অশান্ত ধারায় বৃষ্টিপাত। টিনের চালে রুমঝুম বৃষ্টির শব্দ। দুই হাত দিয়ে দুই কান চেপে ধরে ধরে ছাড়া। কানে কি অপূর্ব মিউজিক! উঠান ঘাট পানিতে থই থই। উঁচু থেকে নিচুর দিকে গড়াচ্ছে স্রোত। শুকনো পাতারা মলিন বেশে ভেসে যাচ্ছে। গাছপালা সব জবুথবু। মনে হচ্ছে অষ্টাদশী তরুণীর মত বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে বুদ হয়ে আছে। আথালে গরুগুলো শুকনো খর চিবাতে চিবাতে মুখ মলিন করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
স্কুল খোলা কিন্তু আমার জন্য বন্ধ। বৃষ্টি এলে মা মলিন কণ্ঠে বলতেন ‘থাক, আজ যেতে হবে না’। কিন্তু আমার ইচ্ছে করতো স্কুলে যেতে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে স্কুলে যাওয়ায় আনন্দ আছে। কি আর করার। সারাক্ষণ জানালার পাশে বসে থাকতাম। অবশ্য তখন এরকম কাব্যিক মন ছিলনা কিন্তু বৃষ্টি দেখার আনন্দ সেই ছেলেবেলা থেকেই। বড় আপা বৃষ্টি এলে গুন গুন করে গান গাইত আর জানালার পাশে হাঁটু গেরে বসে নকশী কাঁথায় ফোঁড় তুলত। আমি লেখার খাতা থেকে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এনে বড় আপাকে নৌকা বানিয়ে দিতে বলতাম এবং সেটা বার বার বলতাম। ও একটা দুইটা বানিয়ে দিয়ে আর দিতনা। আমি কাগজের নৌকা উঠানে স্রোতে ছেড়ে দিতাম।
বৃষ্টি এলে ভাইজান মাকে বলত খই ভাঁজতে। খই আর নারকেল কোরা বৃষ্টির দিনে ওর প্রিয় খাবার। অবশ্য আমারও। ভাইজানের ছিল একটা লাল রঙের বড় রেডিও। এটা ও সব সময় শুনত কিন্তু বৃষ্টি এলে রেডিও শুনতে ও খুব মজা পেতো। বৃষ্টি এলে বাবার নাক টেনে ঘুম কে ঠেকায়? সারাক্ষণ ঘুমাত আর মাঝে মাঝে এসে ভাইজানকে জিজ্ঞেস করতো আবহাওয়ার খবর।
এখনো বৃষ্টি আসে। এখনো উঠানে স্রোত বয়। কিন্তু সেই জানালার পাশের মানুষগুলো আর আগের মত নেই। বৃষ্টি এলে মা এখন আর ঘটা করে খই ভাজেনা। উঠানে ভাসেনা কাগজের নৌকা। কান চেপে ধরে ধরে ছেড়ে দিয়ে যে ছোট্ট ছেলেটা মিউজিক উপভোগ করতো সেও এখন নিজেকে একটু বড় ভাবছে...............
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:১০