somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসংগ Google এ চাকরি,ICT INCUBATOR

০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খবর-“গুগল লোক নিচ্ছে বুয়েট থেকে”। এ লোভনীয় সংবাদ শুনে আমাদের আশা জাগে,স্বপ্ন ছলকে ওঠে।আমরা ভেতো বাঙালী স্বপ্ন দেখি আম্রিকায় গিয়ে ভাতের বদলে বার্গার খাবো আর গুগলে চাকরি করবো! আমাদের জিব দিয়ে লালা ঝরতে থাকে কোটি টাকার লোভে আর লোডশেডিং বিহীন সুন্দরী বউ নিয়ে সুখে শান্তিতে লাইফ পার করে ভিনদেশের কোন এক অচেনা মাটিতে জীবন শেষে জৈবসার হয়ে পড়ে থাকার হাতছানিতে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি ক্ষণে ক্ষণে!

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকটা দুধেল গাইয়ের মতো।যে গাই পালতে দেশের মানুষের চার বছরে প্রকৌশল ছাত্র-ছাত্রীদের পিছনে খরচ প্রায় ২২ লক্ষ টাকার মতো।লালন পালন শেষে এই গাভীগুলোর দুধ যখন এদেশের মানুষই পায় না তখন এসব বহুমূল্য খামার(বিশ্ববিদ্যালয়) চালানোর আদৌ প্রয়োজন কতটুকু তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বৈকী!!

পাশের দেশ ভারত এবং চিনের উন্নতি অবশ্যই আমাদের জন্য উদাহরণ ,ভারত প্রতি বছর প্রায় ৩০০-৫০০কোটি রূপির সফটয়্যার রপ্তানি করে বিশ্বে,আর চিনের কথা নাহয় নাই বললাম।এ প্রসংগে একটা কথা মনে পড়ে, পঞ্চাশের দশকে ইন্ডিয়ার IIT গুলা প্রতিষ্ঠিত হয় জওহরলাল নেহেরুর হাত ধরে।তৎকালীন সময়ে প্রায় ১৫০ কোটি রূপি খরচ করে তৈরী হয় এই বিদ্যায়তনগুলো।প্রায় দূর্ভিক্ষের মুখে থাকা দেশে এতো টাকা খরচের প্রশ্ন তুলেন সাংবাদিকরা,জবাবে নেহেরু বলেন “এই IIT গুলাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে দিবে”।আজ সত্যিই তাই,পাশের দেশের উন্নতি দেখে আমাদের হিংসা আর ক্ষোভে পুড়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।স্বাধীনতার মাত্র তিন দশকের মাথায় এরা তৈরি করে সম্পূর্ণ নিজের প্রযুক্তিতে পারমানবিক রিয়্যাক্টর (এদের এই অর্জন সারা বিশ্বের মাথা ঘুরিয়ে দেয়),নিউক্লিয়ার বোমা,এরা তৈরী করে পারমানবিক ডুবোজাহাজ,চান্দেও চলে যায় এদের তৈরী রকেট,ওরা দেশের সম্পদকে দেশেই লালন পালন করে আর আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমাদের গাই গুলোকে রপ্তানি করার মাঝে,হায় মাঝে মাঝে করুনা হয় আমাদের কথা ভেবে...।

দেশের ছেলেরা/মেয়েরা বাইরে গিয়ে অনেক নাম করবে!অনেক টাকা কামাবে! আর আমাদের মা জননী ছেঁড়া আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে বলবে দেখ ঐ ধনী মানী লোকটা আমার সন্তান,এ চিন্তা আর কতো দিন ?টিপাইমুখি বাঁধ,তিস্তার পানি এসব নিয়ে কথা বলার মতো বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত আমরা পাই না,পাবো কি করে আমরা যে বিশেষজ্ঞ রপ্তানিতে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞ হয়ে বসে আছি!পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ যখন আসে তখন তা তৈরী দূরে থাক এ প্রসংগে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো মানুষজনও দেশে ছিলনা,থাকবে কি করে এরা যে বাইরের দেশে বার্গার খেতে ব্যস্ত!!(অপরদিকে ইন্ডিয়া তাদের প্রথম ৫.৬ কিমি সমুদ্রসেতু নিজেরাই তৈরী করে )

একটা দেশের প্রকৌশল খাত নির্ধারণ করে দেয় জাতির উন্নতির স্বরূপ।এই খাতকে অগ্রসর করার জন্য প্রয়োজন Entrepreneur বা উদ্যোক্তা গড়ে তোলা।প্রকৌশলী উদ্যোক্তারাই গড়ে দিবে দেশের ভবিষ্যৎ।তাদের দেশে এমন কালচার আছে বলেই ডরমিটরি থেকে বেরোয় Facebook, গ্যারেজ থেকে বিশ্বমানের হয় Google। বৃটিশ আমলে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরী, এ ব্যবস্থা তারা তৈরী করেছিলো কিছু স্থানিক কেরানী তৈরীর জন্য,এখনো আমরা এতে আটকে আছি। স্যাররা আমাদের ক্লাসে বলেন, “চাকরী এতো সহজ না,চাকরী পাবা না”,আরে বাবা চাকরী করে কেরানী হওয়ার স্বপ্ন আর কতো?অবশ্য কেরানী হওয়ার ইচ্ছা এখন আরো উন্নত হইছে,এখন পোলাপাইন Google এর কেরানী হইতে চায়!!

একবার কোন একটা কাজে Peninsula হোটেলে যাওয়া পড়েছিলো। ওদের ওখানে তারা একটা হোটেল ম্যনেজম্যান্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করে যা ইন্ডিয়া থেকে আনা এবং মূল্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা (প্রতি বছর আবার একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট রেজিস্ট্রেশন বাবদ খরচও করতে হয়)।কি এমন এক সফটওয়্যার যে তা আমরা তৈরী করতে পারবো না ?দেশের প্রতিটা জেলার ওয়েবসাইট তৈরী হচ্ছে,বাসের টিকেট কাটার সিস্টেম হয়েছে অনলাইন,ব্যাংকিং খাত ডিজিটাল হচ্ছে, হয়েছে, হবে।দেশে মোবাইল এপ ডেভেলপার অনেক বেড়েছে, আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত হয়েছে এদেশের আউটসোর্সিং,কদিন আগে ওডেস্ক এদেশে তাদের সম্মেলনও করে গেলো,১৬ কোটি মানুষের এ বিশাল বাজার ক্ষুধার্থ,এই বাজার ধরার সময় এখনই।

সেদিন খবরে দেখলাম পাতা কুড়াতে গিয়ে ককটেলে হাত হারানো এক শিশুর হাত কৃত্তিম হাত দিয়ে রিপ্লেসমেন্ট করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল বিভাগ!!গবেষণার কাজটি করেছেন IUT এর সাবেক ছাত্র রায়হান আবীর (অবিশ্বাসের দর্শন বইয়ের সহলেখক)। অসাধারণ!! দেশের মধ্যে এমন কাজ সত্যিই অনন্য। তারা আরও তৈরী করেছেন টিভি মনিটর ব্যবহার করে মাত্র ১০ হাজার টাকায় ইসিজি মেশিন বর্তমান মার্কেটের মেশিনগুলার মূল্য যেখানে ১ লাখ টাকার মতো।এ মেশিন আবার পাকিস্তানে রপ্তানিও করেছেন তারা!! ড. সিদ্দিক ই রব্বানি স্যার হচ্ছেন এর প্রধান গবেষক । স্যারের বক্তব্যও অসাধারণ “আমরা এমন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করবো না যা এদেশের কোনো কাজেই আসবে না”-এ না হলে প্রকৌশলী!!!!!

আমাদের দরকার একজন মাকসুদুল হক যে কিনা দেশে বসেই দেশের গবেষণা করে পালটে দিবে এই গরিবী দশা। সমস্যা আছে অবশ্যই। অনেক অনেক সমস্যা আমাদের হয়তো প্রতিনিয়ত পিছিয়ে দেবে।কিন্তু তার সমাধান করতে হবে আমাদেরই,কেউ এসে এ সমস্যা সমাধান করে দেবে না,যারা আজকে উন্নত তাদেরও এই পর্যায় পার করে উঠে আসতে হয়েছে,এ নির্মোহ সত্য কথা।সমস্যা থেকে পিছিয়ে আসা মানে পালিয়ে থাকা, আর অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না!!

তাই গুগলের কেরানী নয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন জুকারবার্গ বা স্টিভ জবস যখন বের হবেন তখনই প্রকৃত অর্জন হবে,আমরা এদের মতো হবার স্বপ্ন দেখবো, “আমরা চাকরী দেবো”-এ চেতনারই চর্চা করা উচিত ঘরে ঘরে।

২,

প্রায় মাসখানেক আগে আমাদের সংগঠনের(RMA ) এর বর্তমান কর্ণধারদের নিয়ে স্যাররা একটা মিটিং এ বসেন মন্ত্রনালয় থেকে আগত কর্মকর্তাদের সাথে।সেখানে তারা তাদের পরিকল্পনা বর্ণনা করেন। পরিকল্পনাটা অনেকটা এরকম আগামী দিনে তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬০জন ছাত্র বেছে নেবেন তাদের গ্র্যাজুয়েশন এর পর, তারপর তাদের ভালো ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হবে যাতে এখান থেকে বাইরের কোম্পানি লোক নিতে পারে(অনেকটা দুধেল গাই প্রকল্প!) তবে এর মাঝেও কয়েকবার উচ্চারিত হয়েছে এদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার কথা।এটাই আমাদের আশার কথা। এ উপলক্ষে ক্যম্পাসে বেশ এলাহী কান্ড করারও অনেক খসড়া করে গেছেন তারা।আমরা অনেক আশাবাদী অন্ততপক্ষে সরকারের এই বিষয়ে মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে দেখে!!!

লিংকঃ

Click This Link

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৪
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×