somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি মেয়েমানুষ, এগুলো তোমার প্রাপ্য!

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা মেয়েকে সমাজ একজন মানুষ হিসেবে দেখে না! তার প্রথম এবং সবচেয়ে বড় পরিচয় হল সে একজন মেয়ে মানুষ! সে হতে পারে খুব ভাল ছাত্রী, হতে পারে খুব ভাল চাকুরীজীবি কিংবা খুব ভাল একজন মানুষ! কিন্তু সমাজের কাছে তার প্রথম পরিচয় হল সে “মেয়ে মানুষ”। মেয়েদের সমাজের চোখে এই “মেয়ে মানুষ” হয়ে থাকাটাতে আমার তেমন কোন আপত্তি নেই! তারা সমাজের চোখে শুধুমাত্র একটা “পন্য”, সেখানেও আপত্তি নেই! প্রখ্যাত নারীবাদীদের “প্রফেশনাল ব্যবসা” সুলভ কথাবার্তাও আমাকে তেমন কোন ভাবে টানে না! বরং অধিকাংশ নারীবাদীদের কথা এবং তাদের কাজের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক আমাকে এটাই ভাবায় বেশিরভাগ নারীবাদীদের কারণের মেয়েদের এই দুরাবস্থা! সেদিন একটা চ্যানেলে দেখছিলাম অতীব দামী একটা গাড়ির পাশে একজন নারী! অথচ সেটার কোন প্রয়োজনই নেই! ফেয়ার এন্ড লাভলী আর লাক্স সুপারস্টার বিজ্ঞাপনের কথা না হয় বাদই দিলাম! ওগুলোর মূল মন্ত্র হল মেয়ে তুমি সুন্দরী হও, মেয়ে তোমার মূল্য তোমার দেহ দিয়ে। বিজ্ঞাপণে অহেতুক নারীদের এনে অনেক সময়ই এটা বোঝা মুশকিল কোনটা পন্য! যেটার বিজ্ঞাপণ দিচ্ছে নাকি যে বিজ্ঞাপণ দিচ্ছে!! এসব ঘটনায় অনেকের আপত্তি থাকলেও বিশ্বাস করুন আমার কোন আপত্তি নেই। আপত্তিগুলো কোন জায়গায় তা কয়েকটি ঘটনায় দেখি!



ঘটনা ১: আমি এখন যেই মেয়েটার কথা বলছি সে আপনাদের পাশের বাসায়ই থাকে। তার বয়স খুব কম। ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ে। পড়ালেখা নিয়ে সব সময়ই ব্যস্ত! সমাজে একটা মেয়েকে যে নিজের দেহ বাঁচিয়ে চলতে হয় সে তা জানে না! এই না জানাটাই তার অপরাধ। একদিন সে রাস্তার পাশে তার আপুর সাথে ব্যাগ কিনছিল। হঠাত করেই উঁচুতে রাখা ব্যাগগুলো দেখতে সে হাত উপরে তুলল। হাসতে হাসতে প্রবল উচ্ছলতার সাথে সে ব্যাগ পছন্দ করছিল। হঠাত করেই একজন খুব শিক্ষিত কেউ একজন খুব দ্রুত তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার বুকে চাপ দিয়ে চলে গেল! মেয়েটা ঘুরে তাকাতেই দেখল লোকটা একটু দূরে চলে গিয়ে মুচকি হাসল! মেয়েটা ব্যাগ কিনা বাদ দিয়ে ব্যাথা এবং লজ্জায় ঝড়ঝড় করে পাগলের মত কাঁদতে লাগল! সে লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছে না! কাউকে কিছু বলা যাবে না যে! বাসায় ফিরে এসেও সে ওয়াশরুমের পানির কল ছেড়ে দিয়ে ঝড়ঝড় করে কাঁদতে লাগল! যে উচ্ছলতা নিয়ে সে বের হয়েছিল সে উচ্ছলতা আর নেই!! ঘটনা পড়তে কি খুব খারাপ লাগছে? বেশি খারাপ?? না, এরকম ঘটনা অহরহই হচ্ছে। আপনার পাশের বাসার মেয়েটির সাথে না হলেও আপনার দুই বাড়ির সামনের মেয়েটার সাথে।



ঘটনা ২: এই মেয়েটি আপনাদের গ্রামেই থাকত! সে ইন্টারমিডিয়েটে অনেক ভাল রেসাল্ট করেছে। এখন ভর্তি হয়েছে দেশের নামকরা একটা সরকারী ইউনিতে। ফ্রেন্ডদের সাথে ধুমিয়ে আড্ডা, গল্প সব কিছু একবারে করে মহা আনন্দে দিন কাটাচ্ছিল। তো একদিন সেমিস্টার ফাইনাল শেষ করে ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিয়ে যখন মেয়েদের হলে ঢুকছিল তখন কয়েকটা টং দোকানের পাশে একজন কলা বিক্রেতা দাঁড়ায়ে ছিল। সে মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলল, “আপুরা, কলা নিয়ে যান, কিছু খান আর কিছু ঢুকান!” শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে? না ভয় পাবেন না, আপনার বোন অথবা তার বান্ধুবীর সাথে এমনটাই হয়েছে!



ঘটনা ৩: এটি বাসে যাত্রাপথের ঘটনা। আপনার পাশের বাসার মেয়েটি কোথাও জরুরী কাজে পাব্লিক বাসে করে যাচ্ছিল। পাব্লিক বাস, প্রচুর মানুষ! মেয়েটি খুব উগ্র কোন ড্রেস পড়ে ছিল না! স্বয়ং বোরখা পড়ে ছিল। তো প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে কোন এক সুযোগ-সন্ধানী তার বোরখার উপর বিশেষ জায়গায় আঙ্গুল বুলিয়ে যাচ্ছিল! প্রচন্ড ভিড়, মেয়েটা নড়তে পারছে না কিছু বলতেও পারছে না!! নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে!! মেয়েমানুষ বলে কথা!!



ঘটনা ৪: মেয়েটা হয়ত আমার ভার্সিটির জুনিয়র কেউ হবে। অথবা অন্য কোন ভার্সিটির! পড়ালেখা করে এটুকু বোঝা যায় এবং মিনিমাম ইউনিভার্সিটিতে তো পড়েই! তো সে তার এক বান্ধুবীর সাথে রিকশা করে যাচ্ছিল। বেশ কিছুটা নিরব রাস্তা। তো কয়েকটা কম বয়সের ছেলে রাস্তার পাশে গাছের পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিল! তাদের মধ্যে একটা ছেলে, হ্যাঁ বয়সে ঐ আপুদের চেয়ে চার-পাঁচ বছরের ছোট হবে, রিকশার দিকে তাকিয়ে ভয়ানক কুৎসিত এক মন্তব্য করে বসল! আপুরা হাসতে হাসতে যাচ্ছিল, কিন্তু এই কথা শুনে কারও মুখ থেকে কোন কথা বের হল না! একে অন্যের দিক হাঁ করে চেয়েছিল!


ঘটনা ৫: এ মেয়েটা ফেসবুকে নতুন এসেছে। সে প্রায় সবার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করত! তো একদিন সে দেখল ফেসবুকে তার নাম আর ছবি দিয়ে একটা আইডি! যাবতীয় অশ্লীল ছবি ওই আইডি থেকে শেয়ার দিতে লাগল! লজ্জায় মেয়েটা প্রায় মরে গেল! সে ফেসবুকের আইডি ডিএক্টিভ করে দিল এবং মানুষের উপর সব বিশ্বাস হারায়ে ফেলল! হাজার হলেও সে একজন মেয়েমানুষ!!



ঘটনা ৬: এই মেয়েটা হয়ত আমার বান্ধুবীই হবে! ভর্তি পরীক্ষা দিতে খুলনা থেকে সে তার বাবার সাথে নাইট কোচে ঢাকা যাচ্ছিল। তার বাবা ঘুমাচ্ছেন আর মেয়েটা প্রায় তন্দ্রাচ্ছন্ন কিন্তু পুরো ঘুমায় নি। সে তার একটা হাত জানালায় দিয়ে বসে আছে! হঠাত সে ডানদিকে তাকাতেই দেখল পিছন থেকে একটা হাত তার একটি বিশেষ অঙ্গ স্পর্শ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল! সে ভয় পেয়ে চিৎকার করা উঠল! তার বাবার ঘুম ভেঙে গেল! তিনি উঠে লোকটির কলার ধরে টেনে তুলে কঠিন মার দিলেন! মেয়েটি তার বাবার সাথে ছিল ঘটনার প্রতিবাদ হয়েছে কিন্তু কোন কারণে একা থাকলে কি হত তা ভেবে মেয়েটি এখনো শিউরে উঠে!!



ঘটনা ৭: এই মেয়েটিকে আপনারা হয়ত চিনবেন যে ভুলে একটা ছেলেকে ভালবেসে ফেলেছিল! এই ভালবাসাটাই তার দোষ! ছেলেটা তার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার সাথে প্রতারনা করে রীতিমত তাকে ব্ল্যাকমেইল করল! মেয়েটা ছেলেটার হাতে সারাজীবনের জন্য হাত রাখার জন্য সবটুকু দিয়ে ছেলেটাকে খুশি করল! কিন্তু হাজার হলেও সে মেয়েমানুষ! তার এই পরম আরাধ্য বয়ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে কিছুদিন পর চলে গেল! এক মেয়ের সাথে আর কয়দিন!!!


ঘটনা ৮: এই মেয়েটাকে আপনি চিনতে পারেন! আপনার গ্রামেরই খুব সাধারণ একটা মেয়ে। মেয়েটার তেমন কোন দোষ ছিল না! তবে একটা দোষ অবশ্যই ছিল সেটা হল সে মেয়ে! সে খুব হট ড্রেসও পড়ে নি। খুব সাধারণ ড্রেস পড়ে একদিন সে বের হয়েছিল কিন্তু ছেলেরা তাকে রেহাই দেয় নি! সে গণধর্ষণের স্বীকার হয়েছে! ভাল কথা! এক সময় তাকে তার প্রমাণ দেওয়ার জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে সার্টিফিকেট টেস্ট করাতে হয়েছে! সেটার মানে তো আরেকবার ধর্ষণ!! ইয়ং ডাক্তার! খুব আগ্রহ করে টেস্ট করল!!




এগুলো খুব কমন ঘটনা! তবে যেহেতু ইহা বাংলাদেশ কাজেই বলিতেই হয় সকলই “বিচ্ছিন্ন ঘটনা”। সব ঠিকই আছে!! কোথাও কোন সমস্যা নেই!
বলছি না যে সকল ছেলে খারাপ! সবাই খারাপ হলে পৃথিবী এখনো টিকে থাকত না এটা আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু সব যে ধীরে ধীরে নষ্টদের অধিকারে চলে যাচ্ছে!!

রাস্তাঘাটে সুন্দরী মেয়েদের দেখলে অন্য সব ছেলেদের দেখলে আমিও তাকাই! হয়তবা খুব আঁটসাঁট পোশাক পরা মেয়েদের দিকে অন্যভবেও তাকাই! আড়ালে আবডালে অন্য সবার সাথে মেয়ে বিষয়ক ডার্টি জোকস গুলা শুনি! কিন্তু তাই বলে সবার সামনে তাদের নিয়ে কমেন্ট করা কি ঠিক? তাও কমেন্ট করা পর্যন্ত থাকলেও হয়ত মেনে নেওয়া যায় কিন্তু...... থাক আর না বলি কিছু। হাজার হলেও তারা মেয়েমানুষ!! মেয়েদের তো এগুলো প্রাপ্যই!! অসুবিধার কিছু দেখছি না!!!!
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×