somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করপোরেট ইমেজের আড়ালে- গ্রামীণফোনের কালো অর্থনীতি

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রামীণফোন বিতর্ক-৩/
চোখের আড়ালে-আবডালে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে সাধারণভাবে তাকে বলা হয় কালো অর্থনীতি। আবার আইনসম্মতভাবে ব্যবসা করে যদি সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে ঠিকভাবে তার হিসাব দেয়া না হয় কিংবা কর ফাঁকি দেয়া হয় তাও বেআইনি কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে।
আড়ালে-আবডালে গ্রামীণফোনের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি প্রথম সামনে আসে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে, যখন বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রামীণফোনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) মামলা করে। এর আগে র্যাবের একটি বিশেষ বাহিনী গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে আট দিন অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপির অসংখ্য যন্ত্রপাতি খুঁজে পায়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে গ্রামীণফোনের কালো অর্থনীতির অবগুণ্ঠন উন্মোচন হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, একসময় শুধু অবৈধ ভিওআইপি নয়, সিম জালিয়াতি, কর, ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকি, নিয়ম-বহির্ভূতভাবে রেয়াত নেয়ার অভিযোগে গ্রামীণফোনের কাছে এনবিআরের পাওনা মোট ২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা।
গ্রামীণফোন সবচেয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেয় সিম (সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল) জালিয়াতির মাধ্যমে। অবশ্য বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেলের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি। এনবিআরের দাবি, নতুন গ্রাহকের কাছে সিম বিক্রি করলেও তা বদলি (রিপ্লেসমেন্ট) দেখিয়ে ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৪৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৭০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয় গ্রামীণফোন। টেলিকম খাতে এটাই সবচেয়ে বড় রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা।
এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, ২০০৭-এর জুলাই থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৪টি সিম বদল হয়েছে। এসব সিমের বিপরীতে ফাঁকি দেয়া ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও নির্ধারিত সময়ে রাজস্ব না দেয়ায় ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর মিলে প্রতিষ্ঠানটির কাছে এনবিআরের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার বেশি।
উল্লেখ্য, কোনো কারণে ফোন হারিয়ে গেলে বা সিম নষ্ট হলে সংযোগ অপরিবর্তিত রেখে সিম বদলে নিতে পারেন গ্রাহক। এজন্য কোনো রাজস্ব দিতে হয় না। অর্থাৎ প্রথম যিনি সিম কিনবেন, তিনিই শুধু সুযোগটি পাবেন। নতুন গ্রাহকের ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু গ্রামীণফোন হারানো সিম প্রথম গ্রাহকের নামে ইস্যু না করে পরিবর্তিত গ্রাহককে একই নম্বরের সিম দিয়েছে। এতে নতুন গ্রাহক তৈরি হলেও এর বিপরীতে গ্রামীণফোন কোনো রাজস্ব পরিশোধ করেনি। যদিও সিমপ্রতি ৮৫০ টাকা কর দেয়ার কথা অপারেটরদের।
সিম জালিয়াতির মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি এনবিআরের নজরে আসে গত বছরের মাঝামাঝি। এর আগে ২০১১ সালে বিটিআরসি এক নিরীক্ষায় গ্রামীণফোনের ৭৪৮ কোটি টাকার সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ে। বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির এসব ঘটনা উদঘাটন হলেও আজো তা পরিশোধ করেনি গ্রামীণফোন। বরং অনাদায়ী পাওনা দাবি করলে তা না দিয়ে উল্টো মামলা করে গ্রামীণফোন। শুধু মামলার কারণেই গ্রামীণফোনের কাছে আটকে আছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। সরকার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে এসব মামলা সমাধানে আগ্রহী হলেও আগ্রহ নেই গ্রামীণফোনের।
এ বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, ‘গ্রামীণফোনের মতো বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের তা পরিশোধ করতে বলা হয়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে। এজন্য বড় অঙ্কের রাজস্ব আটকে আছে। পাওনা আদায়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে শিগগিরই আমরা বৈঠকে বসব।’
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ইজারামূল্যের ওপর ভ্যাট না দিয়ে বরং নিয়মবহির্ভূতভাবে রেয়াত নেয় গ্রামীণফোন। এতে সরকারের পাওনা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। একই বছর ভ্যাট ফাঁকি ও এর সুদ আসে ১৭ কোটি টাকা। ওই সময়ে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আরো তিনটি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা শনাক্ত করে এনবিআর। বাংলাদেশ রেলওয়ের ইজারায় ভ্যাট বাবদ ৩০ কোটি ৯৭ লাখ ও ৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরিশোধ করেনি গ্রামীণফোন।
গ্রামীণফোনের রাজস্ব ফাঁকি ও বকেয়ার মধ্যে রয়েছে— অপটিক্যাল ফাইবার সাবলিজের ভ্যাট বাবদ ৩ কোটি টাকা, ট্যারিফ মূল্যের বিপরীতে অবৈধভাবে রেয়াত ১০ কোটি ৫০ লাখ, অবকাঠামো বা স্থাপনায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা অবৈধভাবে রেয়াত নেয়া। ২০০৬ সালের জুলাই থেকে ২০০৯-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি এনবিআরের নিরীক্ষায় ধরা পড়ে। এছাড়াও রয়েছে ট্যারিফ মূল্যের ওপর অবৈধভাবে নেয়া রেয়াত ২ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা সম্প্রতি স্থানীয় রাজস্ব অডিট অধিদফতরের তদন্তে ধরা পড়ে।
শুধু রাজস্ব ফাঁকিই নয়, অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গেও গ্রামীণফোনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তদন্ত অভিযান। বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরুল আলম শীর্ষ সেলফোন অপারেটরদের কললিস্ট পরীক্ষার উদ্যোগ নেন ২০০৭-০৮ সালে। সে সময় বিটিআরসি গ্রামীণফোনের অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।
২০০৭ সালের শেষ দিকে অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রামীণফোনকে প্রথম দফায় ১৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর ২০০৮ সালের শুরুর দিকে গ্রামীণফোনে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রপাতি উদ্ধারের পর ২৫০ কোটি টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি।
এ বিষয়ে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি গুলশান থানায় একটি মামলাও হয়। মামলায় গ্রামীণফোনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস ও ওলা রিসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ‘শাস্তিযোগ্য কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ার ডিজি টেলিকমিউনিকেশন্সকেও আসামি করা হয়। মালয়েশিয়ার এ প্রতিষ্ঠানে টেলিনরের শেয়ার রয়েছে।
বিটিআরসির তত্কালীন চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘ভিওআইপির এ অবৈধ ব্যবসায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার দলের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা রয়েছে। এটা আমাদের অনুসন্ধানে বের হয়েছে।’
ই-ওয়ান সংযোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোন তৃতীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ কল টার্মিনেশনে সহায়তা করেছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সে সময় বিটিআরসি চেয়ারম্যানের দৃঢ় অবস্থানের কারণে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রামীণফোন স্বীকার করে, তৃতীয়পক্ষকে অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল তারা। এজন্য জরিমানার ২৫০ কোটি টাকা দিতেও সম্মত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
যদিও বিটিআরসির সূত্রে জানা গেছে, দুই দফা অভিযানে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে সে সময় হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফা অভিযানে অবৈধ ভিওআইপির জন্য গ্রামীণফোনকে ৫০০ কোটি টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি। কারণ তখন তাদের বিরুদ্ধে সমপরিমাণ অর্থের কল টার্মিনেশনের রেকর্ড পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন মহলের চাপে জরিমানা ২৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনে বিটিআরসি। পরবর্তী সময়ে গ্রামীণফোন জরিমানার টাকা পরিশোধ করায় মামলা তুলে নেয় বিটিআরসি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ তাহমিদ আজিজুল হক বলেন, গ্রামীণফোন দেশের প্রচলিত সব আইনকানুন মেনে চলছে। অনৈতিক বা বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে গ্রামীণফোনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ফলে নিয়মনীতি মেনে না চলার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে গ্রামীণফোন।
View this link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×