somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাইলাম, আমি এতোদিনে তারে পাইলাম !!

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমার প্রত্যেকটা আত্মীয় যেন উঠে পড়ে লেগেছে !! ভাই-ভাবি-বড় বোনের টা নাহয় মেনে নেওয়া গেলো; কয়দিন আগে যখন ক্লাস ৪ এ পড়া ভাগ্নে টা এসে আমায় বললো, "খালামনি, তোমার জন্য পাত্র ঠিক কইরালছি, আমার এক ফ্রেন্ডের বড়ভাই" -- জোরসে ওকে দাবড়ানি দিয়ে আপন মনেই ভাবলাম, এভাবে আর কতো !?

"ওহ, আমার পরিচয় দেয়া হয় নি, আমি ফেরদৌসি, পড়ছি ঢাকা মেডিকেলে।" আগেও খেয়াল করেছো বোধহয়, বিয়ের কথা উঠলেই আমার রাগটা চিড়বিড়িয়ে উঠে। বিয়ের প্রতি কেন আমার এই বিতৃষ্ণা, জানো তোমরা? আমিও অন্যান্য মেয়ের মতো স্বপ্ন দেখি একটা সুখী-সুন্দর বিবাহিত জীবনের…কিন্তু সেই জীবনে প্রবেশের যে বর্তমানে কদাকার প্রক্রিয়া, আমি ঘৃণা করি সেটাকে। পাত্রী দেখতে আসবি ভালো কথা, পাত্র আসুক; সাথে নাহয় দুই একজন এমন আত্মীয় আসুক, যাদেরকে আমি বিয়ের পরেও দেখা দিতে পারবো !! তা না, আসে কারা- পাত্রের বড় ভাই কিংবা দুলাভাই, নইলে পাত্রের চাচা-মামা !! তাও একবার না, বেশ কয়েকবার বেশ কয়েকজন দেখে যায়, আর সেই সময়ে হাসিমুখে অত্যাচার সইতে হয় :@

ইসলামকে পরিপুর্ণভাবে পালন করতে পারি না হয়তো, তবুও, মাহরাম পুরুষ ব্যতীত অন্য কারো সামনে সাধারণত পর্দা ছাড়া আসি না ; আর এইখানে পাত্রী চয়েজ করার নামে গাইরে মাহরামদের সামনে সেজে গুজে বসে থাকা লাগতেছে! বিয়ের আগেই যদি এই অবস্থা হয়, বুঝাই যায়, বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে পর্দা কতটুকু রক্ষা হবে !! আমি জানি, যেই লোক তার স্ত্রী সন্তানকে পর্দায় রাখে না, সে জান্নাতে যাবে না। না বাব্বাহ, আমি চাই না আমার জন্য কেউ জাহান্নামে যাক !

মেডিকেল থেকে বের হতেই মা এর ফোন, "জলদি বাসায় আয় মা, তোকে দেখতে পাত্রপক্ষ এসে বসে রইছে" … ধুর , সারাদিন ক্লাস করে , ক্লান্ত শরীরে বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নেওয়ার ও চান্স পাবো না হয়তো ! :(

আমার রুমে ঢুকতে হলে, মেইন গেইট দিয়ে ঢুকে ড্রইং রুম পেরিয়ে যেতে হয়। কলিংবেল বাজাতেই গেইট খুলে দিলো আম্মু, আমি ড্রইং রুম পার হতে হতে দেখলাম, সোফায় বসে আছে এক বয়স্কা মহিলা আর একজন লোক। আপাতদৃষ্টিতে লোক বলেই মনে হলো, ইন ছাড়া শার্ট আর মুখভর্তি দাড়ি দেখে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একবার তাকালাম, উনি উঠে দাড়িয়ে সালাম দিলেন। আমি জবাব দিয়ে রুমে চলে গেলাম।

ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে, আম্মুকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা পাত্রের কি হন? আর, বাকি মানুষেরা কোথায়?! … আম্মু বললো, মহিলা পাত্রের মা আর অই লোকটা-ই বলে পাত্র, আর আমাকে দেখতে এই দুইজন ই আসছে । খানিকটা রেগে গিয়ে বললাম, "ইইইইহ, অই বুড়ো ব্যাটারে আমি বিয়া করুম না" !! আম্মু বলে, কিসের বুড়ো, বুয়েটে ফোর্থ ইয়ারে পড়ে ছেলে !

ফোর্থ ইয়ারে পড়ে , তাইলে আবার বিয়ে করতে চায় ক্যা!? নিজে প্রতিষ্ঠিত না হলে বউকে খাওয়াবে কি !!? - আম্মুকে জিজ্ঞেস করতেই বললো, আমাকে না জিগায়ে মঈন কেই সরাসরি জিজ্ঞাসা কর গা। … কপট রাগ দেখায় বললাম, বাহ বাহ, নাম ধরে ডাকাডাকিও শুরু হয়ে গেছে! … আম্মার জবাব, তুই একবার ওর সাথে কথা বলে দেখ, ছেলেটা আসলেই ভালো…

মাথায় ঘোমটা-ঘামটি দিয়ে গেলাম তাদের সামনে। ছেলে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ নিচে নামায়ে নিলো। নাহ, ভালোই হইলো, কেও আমার দিকে তাকায় থাকলে ভীষণ অস্বস্তি লাগে! :/ যা ই হোক, ছেলের মা কিছুক্ষণ কথা বলে উঠে গেলো, যাওয়ার সময় বললো, " মা, মনের মিল ই বড়ো মিল, দেখো আমার ছেলেটার সাথে কথা বলে খানিকক্ষণ, মনমানসিকতার কোন গড়মিল আছে কি না। যদি আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে একে অপরকে লিখে রাখেন জোড়া হিসাবে, সেইটাই তো হবে "…

একটু দূরেই বড় ভাইয়া বসে আছেন, আড়চোখে দেখছেন পাত্রকে । দেখেই বুঝা যাচ্ছে,পাত্রকে ঠিক পছন্দ হয় নি তার । যা ই হোক, প্রথম প্রশ্ন আমিই করলাম, আচ্ছা, নরম্যালি তো সবাই প্রতিষ্ঠিত হয়েই বিয়ে করতে চায়, তবে আপনি কেন এত কম বয়সে, ছাত্রাবস্থায় বিয়েতে ইচ্ছুক? শান্ত গলায় বলা শুরু করলেন আমার সামনে বসে থাকা মানুষটি: "বিয়ে" মানে কিন্তু নিছক কিছু অনুষ্ঠানাদী পালন করা নয়। বর্তমানের সভ্যতা বিয়েকে কঠিন করে ফেলেছে, আর বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক গুলো এখন সহজতর হচ্ছে। আর শয়তানের খোচানি তো আছেই। আপনিই বলুন, মানুষ সহজ ফেলে কেনো কঠিনকে গ্রহণ করবে, যখন বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কে দায়িত্ব পালনের কোন বিষয় যুক্ত থাকে না !! কিন্তু তারা কিন্তু এর দ্বারা লঙ্ঘন করছে ইসলামের বিধানকে, জড়িয়ে পড়ছে গুনাহের কাজে। তাই নিজেকে পরিপার্শ্বের ও শয়তানের প্রলোভন থেকে বাঁচিয়ে রাখতে, আমি চাই বিয়ের ব্যাপার টা এখন ই সেরে রাখতে। ও হ্যা, আপনি কম বয়েসের কথা বললেন, তাই না? মনে রাখবেন, আমাদের নবীজি(সা) কিন্তু ২৫বছর বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ………

আসলেই, এভাবে তো ভাবি নি ! জিজ্ঞেস করলাম পরের প্রশ্ন, "আচ্ছা, বিয়ে যে করবেন, বউকে খাওয়াবেন কি?" …… হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন উনি: এই প্রশ্নটা অনেকেই করে… আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য যেহেতু এই উদ্যোগ, তাই রিজিকের ক্ষেত্রেও তাঁর রহমতের উপরে নির্ভর করা যায় না কি? ইনশাআল্লাহ, আত্মবিশ্বাস আছে নিজের প্রতি, ভরসা আছে আল্লাহর প্রতি ; রিজিক নিয়ে চিন্তে করবার কোন অবকাশ ই দেখছি না!

"আপনি বুয়েটের মতো এতো আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পড়েন, অথচ এতো কম বয়সে দাঁড়ি-- কেমন যেন Odd হয়ে গেলো না ? পুলিশে ধরে না?" - ব্যঙ্গ করে জিজ্ঞাসা করা এই প্রশ্নের জবাব টা খুব চিন্তাভাবনা করে দিয়েছিলেন মঈন সাহেব: দেখুন, দাড়ি রাখাটা মহানবী(সা) এর সুন্নাত। লোকে কি বললো না বললো, আমার তো সেসব শুনবার দরকার নাই ; আমার আমলনামায় তো লোকেদের কথা না, আমার কৃতকর্মের কথাই লেখা হবে । আর, আল্লাহ কখন কাকে সরল পথ দেখান, তা কেও বলতে পারে না। তাই তো দেখা যায়, নুহ(আ) এর ছেলে আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতা করে, আবার ফেরাউন-পত্নী প্রাণ দেয় আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অটল থাকার জন্য…

নাহ, আর কিছু জিজ্ঞেস করবো না। মানুষটা কে ভালোই মনে হচ্ছে। বললাম, আমার আর কিছু জিজ্ঞাসার নাই, আপনি কিছু জানতে চাইলে বলুন। তিনি নত মুখে বললেন, " আম্মার কাছ থেকে শুনেছি আপনার পরহেজগারী আর পর্দানশীনতা সম্পর্কে। সেগুলো সত্যি হয়ে থাকলে, আমার আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই, তবে একটা চাওয়া আছে" ।

"কি চাওয়া?"- বলে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি চোখ তুলে আমার দিকে চেয়ে বললেন, "I want your feet to be my kid's Jannah"… সালাম দিয়ে উঠে চলে গেলেন তিনি। পিছনে রেখে গেলেন এই মুগ্ধ আমাকে…

এরপরের ঘটনা বলতে হবে? আজ আমি মুয়াজ ও মুসআব- দুই ছেলে , আর স্বামী মঈন আহমেদকে নিয়ে সুখের সংসারেই আছি।

এখন আর আগের মত কথায় কথায় রেগে যাই না, ধৈর্যটা বেশ জোরদার হয়েছে।আল্লাহ আমাদেরকে নিরাশ করেন নি, তার রহমতের ডালা খুলে দিয়েছিলেন আমাদের প্রতি। আসলেই, আবারো বুঝতে পারলাম, আল্লাহর উপর যে ভরসা করে, চুড়ান্ত সফলকাম সে ই হয়...... ।

লিখাঃ খন্দকার রাইত বাবুর্চি
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×