somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশবের কিছু কথা ...

১২ ই মে, ২০০৯ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার অস্থিত্বে আমার মা । আমার জীবনটাই আমার মায়ের হাতে গড়া। সব শিক্ষার শিক্ষক আমার মা। প্রকৃতির সাথে প্রথম পরিচয় মায়ের হাত ধরে, তাঁর গাছপালা প্রীতি দেখার মত।

ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম খুব জেদি আর অভিমানী। ছিল আমার মাঝে এক ধরনের নিয়ম ভাঙ্গার গোপন ইচ্ছা। মা হচ্ছেন পথিবীতে এমন একজন, যার কাছে সব চলে। মা সব সহ্য করতেন, এক ধরণের প্রশ্রয় আমি কেন জানি সবসময় পেয়ে এসেছি। আমার কাছে আমার মা ছিলেন অন্যায় আবদার, জেদ দেখানোর স্থান। আমি খুব বাচ্চা সুলভ আচরণ করতাম। আমি কিন্তু খুব লক্ষী মেয়ে ছিলাম না, মায়ের আদর আর প্রশ্রয়ের কারণেই এমন হয়েছিলাম আমি। আমি এজন্য কোন অপরাধ বোধে ভুগতাম না, মনে হত মা মানেই এমন, যার সাথে সব করা যায়।

মায়ের বিয়ে হয় তার ১৪ বছর বয়সে, এবং অচেনা মানুষটির হাত ধরে বিদেশে পাড়ি জমান। পড়ে যান অকুল সমুদ্রে, পুরোদমে ঘর সংসার, ব্যাস্ত স্বামীকে সব কিছু হাতের কাছে এনে দেওয়া, ভাবলে আমার নিজেরই রাগ হয়। কারণ মা কিছু কারণে কয়েকবার বাবা ছাড়া দেশের বাইরে যান তখন বুঝেছি, উনাকে সামলানো কত কষ্ট ! একবার আমি অনেক রাতে ঘরে ফিরি এক দাওয়াত থেকে, এসে দেখি বাবা বসে আছেন। আমি একটু অবাক কারণ তিনি কখনো রাত জাগেন না। তিনি জেগে বসে ছিলেন কারণ আমি প্লেটে করে উনার ঔষধ দিয়ে যাইনি, এবং উনি জানেন না কোথায় উনার ঔষধ ! মা ফিরে আসলে আমি খুব রাগ করে বলি, "কি করেছো মা তুমি ? বাবাকে তো শেষ করে দিয়েছ, কিছু পারে না।" মায়ের উত্তর ছিল এমন, " এমন না হলে তোর বাবার সংসারে আমি থাকতে পারতাম না।" আমি চুপ করে যাই, কি বলার আছে এর উত্তরে ! আমাদের সমাজটাই যে এমন। মা হেসে আবার বলেন, সব মিলিয়েই সবাই মানুষ।
মা আমাদের পিঠাপিঠি ৪ ভাই বোনের জন্য এক প্লেটে ভাত মাখাতেন এবং খাইয়ে দিতেন। আমি ৯ বছর বয়স পযন্ত ফিডারে দুধ খেয়েছি। আমার এই অভ্যাস দূর করার চেষ্টা চলছিল এবং ফিডারে করে দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেন। এদিকে আমার মাথায় বুদ্ধির তো অভাব ছিল না, আমি বুদ্ধি খাটিয়ে ছোট ভাই বোনদের যে কারো ফিডার, তাদের কাছ থেকে নিয়ে খেয়ে ফেলতাম লুকিয়ে। একটু পরই কান্না জুড়ে দিত সেই জন। এভাবে কিছুদিন যাবার পর মায়ের সন্দেহ হয়, এবং আমি ধরা পড়ে যাই। :( এখানেই আমার ফিডার জীবনের ইতি। তবে দুধ পাউডার খাবার অভ্যাস এখনো আছে অল্প স্বল্প। :)

একটা ঘটনা আমার খুব মনে আছে এবং সারা জীবন থাকবে সেটা হল, একদিন আমি কিচেনে গিয়ে দেখতে পেলাম, মা মাটিতে পড়ে আছেন অজ্ঞান হয়ে। কেউ ছিল না আশেপাশে, চারিদিকে তখন মরুভূমি, দুবাই শহরটা তখনো এত মানুষে ভর্তি ছিল না। আমি দৌঁড় দিয়ে বাবাকে কিভাবে যেন ডেকে আনি। এরপর কি হয়েছিল আমার মনে নেই তবে কয়েকদিন আমরা তিন ভাইবোন একলা ছিলাম বাবার সাথে। তখন বাবা আমাদের খাইয়ে দিতেন, চুল বেঁধে দিতেন। বাবার মেজাজ থাকলেও খুব সহ্য করতে পারতেন আমাদের দুস্টামী, এখনো !

এরপর মা ফিরেন ফুটফুটে বোনের জন্ম দিয়ে, যে পৃথিবীতে ২ মাস আগে চলে আসে। কিন্তু বেবীটা থেকে যায় হাসপাতালে। মা নিয়ম করে যেতেন তার বেবীকে দেখতে। মা গিয়েই বলতেন, আমার বেবী ভাল আছে? তারাও বেবীকে মায়ের কোলে দিয়ে বলতেম, এই নাও তোমার বেবী। শেষে বেবীটার নামই হয়ে গেল, বেবী।

মা'বাবার কাছে তার সন্তানেরা সবসময় এক সমান কিন্তু আদর মনে হয় ভাগ করা। একেকজনের জন্য একেক রকম আদর থাকে তাদের কাছে।

(ছবিটা বাবা আমাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় তোলান স্টুডিও'তে। আমাদের চুল বেঁধে দেন বাবা।)


লিখতে বসেছিলাম "মা দিবসে" কিছু লিখতে মা'কে নিয়ে, হল না। লতাপাতা বের হয়ে এল, অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছু চলে এল, আসা ঠিক হয়নি হয়তো। থাকুক এভাবেই।।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১:২৯
৫৫টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×