাথায় ঢুকে গিয়েছে যে, যেমন করেই হোক আমাকে এগিয়ে যেতে হবে।

এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গা কি? অথবা উন্নত জীবনের সঙ্গা কি? শুধু ভালো বাসায় থাকা, ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়া, বিদেশ ভ্রমণ, পার্টি, মৌজ মাস্তি করা? ব্যস এগুলোতেই হয়ে গেলো? মানুষের সামনে নিজেকে জাহির না করলে আমাদের মান সম্মান থাকে না। বছর দু এক আগে কোন এক পত্রিকায় পড়েছিলাম যে, ইন্ডিয়ার এক লোক আত্মহত্যা করেছে। কারণ তার ৭৩টা ক্রেডিট কার্ড। এক কার্ড দিয়ে কেনাকাটা আর অন্য কার্ড দিয়ে লোন শোধ করা। কিন্তু বেচারা মিলাতে পারেনি। সব তালগোল পাকিয়ে ঋণের ভারে জর্জরিত। অবশেষে এই করুণ পরিনতি।

আমাদের ভবিষত প্রজন্মও এমন সাঙ্ঘাতিক এক জটিল জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার নামে নিজেই তারা নিজেদেরকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে ফেলছে। একটা ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না।একটি নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রথম শ্রেনীর এক ছাত্রী তার বান্ধবীকে বলছে, ‘এই শোন, তুই সামিরার সাথে মিশবি না।’ তার বান্ধবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেনো?’ উত্তরে ঐটুকুন মেয়ে কি বললো জানেন? ‘কারন সে রিক্সা করে স্কুলে আসে’।

আমাদের সমাজ কোন পথে যাচ্ছে? দিন দিন সবাই লোভী হয়ে যাচ্ছি। অল্পে কেউ সন্তুষ্ট না। তাই মানুষের সাথে মানুষের হৃদ্যতাও কমে যাচ্ছে। সম্পর্ক গিয়ে দাড়িয়েছে এখন অর্থনৈতিক অবস্থানের ভিত্তিতে। সেটা পিতা-মাতা আর সন্তানের ব্যাপারেও দেখা যাচ্ছে। এটা মানতেই হবে যে, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না থাকলে জীবনে চাইলেও অনেক কিছু করতে পারা যায় না। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার দরকার আছে। তাই বলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার জন্য নৈতিকতাকে বিসর্জন দিতে হবে আর এত লোভ করতে হবে?

আগে আমরা হুটহাট করে এর ওর বাসায় যেতাম। অন্যরাও আসতো। কিন্তু এখন? নিজেরাও যেমন ব্যস্ত চাকরি, বাচ্চার টিউটর, এক্সট্রা কারিকুলাম, টেলিভিশন নিয়ে, অন্যরাও তেমনি ব্যস্ত। এখন সবার সাথে দেখা হয় পার্টিতে। আজকাল পার্টিরও তো কত রকমফের।হ্যালোইন পার্টি, ডিজে পার্টি, শিশা পার্টি, ইত্যাদি। ইদানিং শুনলাম সেহেরি পার্টি। জীবন এত ব্যস্ত যে সময় বের করা যায় না। সেহেরিতে সময় বের করা হয়েছে। খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিল খাবার মেনুতে কি মদ ছিল নাকি। আবার যদি গেয়ো ভুত ভাবে আমাকে!

যে হারে সমাজে পরকীয়া, ডিভোর্স, ড্রাগ, আত্মহত্যা আর সন্ত্রাস বেড়ে চলছে, তার পিছনের গল্প খুজে দেখলে জানবো যে সবকিছুর মূলেই আছে নিজের চাওয়ার লোভ।এত বেশী এটা চাই ওটা চাই যে, যখনি না পাই তখনি রি-অ্যাকশন শুরু।আর এই চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দের মাঝে পরেই মানুষ নিজেকে এতো লোকের ভিড়ে থেকেও নিঃসজ্ঞ বোধ করে। এটা অনেকে বুঝে আবার অনেকেই বুঝে না।

ইদানিং মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত আছে আকাশ সংস্কৃতির বিষাক্ত বাতাস। সোনালী জীবনের হাতছানী দিয়ে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে কদর্যময় জগতে। যেখানো শিখানো হচ্ছে কিভাবে নিত্য নতুন স্টাইলে নিজেকে জাহির করা যায় আর ভোগবিলাসে মত্ত থাকা যায়। আর তখনি বাধে বিপত্তি। সামর্থ্য না থাকলেও নিজেকে জাহির করতে গিয়ে মানুষ পা বাড়ায় অন্যায়ের পথে। শুরু হয় নোংরা প্রতিযোগিতা। তাই হাজার হাজার মানুষের সামনে নিজের মেয়েকে শাহরুখের সাথে নাচতে দিয়ে পিতার গর্ববোধ যেনো জাতির গর্ববোধের কারণ হয়ে যায়।

আরেকটা ঘটনা বলি। ঢাকার নামকরা এক স্কুলের ক্লাস সিক্সের এক ছাত্রী প্র্যাগনেন্ট। পত্রিকায় আসেনি কিন্তু মুখে মুখে রটে গিয়েছে। মেয়ে একবারের জন্যও বলেনি কে তার সন্তানের পিতা। ডাক্তারের কাছেও সে যাবে না। কষ্ট করে হলেও সে তার সন্তানকে মানুষ করবে। প্রিতী জিনতার মুভির মত। হায়! আজকালকার বাচ্চারা কত অকালপক্ক।বাচ্চারা আর বাচ্চা নেই।

একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি পেতে পেতে মানুষ এখন মনে করে পুজিবাদী জীবনে শান্তি ফ্রি। কিন্তু ফ্রি জিনিস যে বেশীরভাগ সময় ভালো হয় না সেটা বুঝার চিন্তা ভাবনা মানুষের দিন দিন লোভের কারনে লোপ পাচ্ছে। তাই দেখা যায় ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হেনেও মানুষ কোরবানীর সময় গরু কিনে ছাগল ফ্রি নিয়ে যায়। বাচ্চারা আজকাল চিপস খাওয়ার জন্য চিপস কিনে না। চিপসের প্যাকেটের ভিতর যে ফ্রি গিফট থাকে তা পাওয়ার জন্যই চিপস কিনে। মানে আসল বাদ দিয়ে লাভ নিয়ে তাদের আগ্রহ বেশী।আর মোবাইল কোম্পানীগুলোর অবস্থা দেখুন। অফ পিকে ফ্রি টক-টাইম দিয়ে জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করার পায়তারা করছে। পুজিবাদী চিন্তা ভাবনা এমনভাবে তাদের মাথায় ঢুকেছে যে দেশ উচ্ছন্নে গেলে যায় যাক, তাদের লাভ দরকার। এরকম আর কত উদাহরণ দিব? যে সমাজে আমরা উঠতে বসতে যখন শুধু লাভ খুজি আর ভোগ করার পায়তারা খুজি, তখন সেখানে আমি আমার সন্তাদের বলি, ‘এত লাভের দরকার নেই বাচ্চা। যা আছে তা নিয়েই সন্তষ্ট থাকো। নিজেকে এত জাহির করার দরকার নেই। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ কর’।

আমার সন্তানেরা এই সমাজের বাইরে নয়। সমাজের প্রভাব তাদের মাঝেও কি পরে না? তাদের মনেও তো সবকিছুর লাভ খুজে পাওয়ার আশা আকাঙ্ক্ষা উকি মারতে পারে। ভোগবিলাসী সমাজের স্রোতের মাঝে গা বিলিয়ে না দিয়ে স্রোতের বিপরীতে সন্তানদের নিয়ে চলা কত যে কঠিন আর কষ্টের, কি বলবো। মাঝে মাঝে মনে হয় সব ছেড়েছুড়ে গভীর অরণ্যে যদি চলে যেতে পারতাম!


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১২ রাত ৯:১৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×