somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন - দুঃস্বপ্ন

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১।

২৭/০৩/১৫
রাত ১ টা


নিয়মিত ভাবে দুঃস্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। অনেকটা অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোর মতই নিয়ম করে এটা হয়ে চলেছে যা ক্লান্তিকর আর একঘেয়েমীতে ভরা। যা নিয়ে ভাবছি সেসব নিয়েও যেমন দেখছি, যা ভাবতে দুঃস্বপ্নেও শিউরে উঠি,সেটা নিয়েও দেখছি,যেসব ভুলে গিয়েছিলাম সেসবও দেখছি। ইদানীং এই দুঃস্বপ্ন বা স্বপ্ন দেখা ব্যাপারটা পীড়াদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু কিছু স্বপ্ন আছে যা দেখার পরপরই ঘুম ভেঙে যায়,প্রচন্ড আতংকে হাত কা কাঁপছে এমন মনে হয়। আমি আমার সব স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন, ভালো-মন্দ সবকিছুই একজনের সাথে শেয়ার করি। আপাতদৃষ্টিতে আমার স্বপ্নগুলো ওর কাছে নিরীহ লাগে বলেই ও খুব হাসে আর বলে এসব নাকি আমার বেশি বেশি দুশ্চিন্তার ফসল।

আমি প্রায়ই 'ম'-কে স্বপ্নে দেখি। আমরা একসাথে সংসার করছি,ট্রাভেল করছি। একপর্যায় দেখি 'ম' কাঁদতে শুরু করেছে। সেই কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার অশুভ কিছুর চিন্তায় ভীষণ ভয় লাগতে থাকে তখন। একটা জীবন আমি পিছনে ফেলে এসেছি আর এই জীবনে আমি একা। যে জীবনটা আমি ফেলে এসেছি তখন 'ম' সাথে থাকা সত্ত্বেও আমি একা ছিলাম। অথচ যাকে আমি সবকিছু শেয়ার করি ও এসব শুনে হাসে। আসলে ও জানে না একাকী জীবনের হাহাকার, নিঃসঙ্গ রাতের বুকচেরা দীর্ঘশ্বাস! কোনো সংসারী মানুষ জানবে না কখনো একাকী ব্যক্তির দিন-রাত্রির ইতিহাস।

২।
৩১/০৩/১৫
সময়টা - যখন রাত্রি নিঝুম

আবারো একই ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি। সেই স্বপ্ন! স্বপ্ন নাকি সাদাকালো হয় কিন্তু আমি তো প্রায়শই রঙিন স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নে দেখলাম আজ আমি পাহাড়ি এক জায়গায়, দেশের বাইরে কোথাও। জায়গাটা খুব পরিচিত লাগলেও মনে করতে পারছিলাম না কোথায় এটা। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে নামলে ঠিক যে জায়গাটায় সমতলের দেখা মেলে,সেখানে কিছু লোক চিৎকার করে ঝগড়া করছিলো। হঠাৎ করেই কোত্থেকে যেন 'ম' আসলো, বললো -
চলো এখান থেকে চলে যাই। জায়গাটা ভালো না।

'ম' আমাকে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসলো। দেখি একদল অপরিচিত মানুষ দিয়ে বাসা ভর্তি। কেমন কিলবিল করা পোকার মতো ঘরজুড়ে হল্লা করছে আর অস্বস্তিদায়ক চাহনীতে আমার দিকে তাকাচ্ছে একটু পর পর। তখন আমার কেন যেন আমার মনে হচ্ছিলো জরুরী একটা ফোন করা দরকার,কাকে ফোন করবো কিছুতেই আমার মনে পড়ছিল না। আমি কিছু বলার আগেই অপরিচিত একজন এসে আমার হাতে কর্ডলেস ধরিয়ে দিলো।

কেন যেন স্বপ্নে আমি 'ম'-কে বিষণ্ণ দেখি।অবশ্য 'ম' কে আমি হাসিখুশি বা বিষণ্ণ কোনোভাবেই আমার স্বপ্নে দেখতে আগ্রহী ছিলাম না কারণ অবিশ্বাস আর একতাল যন্ত্রণায় আমার জীবনটা ভরিয়ে তুলেছিলো 'ম'।

আমি আমার দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি চাই। আমি খুব করে এই মুহূর্তে ঘুমোতে চাই। গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তে চাই যেমন করে তুমি বৃষ্টির শব্দ শুনতে চাও আমার জানালার পাশে বসা মুহূর্তে; গভীর রাতে দুঃস্বপ্নে জেগে ওঠা আমার সাথে। আমার বুকের মাঝখানটায় খুব ব্যথা ব্যথা হয়ে থাকে সবসময়। আমি তোমার সাথে হাসি, ঘুরে বেড়াই যেমন করে প্রাত্যাহিক কাজ গুলো সারি আমার কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলি কিন্তু টিপ টিপ করে ব্যথাটা রয়েই যায়। আমার একটা থাকবার ঘর নেই বলে, তুমি আমাকে থাকবার জন্য একটা ঘর দিতে পারোনি বলে। একদিন হয়তো আমার এই অসুখ তুমি অনন্ত সুখে মিলিয়ে দিবে।

এসব আমার কাব্য না। সত্যিকার অর্থে ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে শব্দহীন বোধের তলানিতে পড়ে থাকা গোঙানির শব্দ। তোমাকে এই কথাগুলো পড়ে শোনালে হয়তো বরাবরের মতো হাসতে হাসতে নির্ভার হয়ে বলতে - তোমার অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফসল!

৩।

০৩/০৪/২০১৫


আরও একটা বাজে স্বপ্ন দেখলাম। পাশের বাসার আব্দুল্লাহকে আমি ওর গালে অনেকগুলো থাপ্পড় মেরেছি। কিন্তু ও কাঁদছিল না বলে ওকে আরও ব্যথা দেয়ার জন্য হাতুড়ি দিয়ে ওর কপাল আর মাথায় পেরেক ঠুকে দিচ্ছিলাম। কী ভয়াবহ ব্যাপার! এসব আমি আব্দুল্লাহকে নিয়ে কখনো ভাবিনি যদিও সে যথেষ্ট বিরক্ত করে আশেপাশের মানুষদের।

কার উপর যে অভিমান হচ্ছে জানি না। দেশ ছেড়ে বহু দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। আমার থাকা বা না থাকায় কোনো শূন্যতা হয়তো হবে না।

বাইরে ক'দিন ধরেই উথালপাথাল বাতাস। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ রাতের নির্জনতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি রোজ রোজ ডায়েরি লিখি না বলে তোমার জানা হয় না রোজ রাতে এভাবে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার কী নিদারুন কষ্ট। এসময় কারো থাকার দরকার ছিল খুব!

৪।

০৮/০৫/২০১৫

হঠাৎ করেই দুই মিনিট আগে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো। আমি চাইনি তবুও হয়ে গেলো। 'বিদায়' শব্দটা আমাকে খুব ভয় ধরায়, চোখে জ্বালা ধরায়। কিছুক্ষণ আগে এই শব্দটা হুড়মুড়িয়ে সামনে চলে আসলো বিকট তাচ্ছিল্য নিয়ে। মনের ভেতরে যে মনটা সেখানে এই তাচ্ছিল্যের হাসিমাখা Bye শব্দটা ছ্যাঁত করে গিয়ে লেগেছিলো। আর মুহূর্তেই যাবতীয় অপ্রাপ্তিরা আমার মাঝে তোলপাড় হয়ে জেগে রইলো। আমি ভেঙে পড়ার আগেই মোবাইলের সুইচটা অফ করে দেই। সন্দেহ হয় আমার অতীত বা বর্তমানের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা এই ভেবে।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীর সকল তৃষ্ণার আঁধার এক জায়গাতেই আছে। কিন্তু তার পুরোটা বা কিছুটা একজন দিতে নারাজ। আর না পেয়ে পেয়ে আমার যত শূন্যে আস্ফালন। আমরা দুজনে ভীষণ বিপরীত মাঝে মাঝে। দিন শেষে বা গভীর রাতে বা দুঃস্বপ্ন শেষে এই বোধটাই বেশি করে বাজে।

আমার প্রতিটা দিন কি রকম অর্থহীনভাবে শুরু বা শেষ হয় কেউ জানে না। জেগে থাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বা প্রতিশ্রুতিহীন কথার জন্য অপেক্ষা; ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বা তন্দ্রায়।

আমার ঘর জুড়ে নিত্যই রাত্রি।

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×