somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামপেলস্টিল্টস্কিন !!!

১৭ ই মে, ২০১০ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই গল্পটি এমন এক সময়ের গল্প যখন অসহায় বিপদগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য করতে আকাশ, মেঘ, স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসত দূত। এছাড়াও ভাল মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য কোন অজানা জগৎ থেকেও আসত সাহায্যরূপী দূত। এটি তেমনই এক গল্প, তাহলে শুরু করা যাক…



একজন গরীব চাষী ছিলেন যার ছিল এক অসম্ভব বুদ্ধিমতী সুন্দরী কন্যা। চাষীটির প্রয়োজন ছিল একটুকরা জমি এবং তার জন্য রাজার সাথে দেখা করাটা দরকারী হয়ে পড়ল। রাজাকে মুগ্ধ করতে গিয়ে লোকটি রাজাকে বলে ফেলল খুব আত্মবিশ্বাস এবং গর্বের সাথে, “আমার একটা মেয়ে আছে যে খড় থেকে স্বর্ণের মোহর বানাতে পারে”। অবাক রাজা হুকুম দিলেন চাষীকে, সে যেন তার মেয়েকে রাজ-দরবারে নিয়ে আসে, কারণ তিনি তার সাথে কেউ মজা করবে তা পছন্দ করেন না।



তারপর যা হবার তাই হল, মেয়েটির অনুরোধ, অনুনয়, চোখের জল সব বিফলে গেল। খড়ের গাঁদায় পরিপূর্ণ একটা রুমে বন্দী করল রাজার লোকেরা। তাকে আরো বলা হল সকালের মাঝে খড়গুলি স্বর্ণের মোহরে পরিণত না হলে তার জন্য অপেক্ষা করছে শাস্তি।

অসহায় মেয়েটি একটা রুমে খড়ের গাদার মাঝে চরকার পাশে নিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে একাকী বসে থাকল, এছাড়া সে আর কি করতে পারত?
সময় যাচ্ছিল খুব ধীরগতিতে, হঠাৎ একটা বামন কোথা থেকে যেন সৌভাগ্যের দূত হয়ে উধাও হল। বামনটি জানতে চাইল মেয়েটির কাছে তার মন খারাপের কারণ।
মেয়েটির নির্দোষ সত্য উত্তর, “ রাজা আমাকে বলেছে খড়ের গাঁদার সব খড় স্বর্ণে রুপান্তরিত করতে, কিন্তু আমি জানিনা তা কিভাবে করতে হয়!”
বামনটি এবার জানতে চাইল, সে যদি তা করতে পারে কিংবা করে দেয় তাহলে এর বিনিময়ে কি পাবে?



মেয়েটি তার গলার হার দিয়ে দিল। হারখানা পেয়ে বামনটি বসে পড়ল কাজে, দ্রুত গতিতে সব খড় স্বর্ণে পরিণত হল।
সকালে রাজা তা দেখে মহাখুশি এবং তিনি আরো পেতে চাইলেন।
পরদিন রাত্রে আবারো মিলারের মেয়েটিকে আরো অনেক বড় একটি ঘরে অনেক অনেক খড়ের গাঁদা সহ বিশাল একটা চরকা দিয়ে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হল এই বলে যে সবগুলিই যেন স্বর্ণের মোহর হয়ে যায়।
গতরাত্রের মতই মেয়েটি একা একটা ঘরে বন্দী হয়ে পড়ল, অসহায় চোখে কাকে যেন খুঁজতে লাগল। এমন সময় বামনটা হাজির হল মেয়েটির সামনে এবং প্রশ্ন করল আজ সে কি পাবে তার কাজের বিনিময়ে। এবার মেয়েটির তার সোনার আংটিটা দিয়ে দিল বামনটিকে।
রাজা পরদিন সকালে দেখতে পান ঘর ভর্তি স্বর্ণের মোহর। রাজা এতেও সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। এবার তিনি ঘরের এ দেয়াল থেকে ও দেয়াল পর্যন্ত খড়ের গাদায় ঠাসা বিশালের চাইতেও বিশাল একটা ঘরে মেয়েটিকে বন্দী করে ফেললেন। তবে রাজা এই কথাটাও দিলেন যে এবার রাজকন্যা সফল হলে তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে রানী করবেন।
সেই রাতেও বামনটি মেয়েটির সামনে উপস্থিত হল এবং তার শ্রমের বিনিময়ে কিছু চাইল। কিন্তু আজ মেয়েটির মন খারাপ খুব কারণ আজ তার কাছে কিছুই নেই।
এবার বামনটি একটা শর্ত রাখল যে, রাজা তাকে বিয়ে করলে তাদের প্রথম যে শিশুটি জন্ম নিবে তাকে সে শিশুটি দিয়ে দিতে হবে। নিরুপায় অসহায় মেয়েটি সে শর্তেই রাজি হয়ে গেল, না হয়েও উপায় ছিল না।
পরদিন সকালে চকচকে স্বর্ণের মোহরে ঘরভর্তি দেখে রাজা খুব খুশি হলেন এবং মেয়েটিকে বিয়ে করে তার কথা রাখলেন। রানী হবার পর তিনি সব ভুলে গেলেন। মাঝে মাঝে তার মনে হত আসলেই কি তেমন কিছু ঘটেছিল, দেখতে মজার ছোটখাট কোন বামন কি আসলেই এসেছিল?



ঠিক একবছর পর রানী এক কন্যার জন্ম দিলে রাজ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। রানী কিন্তু ভুলেই গিয়েছেন সেই দেখতে মজার বামনটির কথা ও তাকে দেওয়া প্রতিজ্ঞার কথা। কিন্তু রানী ভুলে গেলে কি হবে বামনটি রানীর সামনে একদিন উপস্থিত হয়ে তার শর্তের কথা মনে করিয়ে দিল।
রানীর মনে হল তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী, অসহায় বিপন্ন একজন মানুষ। তিনি বামনটিকে রাজ্যের সব সম্পদ দিয়ে দিতে চাইলেন কিন্তু বামনটি তা প্রত্যাখান করল। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন রাণী কারণ তিনি তার শিশু সন্তান, তার নয়নের মণিটাকে কিছুতেই বামনটির হাতে তুলে দিতে পারবেন না।
রানীর কাকুতি মিনতি দেখে শেষ পর্যন্ত বামনটি রানী কে বলল, “ঠিক আছে, আমি তোমাকে তিনদিন সময় দিলাম; এই তিনদিনের ভিতর তুমি যদি আমার নাম বলতে পার, তবে তুমি তোমার সন্তানকে তোমার কাছে রাখতে পারবে”।



রানী সারা রাত জেগে এ পর্যন্ত যতগুলি নাম শুনেছেন তার তালিকা বানানো শুরু করলেন। পরদিন সকালে বামনটি হাজির হতেই অস্থির রানী একে একে সব নাম বলে যেতে লাগলেন, পিটার, জন, মার্ক, আইজাক, থমাস...... কিন্তু প্রতিবারই উত্তর এলো, “নাহ, এটা আমার নাম নয় এমনকি এগুলির মাঝে কোনটিই নয়”।
সেই রাত এবং দিন রানী অকল্পনীয় মানসিক যন্ত্রণায় সম্ভাব্য সব অদ্ভুত নাম নিয়ে ভাবতে লাগলেন। দ্বিতীয় দিন সকালে রানী যখন এক এক করে সব নাম বলে যাচ্ছিলেন বামনটি নিষ্টুর ভাবে হেসে বলল, “তুমি কখনোই আমার নাম বলতে পারবে না”। তারপর গুণগুণ করে নাচতে নাচতে বামনটি চলে গেল।

রানী তার সব অনুচরকে চারিদিকে পাঠিয়ে দিলেন নতুন নাম সংগ্রহের জন্য। ভাগ্যক্রমে এক অনুচর অনেক নাম সংগ্রহ করে জঙ্গলের পথ ধরে প্রসাদে ফেরার পথে শুনতে পেল এক বামন অদ্ভুত ভাষায় গান এবং নাচ করছে, তার সন্দেহ হল তাই সে চুপ করে আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল বামনটির কান্ড কারখানা।



“আহ! কি মজার ভোজ হবে
আজ সব তৈরী, কাল হবে কাবাব
নাচব আর গাইব, গাইব আর নাচব!!
রানীর বাচ্চা হাতের মুঠোয়
রানী হারবে এই খেলায়
কেউ জানে না, নাম আমার রামপেলস্টিল্টস্কিন!”

রাণীর বিশ্বাসী অনুচর রানীকে ভাগ্যক্রমে জানতে পারা সেই বামনের নাম বলে দিল।
তৃতীয় দিনে রানী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সে বামনটির জন্য।
বামনটি উৎফুল্ল মন নিয়ে প্রসাদে আসল এবং ক্রুর হাসি দিয়ে রানীর দিকে তাকাল। বামনটির সাথে শুরু হয় রানীর কথোপকথন।

রানী - তোমার নাম কি উইলিয়াম?
বামন- নাহ!
রানী- তবে কি তুমি চার্লস?
বামন- অবশ্যই না।
রানী- হুমম, তবে কি রামপেলস্টিল্টস্কিন?
বামন- কে বলেছে তোমাকে, কে ??



হতবাক বিহবল বামন। রাগে ক্রোধে অন্ধ হয়ে পা পাগলের মত অস্বাভাবিক আচরণ করতে করতে পা ঠুকতে লাগল মেঝেতে, ফলে গর্ত হয়ে গেল মেঝে এবং সে গর্তেই পতিত হল সে বামন। গর্ত থেকে উঠে রাগে গরগর করতে করতে সে প্রস্থান করল রাজপ্রসাদ থেকে। অনেক দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল তার রাগান্বিত গররর শব্দ আর হাহাকার!

কেউ কখনোই আর দেখেনি রামপেলস্টিল্টস্কিন নামের বামনটিকে, সে রাজা রানী এবং তাদের শিশুকে কোনদিন বিরক্ত করেনি সে।
অতঃপর রাজ্যে নেমে এলো প্রশান্তির বারিধারা।
-----------------

ব্লগার মোস্তাফিজ রিপন শুরু করেছেন রূপকথাগুলির অনুবাদ, উনার অনুবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু ব্লগার রূপকথা অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছেন, কৃ্তজ্ঞতা তাদের প্রতি।
আমি তেমন এক চেষ্টা করলাম, এটা আমার প্রথম কোন গল্প/ রূপকথা অনুবাদ তাই এর বিকৃ্তি কিংবা মূল গল্পের সুর ভঙ্গ হলে তা এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করছি।
---------------------------------------------

আজকের মত…
আমার কথাটি ফুরালো
নটে গাছটি মুড়ালো!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১০ রাত ৮:৩২
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×