somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূর দ্বীপবাসিনী

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অণুর ফোনটা বেজেই চলছে। আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। একটা মানুষ কিভাবে ফোন না ধরে থাকে। অসহ্য যন্ত্রণা! আরে বাবা, দেরীতো মানুষের হতেই পারে। তাই বলে ফোন কেন ধরবে না?

আমি অণুর কাছে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে পৌছালাম! আমাকে দেখে মেয়েটা মুখ বাঁকিয়ে নিল। আমি পিছন থেকে ওকে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলাম। ও প্রায় ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিয়ে বলল, এতক্ষণ কই ছিলা? কমনসেন্স কি মাথায় কম?
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, সেটা তো আগে থেকেই। তবে এখন তো একেবারেই নেই।
বলার সাথে সাথে অণু আমাকে প্রায় ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল। আমি সড়তে সড়তেই ওর টসটসে গালটা টেনে দিলাম। খুব গম্ভীর হতে গিয়েও সে এবারে হতে পারল না। “আর কখনই দেরী করবা না”- শীতল গলায় বলল ও। আমি খুবই অল্প হেসে বললাম, কখনই না।


প্রায় আধা ঘন্টা পর অণুর সাথে রিকশায় উঠলাম। রাজশাহী শহরটা এত্ত ছিমছাম যেন ছোট্ট একটা সাজানো বাগানের মতন। আমি অণুকে বললাম, “এই আজকে সারাদিন রিকশায় ঘুড়লে কেমন হয়?”
উত্তর আসল, “তোমার মাথা হয়!” আমি গম্ভীর গলায় বললাম, প্রায় দু মাস পর পর তোমার সাথে দেখা হয় আর একদিন সারা দিন ঘুরতে পারবা না! হুহ! ঢং কি মেয়ের!

পাশে উড়তে থাকা খোলা চুলের দিকে তাকায়ে দেখি মেয়েটা চিপস বের করে খাচ্ছে। আমি তাকাতেই সে চিপসের প্যাকেট বাড়ায়ে দিল। আমি বললাম, খাইয়ে দাও! সে যেমন ভাবে আমার দিকে তাকাল তাতে মনে হল আমি ভয়ানক কোন অপরাধ করে ফেলেছি! আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে সে বেশ কিছুক্ষণ তাকায়ে থাকল। আমি তাকে বললাম, এমনে তাকানোর কিছু নাই! বিয়ের পর তুমিই আমাকে খাওয়াইয়া দিবা প্রতিদিন! নো হাংকি পাংকি! এখন এক মাস পর যখন একদিনের জন্য বাসায় যাই, তখন আম্মু খাওয়াইয়া দেয়! আর বিয়ের পর তুমি। এমনে তাকানোর তো কিছু দেখি না।
অণু প্রায় চিল্লায়ে উঠে বলল, “রাস্তার মধ্যে কিসব বলছে! নির্লজ্জ কোথাকার। তোমার সাথে আর কথা নাই।” বলতে বলতে হাতে রাখা অর্ধ বোতল পূর্ণ পানি আমার গায়ে ঢেলে দিল। ভয়ানক অবস্থা! সান্তনা একটাই, আকাশের অবস্থা খারাপ। একটু পর ঝুম বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি ছাড়া ভেজা শার্ট নিয়ে রাস্তায় ঘুড়া কত্ত ঝামেলার!

সত্যি সত্যি একটু পরে ঝুম বৃষ্টি নামল। এবারে আমি আর অণু রীতিমত পাগলামী শুরু করলাম। সত্যি সত্যি রিকশা থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করলাম! প্রায় এক ঘন্টা বৃষ্টিতে ভেজা। ছেলেমানুষী পাগলামী যাকে বলে আর কি! প্রেমে পড়লে মানুষ যে কত রকমের পাগলামীই না করে!!

দেখতে দেখতে দিনটা প্রায় শেষ হয়ে এল। এত্ত শীঘ্রই একটা দিন শেষ! এত তাড়াতাড়ি। ফেরার সময় ঢাকার বাসে উঠতে গিয়েই দেখি অণুর চোখ ছলছলে। প্রায় ক্ষীণস্বরে বলল, “সাবধানে যেও! ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া কর কিন্তু। ঠিকমত ঘুমাবা, রাত জাগবা না।”
আমিও মন খারাপ স্বরে বললাম, হুম, সময় দ্রুত কাটে ঠিক আছে কিন্তু এত্ত দ্রুত এটা আসলে কল্পনারও বাইরে। যাই হোক, আসি। মন খারাপ কর না। এখন তো এমন কর, কাছে থাকলে এমন জ্বালানো জ্বালাতাম চিন্তাও করতে পারতা না! বলেই আস্তে করে বাসে উঠে গেলাম।


বাস ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে। রাস্তার পাশের থেমে থাকা গাছ, টং দোকান পিছনে পড়ে যাচ্ছে। জানালার পাশে দিয়ে দেখলাম মলিন মুখে অণুর দাঁড়িয়ে থাকা। মন প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেল। ইশ! কেন যে আমি রাজশাহীতে থাকতাম না, অথবা কেন যে মেয়েটা ঢাকায় থাকল না!!




বাস প্রচন্ড জোড়ে চলতে শুরু করল। রাস্তার পাশে তাকায়ে থাকতে হুট হুট করে কতগুলো স্মৃতি মাথায় জমা হতে লাগল...

বহুদিন আগের কথা। কোন এক মন খারাপ করা বিকেলে অণুর সাথে প্রথম পরিচয়। পরিচয়?? পরিচয় কি বলা যায়? আচ্ছা ঘটনাটা অনেকটা এমন...


ক্লাস থেকে বের হয়ে অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল। বাসায় যেতে কেন যেন খুব বেশি খারাপ লাগছে। ক্লাসও এত আগে শেষ। কেমনে কি! অনেকটা রাগ করতে করতেই বাসায় আসলাম। লেখাপড়ার অবস্থাও ভয়ানক রকমের খারাপ। কিছুই হচ্ছে না পড়ালেখা। বই একদিকে আমি আরেক দিকে! মনে হচ্ছে আমাকে দিয়ে আর লেখাপড়া সম্ভব না। লেখাপড়া ডিরেক্ট জাহান্নামে চলে গেছে! বাসায় ঢুকে আম্মুর বিরক্তির ধ্বনি, “সারাদিন পড়িস না তো করিসটা কি?” উফফ, পড়াশোনার মত বোরিং জিনিস ছাড়াও যে কত্ত কাজ থাকতে পারে সেটা যদি আম্মু জানত!


আর মন খারাপের কারণগুলো যথেষ্টই ভয়ানক!! একে তো সেমিস্টারে ড্রপ তার উপরে লাইফের সবচেয়ে ভয়ানক বিপর্যয়! সহজ ভাষায় একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে! বাই দা ওয়ে, ওটা শুধু পছন্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ছিল একটি ওয়ান সাইডেড লাভ। ভালবাসার ফল যে মাঝে মাঝে কতটা ভয়ানক হতে পারে তা না হয় আজ থাক! সে গল্প অন্য কোন একদিন।


তো এক প্রচন্ড মন খারাপ করা বিকেলে ফেবু অন করলাম। সাধারণত খুব কম ফেবু চেক করা হয়। তো একদিন হঠাত করে একটা অপরিচিত ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেখলাম। যেহেতু ফেবুতে কম আসা হয় সেহেতু এক্সেপ্ট করার তেমন কোন কারণ নেই। কি মনে করে যেন এক্সেপ্টও করে ফেললাম। যাই হোক, এড করার পর তার সাথে কথাও হল না তেমন!


তো বেশ ক মাস পর একদিন দেখলাম সে প্রোফাইলের নামটা চেঞ্জ করে ফেলেছে। প্রথমে নাম দেখে চিনতে পারি নি এবং ফেইক মনে হল! তাই ডিলিট করে দিতে গিয়েও হঠাত মনে হল জিজ্ঞাসা করে দেখি আসলে কে! যাই হোক, সেই প্রথম শুরু। ডিলিট করতে তো পারি নি বরঞ্চ একটা সময় সে জীবনের একটা পার্টই হয়ে গেল।

প্রথমে অল্প অল্প করে ফেবুতেই কথা হত। কিছুদিন পর তার বিষণ্ণতার কথাগুলো জানলাম। সত্যি কথা হল, তার প্রেমে পড়ার আগে তার বিষণ্ণতার প্রেমে পড়ে গেলাম! অবাককর বিষয় হলেও সত্য, প্রথমে মনে হত তার বিষণ্ণতাগুলো যেন আমার। ভাল কথা, প্রেমে পড়া কি জিনিস আমি তখনও বুঝি নি। এখনো যে বুঝি তাও না। শুধু একটা সময় দেখলাম তার মন খারাপ থাকলে আমার নিজের মনও খারাপ হয়ে যায়। আমাদের দুজনের মন খারাপগুলো যেন একটা বিনিসুতার মালাতেই গাঁথা।

তারপর বহুদিন পর ঠিক বহুদিন পর আমাদের দেখা হল। রাজশাহীতে ঘুরতে গেলাম। ঢাকা টু রাজশাহী লং জার্নি! সে ঘটনাও আরও ইন্টারেস্টিং! যখন বাস থেকে নামলাম তখন আমাকে দেখে প্রথম সে যেই কথা বলল তা হল, “তুমি একটি চলমান সরলরেখা!”


প্রথমদিকে ওকে সব কিছু বলেছিলাম। সব কিছু শুনেও যে কেউ আমাকে এতটা ভালবাসতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না। পৃথিবীর সব মানুষ ভালবাসা পিয়াসী। কিন্তু এতটা ভালবাসা কেউ আমার মত গাধাকে কোনদিন বাসতে পারে কিংবা কেউ বাসবে এটা আমার কল্পনার বাইরে। এটাও কি সম্ভব? জীবন এতটাই বিচিত্র! এতটাই!!


প্রথম যখন কেউ শুনছিল সবাই বলছিল লং ডিসটেন্স রিলেশন টাইম পাস ছাড়া কিছুই না! কিছুই হবে না। রিলেশনের কোন ফিউচার নেই। হাবিজাবি কত্ত কি! মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করেছিলাম। আমি জানি মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন কাজ। আর একবার খুঁজে পেলে সাতরঙা রঙধনুর মত সাতরঙা ভালবাসাও খুঁজে পাওয়া যায়। দূরত্ব কোন ব্যাপারই না। হয়ত দুটি দেহ দুই জায়গায় কিন্তু দুটি মন একসাথে সব সময়, সর্বক্ষণ।


ভাল কথা, আমার নামের অর্থ সৌভাগ্যবান। কোন এক অজ্ঞাত কারণে অণুর ভাল নামের অর্থও সৌভাগ্যবতী! এ মিল কাকতালীয় নাকি কোকিলতালীয় তা বলা মুশকিল। তবে আমি সৌভাগ্যবান একথা আমি নিশ্চিত জানি। আমার মায়ের মত মা আর অণুর মত একটা মেয়েকে প্রেমিকা পাওয়া নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের ব্যাপার! তবে যে বেচারী অণু যে দূর্ভাগ্যবতী তা আমি কেমনে জানতাম! যেই মেয়ে সব কিছু জেনে আমার মত গাধার সাথেই ঝুলে যায় তার ভাগ্য নিয়ে বলার আর কিছু নাই!!




গাড়ি প্রচন্ড গতিতে ছুটে চলছে। ঠিক জীবন যতটা গতিতে ছুটে চলে। আমার কানের হেডফোনে তাহসানের একই গান বারবার বেজেই যাচ্ছে,

“ওই দূরের আকাশ আজ রঙিন হল বদলে যাওয়ার নিয়মে,
তাই বদলে গেছে সব ইচ্ছেগুলো সঙ্গী করে তোমাকে...
দেখো উড়ছে দূরে কত রঙিন ঘুড়ি উড়তে থাকা মিছিলে,
আর দেখছি তোমায় দু'চোখ জুড়ে বন্দী তোমার মায়াতে...
কত দূর, কত পথ একা একা ছুটে যাওয়া,
দিন শেষে পথের বাঁকে অবাক হয়ে খুঁজে পাওয়া...তোমাকে।”
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×