somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুলনায় কাজের মেয়ে সীমা হত্যা নাটক : মামলার আইও আতংকে

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানাধীন মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার কাজের মেয়ে সীমা হত্যা নাটকের অবসান হওয়ার পর ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দারোগা শাহ আলমের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। রোববার দুপুর থেকে দারোগা শাহ আলম লাপাত্তা ছিলেন। সোমবার দুপুরে খালিশপুর থানায় গিয়ে তাকে পাওয়া গেলেও প্রথমে তিনি সংবাদ কর্মীদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। পরে কেএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তিনি মিডিয়ার সামনে মুখ খুললেও ‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি’ উল্লেখ করে বলেন, তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। কথিত সীমা হত্যার সাথে জড়িত মিল্কী আইসক্রীম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ফাতিমা ইয়াসমিন দীর্ঘ প্রায় দু’মাস যাবত জেল হাজতে থাকলেও রোববার জীবিত সীমার আদালতে স্ব-শরীরে হাজির হওয়ার পরও তদন্ত বাকি থাকে কি করে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা না বলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এদিকে থানা চত্বরে সাংবাদিকদের অবস্থান দেখেই দারোগা শাহ আলম তার ব্যবহৃত মটর সাইকেল (খুলনা মেট্রো হ-০২-৩৭৫৩)যোগে চলে যাবার চেষ্টা করেন।
সেখানে অবস্থানরত শফিক নামে এক ব্যক্তি বলেন, এ ধরনের পুলিশ কর্মকর্তার কারণেই পুরো পুলিশ বিভাগের বদনাম হয়। কথিত সীমা হত্যার নাটক সাজিয়ে কল্পকাহিনী মিডিয়ায় সরবরাহ করার দায়ে দারোগা শাহ আলমের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই সাথে এ কল্পকাহিনী রচনার সাথে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী বলেও তিনি মনে করেন।
এদিকে কথিত হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত মাসুদ হাসান দম্পতির গতকালও জামিন হয়নি। খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট কেরামত আলীর আদালতে মামলার সার্বিক এবং ভিকটিমের আদালতে হাজির হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মাসুদ হাসান দম্পতির জামিন আবেদন করা হলেও সংশ্লিষ্ট আদালতে এ সংক্রান্ত কোন নথিপত্র না আসার কারণে তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়। যদিও এ মামলায় আগামী ১০ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
অপরদিকে মিথ্যা মামলায় পিতা-মাতা দীর্ঘ দু’মাস ধরে জেল হাজতে থাকার ফলে দম্পতির ৭ মাসের শিশু সন্তান নাহিদ হাসানসহ চারটি সন্তানের মানবেতর দিন কাটছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার দীর্ঘশ্বাস যে কোন বিবেকমান মানুষকে কাঁদালেও ‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি’ উল্লেখ করে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন দারোগা শাহ আলম। আবার মাসুদ হাসানের মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার যে বাসায় মাসুদ হাসান ভাড়ায় ছিলেন ওই বাসা থেকেও তার পরিবারকে সম্প্রতি নামিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ হিসেবে মাসুদ হাসান ইতোমধ্যেই পরিচিত হয়ে উঠলেও সীমার হাজির হওয়ার পর চিত্র পাল্টে গেল। এ অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকা কি হবে সেটিই দেখার বিষয় উল্লেখ করে খালিশপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, মাসুদ হাসান ও তার পরিবার এবং তাদের ৭ মাসের শিশু সন্তান যে চরম মানবাধিকার লংঘনের শিকার হলো এর দায়ভার কে নেবে ? কে ফিরিয়ে দেবে তাদের মান-সম্মান ?
ঢাকাস্থ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের লিগ্যাল এইড প্রধান মিনা গোস্বামী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা শুধুমাত্র সীমাকে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রেখেছেন। এখন হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ’র সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, একজন ব্যবসায়ীকে এভাবে নাজেহাল করার জন্য যেসব ব্যক্তি দায়ী তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যদের বিরুদ্ধ মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, গত বছর এপ্রিল মাসে মাসুদ হাসানের বাসার কাজের মেয়ে সীমা নিখোঁজ হওয়ার পর ওই সময় তিনি খালিশপুর থানায় একটি জিডি করেন। জিডির পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদও দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পরে মাসুদ হাসানের বাসায় রক্ষিত কিছু টাকা স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগ এনে মাসুদ হাসান খালিশপুর থানায় চুরি মামলা করেন। ওই মামলায় সীমার পাশাপাশি তার সৎ মামা এখলাস গাজী ও মা সুফিয়া বেগমকে আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, সীমার মামা ও মা পরিকল্পিতভাবে সীমাকে তার বাসা থেকে নিয়ে অন্যত্র কাজে দেবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ওই চুরি মামলা থেকে বাচার জন্য সীমার মামা এখলাস গাজী গত বছর ২৩ আগষ্ট নড়াইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি পাচার মামলা করেন। যেটি বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দেন। এরপর সীমার মা সুফিয়া বেগম পৃথক তারিখ ও ঘটনাস্থল উল্লেখ করে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যালে আবার একটি পাচার মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই শুরু হয় দারোগা শাহ আলমের বাণিজ্য।
তদন্তের এক পর্যায়ে ৩০ জানুয়ারি ডুমুরিয়ার একটি বিল থেকে অজ্ঞাত এক মহিলার লাশ উদ্ধার ও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের পর ওই লাশের ছবি নিয়ে দারোগা শাহ আলম সেটি সীমার লাশ বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন। এমনকি সীমার মাকে দিয়ে ওইটি যে সীমার লাশের ছবি সেটিও বলানো হয়। এক পর্যায়ে মিল্কী আইসক্রীম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ফাতিমা ইয়াসমিনকে ১৪ অক্টোবর সকালে গ্রেফতার করে খুনী হিসেবে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের ডেকে ছবি তুলে দ্রুত কোর্টে চালান দেয়া হয়। পর পর দু’দিন রিমান্ডের আবেদন জানানো হলেও বিজ্ঞ আদালত দু’দফায় জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এতেও ক্ষান্ত হননি দারোগা শাহ আলম। তাকে রিমান্ডে আনা হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহযোগিতা নিয়ে পুরো কল্পকাহিনী প্রচারের ব্যবস্থা করেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বিষয়টির গভীরে না গিয়ে শুধুমাত্র দারোগা শাহ আলমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর নির্ভর করে সংবাদ সম্মেলন, মানব বন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আর কথিত নিহত সীমার রোববার স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার পর মোড় ঘুরে যায়।



কথিত নিহত সীমা ও এ হত্যার গল্প সাজানো তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×