somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতের জর্নাল

১০ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতের জর্নাল

এক সময় আমি পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় থাকতাম। চতুর্থ তলায়। মুখোমুখি লাল একটা তিন তলা বাসা। দুই বিল্ডিং এর মাঝে সরু রাস্তা ছিল। ফলে দুরত্বটা বেশী ছিল না। চারতলা থেকে তাকালে সামনের তিনতলার রুমের ভেতর পর্যন্ত সব দেখা যেত। অকারনে সেদিকে চোখ চলে যায়। সন্ধ্যার পর সামনের বারান্দায় বসে চা খেতাম। বেশীরভাগ সময়ে লাইট অফ করে রাখতাম। এভাবে অন্ধকারের মধ্যে বসে থাকা আমার অভ্যাস! দুলাভাই চা নিয়ে অনেক সময় পাশে বসে বলতেন, কি শালা একা একা কি কর? আমি কাপটা তাঁর কাপে হালকা ছুঁয়ে বলতাম, চির্য়াস! এভাবে চলতে চলতে একদিন আবিস্কার করলাম, সামনের রুমটাতে একটা মেয়ে থাকে। সুন্দরী। হালকা পাতলা ছোটখাট মেয়েটি চশমা পরে। চুল বেণী করে। বিছানায় শুয়ে বই পড়ে। যেদিন থেকে ওকে দেখলাম সেদিন থেকে আমার চলাফেরা আমার নিজের কাছেই সন্দেহজনক হয়ে উঠল। বারান্দায় বসে থাকলে মনে হয় ওর জন্য অপো করছি। আমি নিঃশব্দে নিশ্চুপ বসে থাকি। আগের মত অকারনে ওর রুমের দিকে দৃষ্টি যায় না। তাকানোয় ওকে দেখার তীব্র আকাঙ্খা থাকে। দুলাভাই একদিন বললেন, কি ব্যপার এভাবে একা একা বসে থাক কেন? কিছু হয়েছে? নাকি ডুবে ডুবে... আমি হাসলাম।

অল্প সময়ে জেনে গেলাম কোন কোন সময় মেয়েটিকে দেখতে পাওয়া যাবে। আমি সে সময়গুলোর অপো করি। শেষবার দেখা যায় রাত এগারটা থেকে সাড়ে এগারটার মধ্যে। সে সাদা টি সার্ট, কালো স্কাট পরে আর মুখে ব্রাশ নিয়ে ছাদে উঠে। দাঁত ব্রাশের ফোরাইড যুক্ত ফেনা মুখে নিয়ে মেয়েদের বিচ্ছিরি লাগে। আর ফেনা নিয়ে তোতলা উচ্চারন করলে অসহ্য ঠেকে কিন্তু তার সাথে আমার সেরকম কোন অভিজ্ঞতা নেই। ব্রাশ করতে করতে চাঁদের আলোয় কিছুন হাঁটাহাঁটি করে। তারপর ডিসের রিসিভারটা খুলে নিয়ে চলে যায়। আমাকে আগামী দিনের অপোয় থাকতে হয়।
আজ জোৎস্না তীব্র হয়ে উঠেছে। আমার অপো তীব্রতর হচ্ছে। লাইট অফ করে জানালায় দাঁড়িয়ে আছি। বিকেল থেকে মনটা বেশ ফুরফুরে। সে আজ শাড়ি পরে অনেকণ দাঁড়িয়ে ছিল। কয়েকবার চোখে চোখ পড়েছে! তার ঠোঁটের কোনে ছিল ঝুলন্ত একটা হাসি। বারটা বেজে গেল। তবু সে এল না! আমার ঘুম আসছে না। রাত একটার দিকে নীচে কান্না আর হৈচৈ শোনা গেল। আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। এক রিক্সাওয়ালা কান্নাকাটি করছে। আশপাশের বিল্ডিং থেকে অনেকে বের হয়েছে। কান্নার কারন জানতে চাইছে। কাঁদতে কাঁদতে রিক্সাওয়ালা বলছে, এক লোক রিক্সা ভাড়া করে সন্ধ্যা থেকে এতন ঘোরাঘুরি করেছে। ভাড়া হয়েছিল চারশ টাকার মত। রাতে তাকে শাহবাগের এক হোটেলে ভাত খাইয়েছে। রিক্সায় বসে লোকটি অনবরত সিগারেট খাচ্ছিল। তাকেও দিয়েছে দামী সিগারেট। তারপর এখানে জলবিয়োগের নাম করে নেমে পালিয়ে গেছে। রিক্সাওয়ালা বুক চাপড়ে কাঁদছে। সন্ধ্যায় রিক্সা গ্যারেজে জমা দেয়ার কথা ছিল। এখন সে কিভাবে জরিমানা দিবে আর বউ বাচ্চাদেরই বা কি খাওয়াবে। উপর থেকে টাকা ফেলে সবাই রিক্সাওয়ালাকে সাহায্যে করছে। পালিয়ে যাওয়া 'রোমান্টিক' লোকটির উপর আমার খুব রাগ হচ্ছে।

কিছুক্ষন পর আবার চোর চোর বলে হৈচৈ শোনা গেল। আমাদের বিল্ডিংয়ের নিচেই চিৎকার করছে। দরজা খুলে বের হলাম। তিন তলায় বাড়িওয়ালা থাকেন। বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে মুখোমুখি হওয়াতে দুজন দুজনকে জিজ্ঞেস করছি কোথাই চোর? ভেতরে ঢুকে সে একটা রড নিয়ে আসলো। আমরা দু'জন নিচে নামলাম। নিচে অনেকে জমা হয়েছে।

অবাক কান্ড। চোর বাইরে আর জানালা দিয়ে চোরের হাত ধরে ওয়ালে পা লাগিয়ে একজন টেনে ধরে আছে। এখন চোরকে বাইরে থেকে ধরে ভেতরে নিয়ে আসতে হবে! কেউ যেতে সাহস করছে না। সবার ভয় ওর সাথে যদি আরও কেউ থাকে আর আক্রমন করে বসে। ব্যাপার হয়েছে গরমের দিন বলে নিচের দু’জন ভাড়াটিয়া জানালা খুলে ঘুমাচ্ছিল। এক সময় লোকটির উপর সার্ট পড়লে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে চিৎকার না করে শুয়ে ছিল চোর ধরার আশায়। প্রথমবার সার্টটি বের করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়বার যখন চোর হাত ঢুকিয়েছে অমনি লোকটি খপ করে ধরে ফেলে চিৎকার আরম্ভ করেছে। চোর হাতছাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। হাত ছাড়ানোর জন্য চোর লোকটির মুখে নাকি দু তিনবার থুথু ছিটিয়েছে! ওর সাথের চোরটি সাথে সাথে পালিয়ে গেছে।

চোরকে বাইরে থেকে উদ্ধার করে আনা হল। বাড়িওয়ালা গালে থাপ্পড় দিয়ে বলল, বল তোর সাথে আর কে ছিল? মারতে গিয়ে চোরের লুঙ্গি খুলে পড়ে গেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িওয়ালা বলল, ব্যাটা আবার হাফপ্যান্ট পরে এসেছে! চোর বলল, স্যার আপনের ছেলেওতো হাফপ্যান্ট পরে আছে! তিনি বললেন, ব্যাটা আবার মুখে মুখে কথা বলে।
দেখতে দেখতে ভোর হয়ে এলো।
চোরকে রাস্তায় পোলের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকজন দেখছে। একজন এসে বলল, ওই হারামি- তুই নাকি বলেছিস গতরাতে আমি তোর সাথে ছিলাম? তারপর দু চার ঘা বসিয়ে দিল। লোকজন কানাঘুসা করছে .. একেই বলে, চোরের মা'র বড় গলা!

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৫২
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×