somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিগারেট সিগারেট

১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাস্থের জন্যে চরম ক্ষতিকর সিগারেটের পাল্লায় প্রথম পড়ি ক্লাস থ্রি তে।

ইঁচড়ে পাকা চাচাতো ভাই বাপ্পা, আমার সামান্য কয়েক মাসের বড়। ওরা থাকতো আমার দাদা বাড়িতে। পুরোনো আমলের দোতলা বাড়ি। কড়ি বর্গার ছাদ। আনেক বড় বাড়ি। যেখানে সেখানে সারাদিন লুকিয়ে থাকলে কেউ খুজে পাবে না। এক ই শহরে আমাদের বাড়ি থেকে বেশ কাছেই।মাঝে মাঝে ঐ বাড়িতে দাদির সাথে দেখা করতে যেতাম বাবা মায়ের সাথে। ঘোরানো প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে খেলা করতাম, ঘুড়ি ওড়াতাম, ছাদে খুব চওড়া রেলিং ছিলো ওর উপরে উঠে বাঁদরামি ও করেছি অনেক।

তা একদিন গেলাম ঐ পাড়ায় মায়ের সাথে। আমার নানা বাড়ি কাছেই, তাই মা আর কাকিমা গেলো সেখানে। দূর্গা পুজো চলছিলো আর ঐ এলাকায় তখন শহরের বিখ্যাত সব পুজা হতো। আমি আর বাপ্পা কয়েকটা পুজা মন্ডপ ঘুরে দুপুরে বাড়ির দিকে ফিরলাম। ফেরার পথে এক দোকান থেকে বাপ্পা কিনলো এই জিনিষ! ১৯৮৯ সাল, ১ টাকা ২৫ পয়সা পিস।




এর পর রান্নাঘর থেকে ৫০ পয়সা দামের ট্যাক্সি ম্যাচ আর দুটো উইলস কিং নিয়ে সোজা ছাদে।
তার পর মাঝে মাঝে বাপ্পার সাথে দেখা হলে দুই ভাই মিলে টানতাম, আমার খুব বেশী ভালো লাগতো না আবার খারাপ ও লাগতো না। আর ঈদ পর্বে এলাকার কিছু সমবয়সি বন্ধু বান্ধব মিলে আড়ালে আবডালে গিয়ে হালকা পাতলা খাওয়া হতো। বেশীর ভাগ খেতো ক্যাপস্টান (৭৫ পয়সা পিস, তখন এটার ফিল্টার ছিলো না) আর গোল্ডলিফ (অতিরিক্ত কড়া, দেড় টাকা পিস)। শুধু আমার জন্যে একটা উইলসকিং কেনা হতো।

এই জিনিষ খেয়ে বাসায় ফেরার সময় চুইংগাম, ক্যান্ডি থেকে শুরু করে জাম অথবা পেয়ারা গাছের পাতা পর্যন্ত চিবাতে চিবাতে আসতাম। তাও একদিন মা ধরে ফেললো গন্ধ পেয়ে। স্বাস্থগত ক্ষতির কথা কিছু বলেনি, কেন সেটা জানিনা, তবে এখন বলে। হয়তো ঐটুকু বয়সে আমি বুঝতে পারবোনা, তাই বললো, ১৮ বছর বয়স না হলে এই জিনিষ খাওয়া যাবে না! আমার মা কিন্তু যথেষ্ট সচেতন ও মোটামুটি শিক্ষিত একজন মহিলা। একটা ডিগ্রি কলেজের ইকোনোমিক্সের এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসাবে রিটায়ার করেছে ২০২০ সালের শেষে। সে কেন আমাকে এই নিয়ে আর কিছু বললোনা সেটা আমার কাছে একটা রহস্য। আমি তার কাছে এখনো জানতে চাইনি। মায়ের সাথে এই ঘটনা নিয়ে এখনো গল্প হয়। মা যখন সিগারেটের ক্ষতিকর দিক নিয়ে এখনো আমাকে বলে তাও আমি ইচ্ছা করেই জানতে চাই না কেন বললো আঠারোর আগে খাওয়া যাবে না। আমিতো তখন ভেবেছিলাম তাহলে ১৮ হলে খাওয়া যাবে! তাহলে অপেক্ষা করি ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত।

আমার নানাকে সিগারেট খেতে দেখিনি, কিন্তু নানির বাপের বাপের বাড়িতে তার ভাই রা খেতো। দাদির বাপের বাড়ির কেউ খেতো না শুনেছি। দাদাও শুনেছি খেতো না। আর বাবা, চাচা, কাকারা সবাই সিগারেট খেতো। বড় দুই চাচা তো দাদির সামনেই খেতো। তবে কোন ছোট ভাই তার বড় ভাই বা বোনের সামনে সিগারেট খেতো না। এমনকি ইমিডিয়েট বড় ভাই বোনের সামনেও না।

যাই হোক, আঠারো বছর পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারিনি। স্কুলের বন্ধু শুভ র পাল্লায় পড়ে ক্লাস সেভেনে থাকতে আবার শুরু করলাম। উইলসকিং তখন মার্কেটে নেই। আমার প্রিয় চাচাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিলেক্ট করলাম এই টা।



১৯৯৩ সাল, ২ টাকা ৫০ পয়সা পিস। ১০ টাকায় চারটে দিতো, আমার দিন চলে যেতো। ১৯৯৬ সালে এর দাম হলো ৩ টাকা পিস।

এভাবে চলতে থাকলো। মা অনেক নিষেধ করলো, বুঝালো, বাদ দেয়ার জন্যে পুরষ্কার পর্যন্ত ঘোষনা করলো কিন্তু বাদ দিতে পারলাম না। ছোট ভাই একদিন অনেক কান্নাকাটি করে অনুরোধ করলো, ওর কথায় আমি বেশ কয়েক দিন সিগারেট না খেয়ে ছিলাম।

কথা রাখতে পারলাম না, আবার চলতে থাকলো। তারপর ২০০৬ সালের শেষের দিকে জনপ্রিয় বাংলা ফাইভ State Express 555 বাংলাদেশের মার্কেট থেকে বিদায় নিলো :(

অনিচ্ছা স্বত্তেও কিনতে বাধ্য হলাম এইটা!




১৯৯৬-১৯৯৭ সাল থেকেই Benson & Hedges বাংলাদেশে তাদের প্রোডাকশন শুরু করে তাই আগের চেয়ে কমে দাম হলো তিন টাকা। আমি যখন খাওয়া শুরু করি তখন ২০০৭ সাল, চার টাকা বা সাড়ে চার টাকা পিস। বাধ্য হয়ে খাই কারণ বাংলা ফাইভ মার্কেটে নেই। মাঝে একবার বিদেশি 555 কিনে খেয়ে দেখলাম, একেবারে অখাদ্য, একজন লন্ডন থেকে এনে দিলো, তাও খাওয়া যায় না। আমার সিগারেট খাওয়া চলতে থাকলো বেনসন দিয়েই। তার পর এলো এই ভ্যারিয়েন্ট!



আমি ভাবলাম লাইট সিগারেট, ক্ষতি কম হবে তাই এটাই খেতে লাগলাম। বাংলা ফাইভ ছাড়া কোন সিগারেট আর সিগারেট মনে হয় না, কিন্তু নিকোটিনের ক্রেভিং আমাকে সিগারেট খাওয়া চালিয়ে যেতে বাধ্য করলো।

তারপর বাবা, মা, ছোটভাই, স্ত্রী সবাই মানা করতে করতে হাল ছেড়ে দিলো। বেনসন লাইট তার বহুজাতিক ভাঁওতাবাজি রেগুলেশনের চাপে বাধ্য হয়ে বেনসন ব্লু গোল্ড নাম ধারণ করলো। আর আমি ভুলে গেলাম বাংলা ফাইভ। বোকার মতো তাও সিগারেট খেয়ে যাচ্ছি, বেনসন ব্লু গোল্ড।

আজকাল নাকি দিন বদলেছে। অনেকে বলে সিগারেট এখন আনস্মার্ট, অশিক্ষিত নিম্নশ্রেণীর লোকে খায়। আমি মনে করি নিজের ভালো বুঝতে না পারা বোকা লোকে খায়। তবুও আমি খাই। অনেক স্বাস্হগত ঝুঁকি আছে আমি জানি। হয়ত এর জন্যে বড় কোন অসুখ হতে পারে তাও জানি। আর্থিক অপচয় ও কম না। এখন একটা সিগারেট ১৫ টাকা পিস। এখন আমি অসুস্থ হলে ছোট বাচ্চা মেয়ে দুটোকে চরম অনিশ্চয়তার মাঝে পড়তে হবে। তবুও এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৯
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×