somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাম বিভ্রাট

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ তার নিজের নামটা সব সময় খুব পছন্দ করে। আমিও আমার নামটা অপছন্দ করি না, ভালই লাগে। কারন আমার আব্বা আমার আগের নাম পাল্টিয়ে যথারীতি আকিকা দিয়ে এ নাম রেখেছেন। শুনেছি তাঁর এ নাম রাখার পেছনে অনেক আকাঙ্খা ছিল। সৌরভের গন্ধ পেয়েছিলেন কিন্তু বাস্তবে তাঁর সুদরপ্রসারী আকাঙ্খা মাঠে মারা পড়েছে। বাবা আমি দুঃখিত। তুমি আকাশের যেখানেই থাকনা কেন পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
সন্ধ্যার পর মাঝে মধ্যে ভিসিডি’র দোকানে আড্ডায় বসি। গ্রামে কখনো ভিসিডি’র দোকানে বসে আড্ডা দিব এটা চিন্তাই করা যায় না। সবাই হৈ হৈ করে বলবে, গেলো ছেলেটা উচ্ছন্নে গেলো কিন্তু এখানে সেটা বলার কেউ নেই। আর আমি নিজেও আজকাল এসব সেন্টিমেন্ট নিয়ে মাথা ঘামাই না। ফলে আড্ডাটা দিনদিন জম্পেস হয়ে উঠছে। মোটামুটি সবার সাথে পরিচিত হয়ে গেছি। পরিচিত হতে হলে সবাই প্রথমে নামটা জানতে চাই। আমি সানন্দে আমার ডাক নামটা সবাইকে বলি - চন্দন। আমি নামটাকে পছন্দ করি। কিন্তু যেদিন থেকে মকবুল হোসেন ফিদা’র গজগামিনি ছবিতে ‘চন্দন’ নামটা শুনেছি সেদিন থেকে নিজের নামটাকে ভালবেসে ফেলেছি।

ভালবাসার এ নামটা নিয়েই একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। আমি সেটাকে বেশ উপভোগ করছি। পরিচয় পর্বে সোহান ভাই হাত মেলাতে গিয়ে কেমন যেন একটু থমকে গেলেন! অল্পক্ষণ পর আমি রুমে চলে এসেছিলাম। সোহেল ভাই আর আমি একসাথে থাকি। রাতে ফিরে সোহেল ভাই জানাল.. আমি চলে আসার পর সোহান ভাই তার কাছে জানতে চেয়েছে, কি করে আমার মত একজন হিন্দুকে নিয়ে একসাথে থাকে! খাওয়া দাওয়ার অসুবিধা হয় কিনা? এসব আরকি।

পরদিন আরেকজনকে আমার কথা জিজ্ঞেস করছিল, সোহেল ভাই চিমটি কাটায় সে বলেছে - আপনি জানেন না? চন্দন ভাইতো হিন্দু! সোহান ভাইয়ের মুখে পরিতৃপ্তির হাসি। তিনি বলছেন, আমার কল্পনা শক্তি ভাল। আমি চেহারা দেখে আগেই ভেবেছিলাম একথা।
সোহান ভাই বললেন, ‘খাওয়া দাওয়া নিয়ে তোদের ঝামেলা হয় না?’
‘আরে নাহ! যেদিন গরুর মাংস রান্না হয় সেদিন দাদার জন্য ডিম রান্না হয়।’ সোহেল ভাই বলল।
‘ও তাহলেতো সমস্যা নাই।’
‘সমস্যা নাই মানে ও ডিমও খাই আবার মাংসও খাই!’
‘কি! তাই নাকি!’
‘হ্যাঁ, দাদা ওসব কিছু মানে না। সে কিন্তু উচ্চ বংশীয় ব্রাক্ষণ।’
তারপর থেকে সোহান ভায়ের মুখোমুখি হলে আমি বুকের কাছে দু’হাত উঠিয়ে প্রণাম করি!

আমার টেবিলের উপর ছোট্ট একটা ঘড়ি আছে। শাড়িপরা এক মেয়ে নৃত্যরত ভঙ্গিতে আঙ্গুল উঁচিয়ে আছে। তার সে আঙ্গুলের ডগায় ঘড়ির ডায়াল। সোহান ভাই ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, এটা তোমাদের কোন দেবী ? দেয়ালে আমার একটা বড় বাঁধানো ছবি আছে। সন্ধ্যার পতেঙ্গা বীচে চাদর পরিহিত অবস্থায় আমি দাঁড়িয়ে আছি। চাদর পরা এ ছবি দেখে তাঁর কল্পনা আরো পোক্ত হয়েছে।

ইতিমধ্যে সবার কাছে আমি ‘দাদা’ হয়ে গেছি! একদিন মিষ্টি খাবার পর্ব চলছিল, বাউল বলল, ‘দাদা এগুলো কি পুজোর প্রসাদ?’ আমি হাসি দিয়ে সবকিছুকে এড়িয়ে যায়। সবার কাছে ক্রমেই আমি ধোয়াশাছন্ন হয়ে যাচ্ছি! সোহান ভাই ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন কথা আমার কাছে জানতে চাই। যেমন : কি করে নামাজ পড়তে হয়, কোরআন শরীফের প্রথম আয়াত কি এসব... আমি ঠিক ঠিক উত্তর দিলে তাঁর বিস্ময়ের সীমা থাকে না।
নামাজের বিষয় জানতে চাওয়ার কারন হল, এক শুক্রবারে মসজিদে তাঁর মুখোমুখি হয়ে গেলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। পরে জুবায়েরকে বলেছে, জানো আজ এক অলৌকিক দৃশ্য দেখেছি! চন্দনকে দেখলাম নামাজ পড়তে!
‘ওর ঠিক নাই। কোন ধর্মই ঠিকমত পালন করে না। মন্দিরেও যাই আবার মসজিদেও যাই।’ জুবায়েরর বলল।
‘কি আশ্চর্য ! কি আশ্চর্য!’
‘জানেন ও রোজাও করে।’
ভাগ্যিস কেউ আমাকে কখনো হিন্দু ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেনি। তাহলে খেলা সেখানেই শেষ হয়ে আমি ধরা পড়তাম।

আড্ডায় গিয়ে একদিন বুকে হাত উঠিয়ে সবাইকে প্রণাম জানালাম। সোহান ভাই বলল, কি মিয়া ফাইজলামি পাইছো?
আমি বললাম, কেন দাদা কি হয়েছে?
‘কি হয়েছে সেটাকি প্যান্ট খুলে চেক করতে হবে নাকি!’
‘রাম নাম, রাম নাম - কি বলেন দাদা!’

কামরুল ভাই সবকিছু ফাঁস করে দিয়েছেন।
**
রচনা সময় # ফেব্রুয়ারী’ ২০০৪
লেখাটি "ছুটির দিনে / প্রথম আলো" - ১৫ মে ২০০৪ সংখ্যায় প্রকাশিত
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×