somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কুত্তার চোখে চশমা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১। সাহিত্যিক আলি হাসান কে বাংলা কাব্যের জগতে এক অনবদ্য নাম বলে ধরা হয়। সত্যি কথা বলতে কি বাংলা সাহিত্য নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দর মাঝেই ঘোরাফেরা করছিল। আমরা ব্যতিক্রম কিছু পাচ্ছিলাম না। অথচ মানব মন সর্বদাই ভিন্ন কিছু খোঁজে। ভিন্ন কিছু চায়। এর মাঝে অন্যায় কিছু নেই। আমিতো তাকে বাংলার ফ্রয়েড বলবো।নিতু, আলি হাসান সম্পর্কে তোমার কি ধারণা?
না, মানে, ওনার কোন লেখা আমি পড়িনি।
ফ্রয়েড সম্পর্কে?
না, ওনারও কোন.........
অদ্ভুত! বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী, কিন্তু ফ্রয়েড সম্পর্কে জানো না। না, তোমাদের নিয়ে আর পারি না। ধ্রুপদী সাহিত্য সম্পর্কে তোমাদের কোন আগ্রহই নেই। তোমার পার শুধু হুমায়ুন পড়তে। যত্তসব রাবিশ। ওইসব সস্তা লেখা পড়ে কি হবে? কিছুই হবে না।


ফ্রয়েড দেখিয়েছেন যে, একজন মানব তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে যৌনতা দ্বারা তাড়িত হয়। দোলান থেকে কবর পর্যন্ত। মানুষের মানবিক আচার- আচরণকে যৌনতার বহিঃপ্রকাশ বলে মতবাদ প্রকাশ করেছেন তিনি। তার তত্ত্ব অনুসারে মানুষের জন্ম-মৃত্যু, উঠাবসা, চলাফেরা, প্রেম-ভালোবাসা সবকিছুর মধ্যে কামের মারাত্মক ছড়াছড়ি। প্রেম বা ভালোবাসা যেনো কামেরই আরেক নাম বা কামেরই ফলাফল। আমার ত মনেহয়ে ভালবাসা বলতে কিছুই নেই। শরীর থেকেই ভালবাসা সৃষ্টি, তাতেই বিকাশ, তাতেই পরিপূর্ণতা।

নিতু তার উড়নাটা আরেকবার ঠিক করে নিলো। কারণ ডঃ মাহাবুব রহমান এখন তার দিকে লোভাতুর চোখে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েই ভালবাসার সৃষ্টি, বিকাশ ও পরিপূর্ণতা খুঁজছেন।



২। আরে নিতু যে। এখন যাওনি?
না, স্যার, রিকশা পাচ্ছি না। আর বাসে এও ভিড় ছিল যে উঠতে পারিনি।
দ্রুত গাড়িতে উঠে এসো। তুমি তো একদম ভিজে গেছো। এই বৃষ্টিতে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে?এই বৃষ্টির মাঝে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও রিকশা পাবে না।উঠে এস, উঠে এস।
বৃষ্টির ফোটা গ্লাসে খুব অল্প সময়ের জন্য জমে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য ফোটা এসে তাকে সরিয়ে দেয়। এভাবেই চলতে থাকে। বারবার, অবিরাম।


যতটা সম্ভব একপাশে সরে বসেছে নিতু। কিন্তু ডঃ মাহাবুব রহমান সে পাশেই আসতে চায়। তবে দ্রুত না, আস্তে আস্তে। কিন্তু চোখ কে বেধে রাখা যায় না। তিনি চোখ দিয়ে নিতুর দিকে তাকায়। তার সে দৃষ্টি বুলেটের গতিতে সাত হাত উড়নার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে চায়।
তুমি এক কাজ কর। আমার বাসায় চল। একদম ভিজে গেছো তো। ফ্রেশ হয়ে চলে যেও।
স্যার, বামে নামবো।
কিন্তু তোমার বাসা তো আরও দূরে।
আমার মামার বাসা এখানে। ড্রাইভার সাহেব, বামে থামুন।
দ্রুত নেমে যায় নিতু। এক কামার্ত পশু কে পেছনে ফেলে।



৩। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ মাহাবুব রহমান বারান্দায় পায়চারী করছেন। কিছুটা অস্থিরভাবে। ডান হাতে ধরা সিগারেট ঘন ঘন জ্বলছে নিভছে।
সন্দেহ নেই, নিতু মেয়েটা কঠিন স্বভাবের। তার এত ইঙ্গিত ইশারা বুঝেও না বোঝার ভান করছে।
তবে ডঃ মাহাবুব রহমান এত সহজে হার মানার পাত্র নয়। যেভাবেই হোক, তিনি একে তার কব্জায় আনবেন। ছলে, বলে কিংবা কৌশলে।
আরেকটি সিগারেট ধরালেন তিনি।


৪। জব্বারঃ বোঝতে পারছি না, নিতু কি করে মিডটার্ম এ ফেল করল?
ইমিঃ আরে পরীক্ষা খারাপ হয়েছিল। তাই ফেল করেছে। কেন নিতু কি ফেল করতে পারে না। সে কি মাদাম মেরি কুরি!
হামিদঃ কিন্তু আমি ত ওর পাশেই পরীক্ষা দিলাম। ওর পরীক্ষা তো বেশ ভালই হয়েছিল। কেও ফেল করল না, ফেল করল নিতু। আমার কিন্তু মাহাবুব স্যারকে সন্দেহ হয়। স্যার কি ইচ্ছে করে ফেল করালো।
ইমিঃ ইচ্ছে করে ফেল করালো, মানে কি?
জব্বারঃ আমারও কিন্তু তাই মনে হয়। স্যার ক্লাসের সময় কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে নিতুর দিকে।
ইমিঃ তোদের মাথা কি খারাপ হয়েছে? স্যারের ক্যারেক্টার নিয়ে প্রশ্ন তুলিস? আর নিতু কি সতী সাবিত্রী। কই সেদিন তো দেখলাম, লাফিয়ে লাফিয়ে স্যারের গাড়িতে উঠছে। আরে দুই জনের মাঝে অন্য কোন ব্যাপার সেপার আছে। কিছু নিয়ে হয়ত সমস্যা হয়েছে। তাই হয়ত.........।
হামিদঃ কি বলিস তুই? তলে তলে এতদূর। শেষ পর্যন্ত স্যারের সাথে ............।।
ইমিঃ বিষয়টা সবার সাথে শেয়ার করা উচিৎ। মানে, সবার তো জানার অধিকার আছে, নাকি।


৫। আমার প্রপোজালটা ভেবে দেখ। ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখ। তোমাকে আমার ভাল লাগে। মানে তোমার সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি তো অন্য কিছু চাই নি। তোমার কিছু সময় চেয়েছি। সামান্য কিছু সময়। বিনিময়ে তুমি কি পাবে, তা কি ভেবে দেখেছো। তোমার লাইফকে আমি সেট করে দিব। ইউনিভার্সিটির টিচার বানিয়ে দিতে পারি তোমাকে। অথবা বিসিএসে টিকিয়ে দিতে পারি। বিনিময়ে
আপনি আমার বাবার বয়সি।

কাম অন। এসব নৈতিকতার এক পয়সাও দাম নেই আমার কাছে। আমি ভালবাসায় বিশ্বাসী। আর আমার কাছে ভালবাসাই মানে শরীর। শরীর থেকেই ভালবাসা সৃষ্টি, তাতেই বিকাশ, তাতেই পরিপূর্ণতা। হা হা হা।
তোমার বাবা নাকি এক স্কুলের কেরানি। আচ্ছা, কয় টাকা বেতন পায়? খুব স্বপ্ন তোমাকে অনেক বড় করবে। অনেক বড় জব করবে তুমি।কি ঠিক?
হা।


তুমি চাইলেই তোমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পার। তাকে সুখ শান্তি দিতে পার। কেমন মেয়ে তুমি যে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাও না!
আমার কথা মত না চললে ফেল করবে, বার বার। সার্টিফিকেট নিয়ে বের হতে পারবে না। অন্তত এই জনমে না।

আবারও বলছি, আমার প্রপোজালটা ভেবে দেখ। ঠাণ্ডা মাথায়।সময় নাও। তারপর ডিসিশন নাও। আমাকে আবার একটি টক শো তে যেতে হবে। খুব করে ধরেছে। বিষয়ঃ শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি।
ফানি সাবজেক্ট।
হা হা হা। রিয়েলি ফানি।


৬. বৃষ্টি পড়ছে তার ইচ্ছে মত। যেন জগতের যাবতীয় কালিমা মুছে ফেলবে। ধুয়ে মুছে দিবে সব অন্ধকার।
অজানা গন্তব্যে হাঁটছে নিতু। কোথায় যাচ্ছে, জানে না।
তার চোখেও জল। কিন্তু এই ব্যস্ত শহরে এ জল দেখার কে আছে?
---------------------------------------------------------



অনেক আগের কথা। তখন কেও একজন ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ে। নানুর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল সে।
এক দুপুরে এক মহিলা আসল। যে কথা কাওকে বলা যায় না, এমন কিছু কথা সে মহিলাদের সাথে শেয়ার করল। জানালো তার কষ্টের তীব্রতার কথা।
সে কষ্টগুলো আরও একজন শুনল, যে বোঝে না ফ্রয়েড কি, বা ফ্রয়েডস থিওরি। তবে কষ্ট বুঝত। কষ্টের তীব্রতাও বুঝত। যে কিনা পড়ার ভয়ে ঘুমের ভান ধরে শুয়েছিল।
কিছুক্ষণ পর তা মা আবিষ্কার করল, যে সে কাঁদছে। জানতে চাইল, আব্বু কাঁদছ কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×