somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃক্ষ (রিপোষ্ট)

১১ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃক্ষ

অনেক সময় আগে .. একটা অনেক বড় বৃক্ষ ছিল। আম বৃক্ষ। ছোট এক বাচ্চা সেই গাছটার সাথে খেলতে পছন্দ করত। সে গাছে উঠতে পছন্দ করত, আম খেতে পছন্দ করত, গাছের ছায়ায় ঘুমাতে ভালবাসত। বহমান সময়ের সাথে বাচ্চাটি বড় হচ্ছিল। এক সময় সে বৃক্ষের সাথে লুকোচুরি খেলা বন্ধ করে দিল। অনেক দিন পর বাচ্চাটি আবার বৃক্ষের কাছে গেলে বৃক্ষটি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলল, 'এই পিচ্চি সোনা এত দিন কোথাই ছিলে? আসো আমরা আবার লুকোচুরি খেলি।' পিচ্চি সোনা ঘাড় দুলিয়ে বলল, 'এখন আমি আর সেই ছোট্টটি নেই! আমি তোমার সাথে এখন খেলব না। এবার পুতুল নিয়ে খেলব কিন্তু আমার যে পুতুল কেনার টাকা নাই!' বৃক্ষ বলল, 'আমার তো টাকা নাই কিন্তু তুমি আমার সব আম নিয়ে যেতে পারো, সেগুলো বিক্রি করে অনেক টাকা পাবে।' বালক গাছের সব আম পাড়ল। আম বিক্রি করে সে অনেক টাকা পেল এবং অনেক খেলনাপাতি কিনল। সে খেলনাপাতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল কিন্তু বৃক্ষের কাছে আর ফিরে আসলো না। বৃক্ষ কষ্ট পেলো।

একদিন বালক আবার আসলো, সে ততদিনে পরিপুর্ন যুবক হয়ে উঠেছে। বিষন্ন যুবককে দেখে বৃক্ষ আগের মতই আপ্লুত হয়ে জানতে চাইল, 'কেন তোমাকে ও রকম দেখাচ্ছে? কাছে এসে আমার ছায়ায় বসো.. তোমাকে ছাড়া আমি খুব একাকীবোধ করছি।'
বালক বলল, 'আমার সময় নাই। অফিস, পরিবার নিয়ে আমি অনেক বেশী ব্যস্ত। পরিবারের জন্য আমাকে অনেক কিছু করতে হয়। আমি তাদের জন্য একটা বাড়ি বানাতে চাই। আমার টাকার প্রয়োজন ...।'
বৃক্ষ বলল, 'আমার তো টাকা নাই তবে চারিদিকে ছড়ানো অনেক শাখা প্রশাখা আছে। সেগুলো নিয়ে তুমি বাড়ি বানাতে পার।'
বালক খুব খুশি হয়ে উঠল। সে বৃক্ষের সব শাখা প্রশাখা কাটল। এবং সেগুলো বিক্রি করে নিজের জন্য একটা সুন্দর বাড়ি বানাল।
বৃক্ষ আবার একাকী হয়ে পড়ে। তার আর সময় কাটে না। সময়গুলো একঘেয়ে নিরানন্দ। শাখা প্রশাখাহীন বৃক্ষতে বাতাসেরা আর খেলা করে না। চৈত্রের দুপুরে হাওয়ার নাচন জমে না। তবু সময় বয়ে যায়। ভোরের সুর্যটা আলো বিলোতে বিলোতে ক্লান্ত হয়ে শেষে অজানা রাজ্যে ঘুমাতে যায়। একদিন, দুইদিন... প্রতিদিন। কিন্তু বালক আর ফিরে আসে না।

অনেক অনেক দিন পর বালক আবার আসলো। মাথার চুল ভ্র“ দাড়ি গোঁফের শ্বেত শুভ্র আর্বিভাব আর পিঠের কুঁজো পরিবর্তন জানান দেয় সে ততদিনে বৃদ্ধ হয়েছে। দন্তহীন বৃদ্ধের চেহারায় ফুটে উঠেছে জীবনকে বয়ে বেড়ানোর ক্লান্তি আর একাকীত্ব।
বৃক্ষ পুরনো দিনের মতই আপ্লুত হয়ে জানতে চাইল, 'কেন তোমাকে ও রকম বিষন্ন দেখাচ্ছে? আমাকে বলো - হয়ত আমি তোমাকে সহাযোগিতা করতে পারব .. কিন্তু আমার আম নাই .. আমার শাখা প্রশাখা নাই .. এমনকি ছায়া পর্যন্ত নাই! তোমাকে দেবার মত আমার আর কিছু অবশিষ্ট নাই ..
বালকটি (বৃদ্ধ) বলল, 'জীবন নিয়ে আমি ক্লান্ত। আমি বড় একা .. পাশে শুধু তোমাকে আমার দরকার। আমি কি তোমার পায়ের (শিকড়ে) কাছে একটু বসতে পারি?'
বালকটি (বৃদ্ধ) শিকড়ে গিয়ে বসল। তাকে সুখী দেখাচ্ছিল। তারা দুজনে কাঁদছিল।

আমরা কমবেশী সবাই বাবা-মায়েদের সাথে এরকম আচরন করে থাকি! আমাদের বাবা-মায়েরা সে 'বৃক্ষ'টির মত। ছোটবেলায় আমরা তাদের সাথে লুকোচুরি, পুতুলখেলার মত খেলতে পছন্দ করি। সময়ের সাথে, বয়স বাড়ার সাথে পড়ালেখা বা জীবিকার জন্য দুরে যেতে যেতে আমরা এত দুরে চলে যাই যে বৃক্ষ বাবা-মায়েরা একাকী পড়ে থাকেন। আমাদের ফিরে আসার সময় আর হয়ে উঠে না! তাদেরকে দেবার মত আর অবশিষ্ট সময় আমাদের হাতে থাকে না, আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি!

(ইন্টারনেটে পাওয়া গল্পের ছায়া অবলম্বনে)
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×