somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘরে বাইরে আজ

২২ শে মে, ২০২০ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপর্ণার 'ঘরে বাইরে আজ' দেখুন, চিন্তা ও মনের জগতে উথাল পাথাল ঝড় বইবে। হতবাক হয়ে যাবেন। বিস্ময়াভূত হবেন। দেখা শেষে থমকে যাবেন। ভাবতে হবে বহুক্ষণ, কী দেখলেন!

শুধুই কী মানুষের বিচ্যুতি- নীচুতার বয়ান, নাকি আদর্শিক লড়াইয়ের বয়ানও 'ঘরে বাইরে আজ'।
অপর্ণা সেনের আরেকটি ধ্রুপদী কাজ বলবো। নিখুঁত। ফ্রেম, মেকআপ, গেটআপ, অভিনয়, সংলাপ এক কথায় অসাধারণ। গল্প নিয়ে কোন কথা হবে না। সাহসী কাজ। চপেটাঘাত। রবীন্দ্রনাথের কাজের এমন বাস্তবানুুগ চিত্রায়ন মুগ্ধ করবে আপনাকে।



এককালের নিয়মিত গো মাংস খাওয়া মহানাস্তিক বামপন্থী সন্দীপ পরিণত বয়সে হিন্দু বুদ্ধীজীবী সেজে হিন্দুত্ববাদ ফেরি করছে, ভারত বর্ষের নকশাই পাল্টে ফেলতে চাইছে। আর এতে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে তারই ছোট বেলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ছাত্র জীবনে একই রাজনীতি করা, সেক্যুলার, প্রগতিশীল একটিভিস্ট, সাংবাদিক নিখিলেশ। দু জন দু মেরুর মানুষ এখন আদর্শিকভাবে। ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে বামপন্থার বা সেক্যুলার রাজনীতির গুরুত্ব, বর্তমান অবস্থান ও পরিণতি আর হিন্দুত্ববাদীরা সব লন্ড ভন্ড করে দিয়ে হলেও কী চাইছে তারই বেশ সাবলীল বয়ান এই 'ঘরে বাইরে আজ' আদতে।

সন্দীপ ঝা শুধু অনৈতিক, সু্বিধাবাদী ও ক্ষমতালিপ্সুই না, নারীলিপ্সুও। নিজের অর্জনের জন্য ছোট বেলার অকৃত্রিম বন্ধুকে খুন করে তার বিরুদ্ধেই উল্টো মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করতে বাধে না সন্দীপের। যেমনটা বাধে না জুনায়েদদের মেরে ফেলার আদর্শিক ভিত্তি বা বাতাবরণ তৈরি করতে! সন্দীপদের উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এমনই। সন্দীপরা ভারতবর্ষের যে চরিত্র দাড় করাতে চায় তারই বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছে নিখিলেশরা। প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকীও পায় নিখিলেশ। খুনও হয়। আদর্শের জন্য দিনাতিপাত করা নিখিলেশদের তাই মরতে হয়।

সবচে বড় অন্তর্ঘাত সন্দীপ ও বৃন্দার সম্পর্ক। এর প্রেক্ষিত সন্দীপই তৈরি করে। বৃন্দা তাতে গা ভাসায় মাত্র বা বলা ভাল উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতি যেভাবে মানুষ সাময়িকভাবে হলেও মোহে পড়ে, ঠিক তেমনই সাময়িকভাবে সন্দীপের মোহে পড়ে বৃন্দা। শ্রদ্ধা ও ভালবাসাবাসির কোন ব্যাপারই তাতে ছিল না।
বুঝে উঠার আগেই বৃন্দার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতবর্ষে ভগবান খুব লৌকিক, মানুষ একদম ঘরের মানুষ বানিয়ে ফেলে ভগবানকে, এমনটাই বলেছিল বৃন্দাকে সন্দীপ। হিন্দু মাইথোলজির সাথে এডাল্টারিরও কী একটা সম্পর্ক বের করে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বৃন্দাকে উৎসাহিত করে সন্দীপই। একইরকম তালগোল পাকানো তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে অমল দত্তের মত কিশোরদের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদে আকৃষ্ট করে সন্দীপরা। যদিও,
সন্দীপকেও নিজের রাজনৈতিক চিন্তা বা তত্ত্বের অসারতা বা কর্ম প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখি আমরা। অমরনাথের তীর্থ যাত্রায় সহিংসতার উল্লেখ করে সন্দীপকে বলতে শুনি যা শুরু হয়েছে তা আর থামাবার কোন সুযোগ নেই, কারোরই কিছু করার নেই। সন্দীপেরও নেই! পরে যেমন বৃন্দাও বুঝতে পারে ভুল, একইভাবে অমল দত্তও বুঝতে পারে উগ্র হিন্দুত্ববাদের অসারতা। 'ঘরে বাইরে আজ' ভারতবর্ষের হাল আমালের পুরোদস্তুর রাজনৈতিক চালচিত্রের ছবি নিঃসন্দেহে । দারুনভাবে তুলে ধরা হয়েছে ভারতের বর্তমান সময়কে। অসাধারণ। সেক্যুলারিজমের সাথে হিন্দুত্ববাদের সংঘাত।

বৃন্দা ও নিখিলেশের সম্পর্ক সত্যিকারের ভালবাসার, শ্রদ্ধার। নর নারীর সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত।সন্দীপ-বৃন্দার ভুল নিখিলিশের অনুমেয়ই ছিল হয়ত! সন্দীপের চাইতে বৃন্দার উপরই ভরসাটা বেশি ছিল নিখিলেশের। তাই হয়ত কিছুক্ষনের জন্য বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে পড়ে নিখিলেশ, হতবাক। বৃন্দা প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যই নিখিলেশকে, এতোদিনের স্বাচ্ছন্দ্যকে ছাড়তে চায়। বৃন্দার সততাও অতুলনীয়। পেটের সন্তান সন্দীপের না নিখিলেশের সেটা নিয়ে নিজের দ্বিধার কথা নিখিলেশকে সরাসরি জানাতে পিছপা হয় না সে। ক্ষমা চায় নিখিলেশের কাছে। এই সময়ে বৃন্দাকে করা নিখিলেশের প্রশ্নগুলি মর্মভেদি। Do you love him? না বোধক উত্তরে - কাউকে ভাল না বাসলে, কেন নিখিলেশকে ছেড়ে যেতে চাইছে- বৃন্দাকে সেটাও জিজ্ঞেস করে নিখিলেশ। এক সময়ের বিমলা, নিখিলেশের মায়ের হাতে বা নিখিলেশদের মত আধুনিক পরিবারের হাতেই বৃন্দা হয়ে উঠে। যদিও বিমলার আদিবাসী পরিচয় মুছে ফেলা নিয়ে বা বৃন্দার জাতি সত্বার স্বকীয়তা নস্ট করা নিয়ে নিখিলেশদের প্রতি কোন অভিযোগ কখনো বৃন্দাকে করতে দেখা যায়নি। সন্দীপ সমালোচনার সুুযোগটা কাজে লাগাতে ছাড়েনা যদিও। বরং বৃন্দা সত্যিকার অর্থে নিখিলেশের মায়ের মেয়ে হয়ে উঠেছিল। সংস্কার মুক্ত আধুনিক পরিবারটি বৃন্দার সাথে নিখিলেশের বিয়ে দিয়ে বৃন্দাকে করুনা বা বিরাট কোন অনুকম্পা দেখায়নি। নিখিলেশ সত্যিকার অর্থেই বৃন্দাকে ভাল যেমন বেসেছিল, শ্রদ্ধাও করতো। সম্পর্কের শেষ অবধি। সে কারনেই সন্দীপের সাথে এতো বড় ভুলের পরেও বৃন্দাকে ক্ষমা ও গ্রহণ করতে নিখিলেশের বাধেনি। নিখিলেশ ও নিখিলেশের পরিবার উদার ভারতবর্ষের সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি আদতে। সবাইকে নিয়ে ভাল থাকতে চাওয়ার আকাঙ্খাই ভারতবর্ষের মুল স্পিরিট। অন্তর্ভুক্তিমুলক ভারতবর্ষ। জুনায়েদ অমল যেমন থাকবে, বৃন্দা ও বৃন্দার অনাগত সন্তানও তেমন থাকবে। সন্দীপরাই ভেদ বিভেদ সৃষ্টিকারী। সবাইকে নিয়ে ভাল থাকতে চাওয়ার আকাঙ্খার মূল্য ভারতবর্ষকে দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিখিলেশকেও দিতে হল, জীবন দিয়ে। সন্দীপের উচিত পরিণতি হয়েছে। বৃন্দার গুলিতে মরার আগে নিখিলেশ বৃন্দার সাজানো গোছানো সুন্দর জীবনটা তছনছ করে দেয় সন্দীপ। সন্দীপদের হাতে নিখিলেশ বৃন্দা বা ভারতবর্ষ না শুধু, পুরো পৃথিবীই অনিরাপদ। পুরো পৃথিবীই তছনছ করে ফেলবে এরা। কখনো সন্দীপ নামে, ভিন্ন কোথাও অন্য নামে, আরেক ধর্মের দোহাই দিয়ে। 'ঘরে বাইরে আজ' হাতে গোনা ক জনের জীবনে ঘটা দূর্যোগের খতিয়ান নয় তাই। আসলেই 'ঘরে বাইরে আজ' দূর্যোগের ঘনঘটা...


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২০ সকাল ৯:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×