somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলছবি - দ্বিতীয় পর্ব

২৮ শে জুন, ২০১২ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

ইউনিভার্সিটির প্রথম বছরটি খুব কষ্ট করে কাটাতে হয়েছিল তাকে।সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছোটবোন লায়লা অবশ্য এতোকষ্ট মেনে নিতে পারতো না। তাকে প্রায় সবসময় হেটে স্কুলে যেতে হতো। রিক্সায় গেলে খরচ বেড়ে যাবে বলে রাফেয়া খানমই ওর সঙ্গে হেটে হেটে স্কুলে দিয়ে আসতেন। সঙ্গের টিফিন ছিল বাড়ি থেকে তৈরি করে নিয়ে যাওয়া রুটি আর আলুর ভাজি। এ নিয়ে সহপাঠীদের হাসাহাসির কথা প্রায়ই বড়বোনের সাথে কষ্ট নিয়ে বলতো লায়লা। অবস্থা এমন দাড়িয়েছিল, সহপাঠী কিছু মেয়ে ওকে মিস পটেটো নামে ডাকতো।শায়লার অবশ্য এমন অবস্থায় পড়তে হয় নি। তবে বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় সে খুব বেশি থাকতে পারতো না। কারণ আড্ডা মানেই খাবারের সংযোগ। কিছুক্ষণ আড্ডাবাজির পর খাবারের আয়োজন থাকবে না এমনটা কালেভদ্রেও দেখা যায় না।খাওয়ার আয়োজন মানেই সেখানে টাকা খরচের ব্যাপার।
একবার শায়লার বান্ধবী তানিয়া জন্মদিনের দাওয়াত দিয়েছিল। সেবার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় খুব মাইন্ড করেছিল তানিয়া। কিন্তু তানিয়াকে শায়লা কিভাবে বুঝাবে যে সেসময় তার কাছে মোটে ২০০ টাকার মতো ছিল। মাস শেষ হতে তখনও ৫ দিন বাকি। ভালো একটা জন্মদিনের গিফট কিনতেও তো ৪০০-৫০০ টাকা লেগে যায়।
সে সময় একটা টিউশনির টাকা দিয়ে কোনোমতন নিজের খরচ চালাতে হতো শায়লার। মহল্লার ভিতরেই ছাত্রীর বাড়ি। ছাত্রী ক্লাস ফোরে পড়ে। রীতিমতো মহাগাধী টাইপের। পড়ালেখায় একদমই মনোযোগ নেই। কেবল পড়ার টেবিলে নতুন নতুন পোশাক নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। এই বয়সেই মেয়েটি এমন হয়ে গেছে ভেবে মাঝেমধ্যে হতাশ হতো শায়লা। কিন্তু মাস গেলে ১৫০০ টাকা পাওয়া যায়, তার জন্যই সে নিয়ম মেনে পড়াতে যেত। অন্যদিকে মায়ের কাপড় বোনার টাকা দিয়ে সংসার আর ছোটবোনের পড়ালেখার খরচ চলতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ থেকে অবশ্য শায়লা একসঙ্গে তিনটা টিউশনি পেয়ে যায়। তখন মাও আগের মতো সামর্থ্য নিয়ে কাজ করতে পারে না। এক অর্থে সংসারের খরচ চালানোর দায়ভারও এসে পরে তার ওপর। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স পাস করার পর চাকরি পেয়ে সমস্যা কিছুটা কমে। শায়লার মা তার দূর সম্পর্কের এক ভাইকে অনেক বলে কয়ে চাকরিটা যোগাড় করে দিয়েছেন। পরিচিত মামা চাচা না থাকলে চাকরী পাওয়া কতো কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে শায়লা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর কয়েক মাসের রুটিন প্রায় এক হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবারে শুরু হতো সপ্তাহের রুটিন কাজ। কাছের পত্রিকা স্টল থেকে চাকরির খবর জাতীয় পত্রিকা সংগ্রহ করে আবেদন করা যায় এমন বিজ্ঞপ্তিগুলোতে লাল কলম দিয়ে দাগ দিয়ে রাখতো। শনিবার থেকে শুরু হতো আবেদন পর্ব। মাঝেমধ্যে ডাক পড়লে লিখিত পরীক্ষা দিতে যাওয়া কিংবা ভাইভা দিতে যাওয়া। এর মধ্যে লাল কলম কয়েকটা শেষ হলেও চাকরি পাওয়া হয়নি। সেই অবস্থা থেকে রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর এমডির পিএসের চাকরি পেয়ে হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল শায়লা। কিন্তু রাগের মাথায় হুট করে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর এখন কি করবে এই নিয়েই শায়লার ভাবনা। ছোটবোন লায়লা এরমধ্যে শায়লার আশেপাশে বেশ কয়েকবার ঘুরঘুর করে গেছে। শায়লার গম্ভীর ভাব দেখে কিছু বলতে সাহস পেল না। আপু চিন্তা করিস না, আরেকটা চাকরি কিছুদিন পরেই পেয়ে যাবি, এই সান্ত্বনা বানীটুকু দিতে পারলো না। সে ভালো করেই জানে তার বড় বোনকে এইরকম সান্ত্বনাবানী শুনিয়ে লাভ নেই।

কয়েকদিন পর শায়লা নতুন একটি অফিসে চাকরির জন্য আবেদন প্রস্তুত করছিল এমন সময় লায়লা পেপার হাতে বোনের কাছে এসে বসলো।
‘আপু কি করিস?’ জড়তা কাটানোর জন্য বললো লায়লা। বয়সে অনেক ছোট, তারপরেও ছোট থেকেই বড় বোনকে তুই সম্বোধন করে। এ নিয়ে অবশ্য শৈশবে দুই বোনের মধ্যে মারামারি কম হয়নি। কিন্তু লায়লার এক কথা, সে তার বড় আপুকে তুই তুই করে ডাকবে। বাধ্য হয়েই তা মেনে নিতে হয় শায়লার।
‘ঝামেলার মধ্যে আছি। কী বলতে চাস, তাড়াতাড়ি বলে ফেল? বলে বিদায় নে।’ শায়লার তড়িঘড়ি জবাব।
এমন করে বলিস কেন? ভাবটা এমন যেন আমি তোর ওপর বোঝা হয়ে চাপতে এসেছি। অভিমানী গলায় বললো লায়লা।
ছোটবোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, ‘নারে পিচকি, দেখছিসতো কী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তাই মাঝেমধ্যে মেজাজ ঠিক থাকে না।’ লায়লা যেমন বড় বোনকে তুই সম্বোধন করে, তেমনি প্রায় সময়ই ছোটবোনকে ‘পিচকি’ বলে সম্বোধন করে শায়লা।
পিএস চেয়ে নতুন একটা বিজ্ঞপ্তি দেখলাম পেপারে। তাই তোর জন্য নিয়ে আসলাম। অ্যাপ্লাই করে দেখতে পারিস।
বিজ্ঞপ্তিটা হাতে নিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখলো শায়লা। খুব সংক্ষিপ্ত কথায় লেখা। একজন শিক্ষিত, মার্জিত স্বভাবের পিএস দরকার। আগ্রহী প্রার্থীরা সিভি মেইল করুন।সঙ্গে মেইল করার ঠিকানা ও অফিসের ঠিকানা দেওয়া। এরকম একটি বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন করা উচিত হবে কি না সেটা নিয়ে দুনোমনায় পড়ে গেল শায়লা। এধরনের বিজ্ঞপ্তিতে চাকরি নিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রায় সময়ই শোনা যায়। আগের অফিসে পিএস হিসেবে কাজ করতে গিয়েও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। বড়বোনকে চুপ করে থাকতে দেখে লায়লা জিজ্ঞেস করলো- কিরে আপু, চুপ করে আছিস কেন? কিছু ভাবছিস?
তুই আমাকে গরম তাওয়া থেকে জলন্ত কড়াইয়ের দিকে ঠেলে দেওয়ার ফন্দি করেছিস।বলেই হেসে ফেললো শায়লা।পরমুহুর্তে যোগ করলো, দেখি ভেবে, কী করা যায়।
ইমেইলের মাধ্যমে যেহেতু, অ্যাপ্লাই করে ফেল আপু।

কয়েকদিন পর পাড়ার গলির মোড়ের সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে সিভি মেইল করে আসলো শায়লা। ইমেইল অ্যাড্রেসটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বান্ধবী তানিয়া খুলে দিয়েছিল। শায়লা মনে মনে ভাবলো, এতোদিন পর ইমেইল অ্যাড্রেসটা কোনো একটা কাজে লেগেছে। সিভি পাঠাতে গিয়ে খেয়াল করলো বিভিন্ন সময় তানিয়াই তাকে মেইল করেছে।মেইলগুলো অনেক পুরনো। মেইল খুব একটা চেক করা হয়না বলেই আগে দেখা হয়নি। এখন তানিয়ার সাথে খুব কম যোগাযোগ হয়। মাস্টার্স পাশের পর তার বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর সাথে এখন যে কানাডাতে থাকে। সেখানকার টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে সেকেন্ড মাস্টার্সের জন্য ভর্তিও হয়েছে। মাঝেমধ্যে সেখান থেকে ফোন করলেই কেবল কথা হয় দুজনার।
ইমেইলে সিভি পাঠানোর কয়েকদিন পর এক দুপুরে ফোন আসলো। অপরিচিত নাম্বার দেখে প্রথমে ধরবে কিনা সংশয়ে থাকে শায়লা। সংশয়ে থাকার অবশ্য একটা কারণও রয়েছে। সকাল থেকেই অপরিচিত একটা নাম্বার বার বার বিরক্ত করছে। কী মনে করে যেন ফোন ধরলো। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো ভরাট কন্ঠস্বর।
মিস শায়লা জামানের সাথে কথা বলতে পারি?
হ্যা বলুন, আমিই শায়লা।
মেইলে পাঠানো আপনার সিভিটা আমি দেখেছি। কাল পরশুর মধ্যে বিজ্ঞাপনের দেওয়া ঠিকানায় এসে দেখা করতে পারবেন?
নতুন একটা চাকরি হতে যাচ্ছে ভেবে মনে মনে খুশি হলো শায়লা। সেই খুশি অবশ্য খুব একটা প্রকাশ করলো না। কেবল ছোট কথায় উত্তর দিল- হ্যা, পারবো। কখন আসতে হবে?
সকাল ১১ টার দিকে আসতে আপনার কোনো সমস্যা হবে?
ঠিক আছে, আমি আসবো।
দেখা হচ্ছে তাহলে।বলেই ফোন কেটে দিল ভদ্রলোক। শায়লা এবার একটু সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেল। কালকে পরশুর মধ্যে সকাল ১১ টার দিকে সে দেখা করতে যাবে কিনা এই ভাবনা পেয়ে বসলো তাকে।

(চলবে)
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×