somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা ইংলিশ প্যান্ট

০৭ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা ইংলিশ প্যান্ট

ছোটবেলায় আমার জন্য ঈদের বরাদ্দ থাকত একটা ইংলিশ হাফ প্যান্ট। গতবার অপরাধের চুড়ান্ত শাস্তি হিসেবে সে ঈদি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কারন আমি লম্বা সিঁড়ির মাথায় বসে পিছলা খেলায় ছিলাম দারুন ওস্তাদ। নতুন প্যান্ট পেয়ে আমার আতিশয্য আরও বেড়ে যেত ফলে নতুন প্যান্টের পেছন ছিঁড়তে বেশী সময় লাগত না। তাই গতবার পেয়েছিলাম বাংলা হাফ প্যান্ট। কোমরে রাবার লাগানো পাতলা সুতি কাপড়ের তৈরী নীচের দিকে হ্যাংলা মত ছাড়া প্যান্টকে আমরা বলতাম বাংলা প্যান্ট আর মোটা কাপড়ের তৈরী দুই পকেট সমৃদ্ধ, সাথে প্লাস্টিকের বেল্ট পরার আংটা সহ প্যান্টগুলো হল সে সময়ের লোভনীয় ইংলিশ প্যান্ট। এক বছর পর আব্বা ইংলিশ প্যান্ট দেবার পুর্নঘোষনা দিলেন এবং সাথে করে বাজারে দর্জির দোকানে নিয়ে গেলেন। কাঠের অর্ধ ভাঙ্গা দোকানের মধ্যে একমাত্র সেলাই মেশিন। তার সামনে পাঞ্জাবী পরা দর্জি বকের মত লম্বা গলা বের করে বসে আছে। উঠে এসে আমার প্যান্টের মাপ নিলেন। ফেরার সময় জানতে চাইলাম, কবে দিবেন? দর্জি বলল, ঈদের আগের দিন এসো। তখনো ঈদের এক সপ্তাহ বাকি।

সকাল বেলা থেকে সময় আর কাটে না। দর্জি আমার প্যান্টটা করছে কিনা, ঈদের আগে দিবে কিনা কত রকম চিন্তা! শেষমেষ দোকানের আশপাশে গিয়ে ঘোরাঘুরি করতাম। দর্জির পাশে বসে কাপড় সেলাই দেখতাম। দর্জি হয়ত অনেকণ পর বলতেন, বাবা কিছু বলবা? কিছু বলতে পারতাম না। বাইরে এসে আবার ঘুর ঘুর করতাম। দ্বিতীয় দিনও একই অবস্থা দেখে দর্জি আমার সামনে প্যান্টের কাপড়টা কাটা আরম্ভ করল! আমি আনন্দে ছাগল ছানার মত ধিতিং ধিতিং নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে এলাম। আহা আজি আকাশে বাতাসে কি আনন্দ! তৃতীয় দিন গিয়ে বুকটা একেবারে ভেঙ্গে গেল। যেটুকু কাটা অবস্থায় দেখে এসেছিলাম সেভাবেই পড়ে আছে!

ঈদের আগে বিশেষ চুলকাটা ছিল বাধ্যতামুলক। আব্বা সাথে করে সন্তোষ হেয়ার কাটিং এ নিয়ে যেতেন। মেইন রাস্তার ধারে গর্তের উপর দোকানের পাছায় বাঁশ দিয়ে কোন রকমে দাঁড় করানো ছিল সন্তোষ হেয়ার কাটিং। চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আব্বা নাপিতকে বলতেন, এমনভাবে ছেঁটে দাও যেন কোরবানী ঈদের আগে আর হাত দেয়া না লাগে। সন্তোষ আমার চুলের কোরবানী করত। মাথা নিচু করে আমি রাস্তার অপর পাশের লোকজনের কম রেটে চুল কাটা দেখতাম। টুলের উপর নাপিত বসে আছে আর নাপিতের পায়ের ফাঁকে মাথা ঢুকিয়ে লোকজন চুল কাটছে।

ঈদের সকাল। ঘন কুয়াশা ভেদ করে মা তেল পিঠা তৈরী করে। আব্বা সবাইকে গোসল সেরে নেয়ার তাগাদা দেন। নিয়মমত আতর ভেজা তুলা কানে গুজে দিই। ইংলিশ প্যান্টের উপর পাঞ্জাবী আর বাটি ছাঁট চুলের উপর টুপি দিয়ে আব্বার সামনে দাঁড়ায়। হাতে ঈদি আট আনা তুলে দেন। দিনটা তখন আরও ঈদ ঈদ লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৪২
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×