somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কঙ্কাল (২য় পর্ব)

১৯ শে মে, ২০০৮ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
... এবং ২য় পর্ব

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় রিতার সাথে আমার বিয়ে হয়। সে সময় আমি হলে থাকতাম। বিয়ের পর রিতা পিড়াপিড়ি করতে লাগল ওদের সাথে ওদের বাসায় গিয়ে থাকতে। আমি রাজি ছিলাম না এই কারণে যে আমি চাইছিলাম না, আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা কেউ জানুক। আমি রাজি না হওয়াতে রিতা খুব মন খারাপ করছিল। বারবার ওদের পরিবারের কথা বলছিল। অল্প কিছুদিন আগে রিতার আব্বা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সে সময় আমি ওদের পরিবারকে অনেক সময় দিয়েছি। রিতার মা মানে আমার নতুন শাশুড়ি মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। দুই মেয়েকে নিয়ে সবকিছু আগলে রাখতে তিনি ভরসা পাচ্ছেন না। তাই তিনিও চাইছিলেন আমি যেন তাদের সাথে থাকি। শেষমেষ পাকাপোক্তভাবে একেবারেই রিতাদের বাসাতে না উঠে গেলেও বেশিরভাগ সময় ওদের সাথেই থাকতাম।
প্রাথমিকভাবে দিনগুলো স্বপ্নের মত মনে হলেও স্বপ্ন ছাড়াও এর সাথে কিছু বাস্তবতা আছে। বিয়ের আগে লুকিয়ে দেখা করা, রিক্সার হুড তুলে সবাইকে আড়াল করে ঘুরে বেড়ানো। একে অপরকে স্বপ্নের কথা বলা। তারপর রাতে চাঁদের আলোয় বসে কল্পনা করা। ক্লান্তভাবে অনুভব করার মধ্যে এক ধরনের মাদকতা ছিল। আমরা সব সময় একে অপরের ধনাত্বক দিকগুলো কল্পনা করেছি। কখনো ঋনাত্বক দিকগুলোর কথা মাথায় আসেনি। কিন্তু বিয়ের পর ঋণাত্বক বিষয়গুলোও জীবনের সাথে আসতে লাগলো।

বিয়ের আগে যে রিতা কিছুই চাইতো না, শুধু তোমাকে পেলেই সারাজীবন প্রয়োজনে গাছতলাতেই কাটিয়ে দিতে পারবো.. এমন ধরনের কথা বলত! তার চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকল। আমি চাইতাম আমরা আগের মতই থাকব; লুকিয়ে লুকিয়ে রিক্সায় ঘুরব, ক্লান্তিতে একে অপরকে অনুভব করব। কিন্তু রিতার সব ভাল লাগাই ছিল সবার সামনে আমাকে তার 'বর' বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এত তাড়াতাড়ি সবাই জানুক আমি সেটা মানতে পারছিলাম না। আমার ভয় লাগত, পিছুটান কাজ করত। দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতাম। এরকম ছোটখাট একটা বিষয় নিয়ে একরাতে রিতার সাথে আমার মত চুপচাপ মানুষের কথা কাটাকাটির রেশ অনেক দুর গড়িয়ে গেল! আমি হলে চলে গেলাম। দুদিন পর রিতা তার স্বভাবসুলভ উচ্ছলতা নিয়ে আমার কাছে আসলো। আমরা রিক্সায় ঘুরলাম, খাওয়া দাওয়া করলাম। রিতা সত্যি আমাকে পাগলের মত ভালবাসত। অনেক সময় তার অধিক ভালবাসা আমার কাছে অত্যাচারের মত মনে হত। রিক্সায় আমার হাত ধরে সে আরেকটা আবদার করে বসল। যে আবদারটার জন্য আমি সবচেয়ে বেশী ভীত সন্ত্রস্ত ছিলাম। রিতা তার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যেতে চায়! রিতা আমাকে মাঝে মাঝে ভীতু বলত সে কারনেই কিনা জানিনা আমার হঠাৎ করে সাহসী হয়ে উঠতে ইচ্ছা করল। আমি তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম!
বাড়ি পৌছার আগে গ্রামের লোকজন সবাই রিতার পরিচয় জানতে চাইছে। আর আমার উত্তর শুনে সবাই কানাঘুসা করছে। বাড়ির সামনে যেতেই দেখলাম মা অগ্নিশর্মা রণভঙ্গিতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি রিতাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম! পরিচয় শোনার পর মা আমার দিকে ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে আসলো। আমি রিতাকে আড়াল করতে চাইছিলাম কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারলাম না। ইতিমধ্যে নাটক দেখতে চারিদিকে অনেক মানুষ জমে গেছে। আলেয়া মায়ের পেছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে আমার খালাতো বোন। পাঁচ বছর আগে আমার অনিচ্ছায় এবং মা'র জোর ইচ্ছায় আমাদের বিয়ে হয়।
রিতাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সেখান থেকেই তাকে বিতাড়িত করা হয়। আমি কোন ভাবেই তাকে আটকাতে পারিনি বা তার সঙ্গে ফিরে যেতে পারিনি। আমাকে বাড়িতে আটকে রেখেছিল। কারো কাছ থেকে কোন ধরনের সহায়তা পায়নি। বাবা ছিলেন নির্বিরোধী, স্বল্পবাক, স্ত্রীশাসিত ব্যাক্তিত্বের মানুষ। মায়ের কথাই সংসারের শেষ কথা। অলঙ্ঘনীয়। মা ছিল জমিদার বংশের শেষ প্রজন্ম। জমিদারীর কাঠিন্য ভাবধারা তার ভেতরেও রয়ে গিয়েছিল। বাবা পরিবারের নীরব দর্শক। আশপাশের লোকজনের সাথে মায়ের সম্পর্ক অনেকটা রাজা প্রজার মত। সেসব প্রজাদের দিয়ে মা রিতাকে যথেচ্ছভাবে অপমানের চুড়ান্ত করেছিল।

অপ্রত্যাশিত এমন আচরন রিতার কল্পনাতেও হয়ত ছিল না। সে সহ্য করতে পারেনি। চিরদিনের জন্য বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সে অবাক চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত কিন্তু ঠিক কি দেখত বোঝা যেত না। আমি অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে দেখা করতে পারিনি। রিতা আমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়নি!
নিরুদ্দেশ যাত্রায় আমি একদিন বের হয়ে যায়। এক সময় বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ি। তারপর থেকেই বোধহয় বেওয়ারিশ...

গল্পের এ পর্যায়ে বাতাসের প্রবল ঝাপটায় কোনদিকের দরজা দড়াম করে বন্ধ হল। এমন সময় বাতাসে কঙ্কালের হাড়গুলো আবার টুং টাং করে উঠল। এরপর আমার আর কিছু মনে নাই।
একটানা দুদিন প্রচন্ড জ্বরে অচেতন থাকার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় আমার ঘুম ভাঙ্গলো। স্যার কাচুমাচু মুখ করে আমার মাথার কাছে বসে আছেন। চোখ মেলতে তিনি বললেন, এই গাধা তুই ভয় পেয়েছিলি কেন? আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর স্যার থামলেন। তারপর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে পানের কৌটা বের করে একটা পান মুখে পুরলেন। আমাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০০৮ দুপুর ১২:১৮
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×