রানু আর বকুল দুই বান্ধবি। দুজনের বাড়ি চিলি গ্রামে। গলায় গলায় খাতির যাকে বলে ঠিক সেই রকমই খাতির এই দুই জনের। বয়স কিন্তু খুব বেশিনা। ক্লাস সেভেন এ উঠেছে। আগামি বছর তাদের ক্লাস এইট এর বোর্ড পরীক্ষা। এ নিয়ে তাদের এখন থেকেই চিন্তার শেষ নেই। আসলে মেয়েরা এসব ব্যপারে একটু বেশি সিরিয়াস থাকে। তার উপর তারা আবার স্কুলের প্রথম আর দ্বিতীয়। এক্ষেত্রে বয়সের চেয়ে তাই তাদের জ্ঞাণের পাকামোটাই বেশি।
হাইস্কুল টা তাদের পাশের বাজপুর গ্রামে। সেখানে তারা হেটেই যায়। তার গ্রামের সব মেয়েরা এক সাথেই হেটে হেটে স্কুলে যায়। হাটার পথে অন্য মেয়েরা অন্যান্য বিষয নিয়ে আলোচনা করলেও রানু আর বকুলের আলোচনার বিষয়ে কিন্তু পড়ালেখার প্রাধাণ্যটাই বেশি। মনে হয় যেনো দুনিয়ার সকল জ্ঞাণই তাদের আয়ত্বে আনতে হবে। এভাবেই চলে যেতো দিন যদি না খোদার অন্য ইচ্ছা না থাকতো। আর তাই তো আজ তারা জেলের ভাত খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয়তো চরম কোনো শাস্তি, মানে মৃত্যুদন্ড, হবেনা কিন্তু সহায়ক হিসেবে তাদের নাম আসবেই যা তাদের শাস্তির জন্য বিবেচিত হবে। কিন্তু কেন আজ তাদের এই অবস্থা?
মাথামোটা মালেক বাজপুর গ্রামের সবার প্রিয় লোক। তাকে দিয়ে গ্রামের সবাই নিজেদের বিভিন্ন কাজ করায়। তার একটাই সমস্যা নিজের গ্রামের মেয়েদের কিছু না বল্লেও অন্য গ্রামের মেয়েদের সে ঠিকই উত্তক্ত করতো। বাজপুর গ্রামের কিছু ছেলে তাকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নির্মল! আনন্দ ভোগ করতো। তাকে অন্যান্য গ্রামের কেউ কিছু বল্লে বাজপুর গ্রামের প্রায় সবাই তার পক্ষ নিতো, বলতো যে, মাথামোটা মালেকের এমনিতেই বুদ্ধি কম, সে কি আর এগুলা বুঝে করে? এভাবে নিজ গ্রামের প্রশ্রয়ে সে তার মে্যেদের উত্তক্ত কার্যক্রম চালিয়ে যায়। কখোনো কারো গিয়ে হাত ধরে, কখনো কারো স্কুল ড্রেস এ গিয়ে টান দেয়। কখনো নিজের লুন্গি উঠিয়ে মজা করে নিজে যেমন নির্মল! আনন্দ ভোগ করে তেমনি বাজপুর গ্রামের অনেক কেই নির্মল! আনন্দ দান করায়। আশেপাশের গ্রামের মানুষরা কত সালিশ বসাতে চেয়েছে, কিন্তু পাগল, মাথামোটা বলে বাজপুর গ্রামবাসী তার পক্ষ নেয়। আশেপাশে কোন উচ্চমাধ্যমিক স্কুল না থাকাতে চিলি গ্রাম সহ আশেপাশের তিন চার গ্রামের একমাত্র ভরসা এই বাজপুর হাইস্কুল। তাই পড়াশুনার কথা ভেবে সবাই এই হাইস্কুলেই পাঠাতো।
এভাবেই চলতো, একদিন রানু আর বকুল হাইস্কুলে যাবার সময়, মালেক এসে বকুল এর জামা ধরে টান দেয়। এতে ভালোছাত্রী বকুলের আত্মসম্মানে লাগে, সে বসিয়ে দেয় চড়। সাথে সাথে মালেক বকুলের বুকে হাত দিয়ে দেয়। আর রানু চুপ থাকতে পারে না, সে ও আরেক গালে চড় মারে। মালেক তখন রানুর হাত ধরে তার নিম্নাংগে স্পর্শ করায় আর রানুর নিম্নাংগে ও স্পর্শ করে। রানু আর বকুল দুজনকেই ক্ষিপ্ত হয়ে জরিয়ে ধরে মালেক। রানু আর বকুল সাথে সাথে তাদের গ্রামে ফিরে যায় আর নিয়ে আসে তাদেব বাবা, ভাইদের কে। আর তাদের বাবা, ভাইরা মালেক কে ধরে সবার সামনেই মালেকের নিম্নাংগে আগুন ধরিয়ে দেয়। লিংগেদাহে মারা যায় মালেক।
আগুন ধরে যায় বাজপুর গ্রামে। বাজপুর গ্রামবাসী আজ একজোট। এই হত্যার বিচার চায়। শুধু তাই নয়, বাজপুর হাইস্কুল থেকে চিলি গ্রামের সব মেয়েকে টিসি দিতে হবে, চিলি গ্রামের কোনো মেয়ে এই স্কুলে পড়তে পারবেনা, এই দাবিতেও তারা অনড়। সবার যেন ফাসি হয়, কেউ যেন বাচতে না পারে এই দাবিতে আজ উত্তাল বাজপুর গ্রাম।
এভাবেই চলছে। মেয়ে দুইটাকে আমার সামনে নিয়ে আসা হলো, তারা কেউ এই হত্যার জন্য অনুতপ্ত নয়। আর এভাবেই লিংগ দাহের মাধ্যমে একটি প্রাণের ও পরিসমাপ্তি।
০৬/০৯/২০১২ ইং
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




