আপা, আপা, আপনার ছেরা কানতাসে (ছেলে কাঁদছে)।
ছাত্রীর ডাকে বই থেকে মুখ তুললেন স্কুল শিক্ষিকা ফেরদৌস আরা ফেরদৌসি। বুঝতে বাকি থাকে না যে রিজভি কাঁদছে। ছেলেটা একটু চুপচাপ। একটু বেশিই চুপচাপ।
রুমে গিয়ে দেখে যে ঘটনা সত্যি। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ছেলেটা। মাথায় হাত দিতেই কান্না থামিয়ে দেয় ছেলেটা। ফেরদৌস আরা ফেরদৌসি কুলে করে নিয়ে আসেন টিচার্স রুমে।
স্কুলের অনেক ছেলে মেয়ের ধারণা যে ও তোমার ছেলে। সারাক্ষণ তোমার সাথে সাথেই তো থাকে। হেড মিস্ট্রেসর ডাকে সেদিকে তাকায় ফেরদৌস আরা ফেরদৌসি। হা, ভাইয়ের ছেলে। কিন্তু স্নেহ কিন্তু মায়ের থেকে কম না বেশিই করি। ফুঁপির এক চোখে অশ্রু, অন্য চোখ অশ্রুহীন, নিষ্প্রাণ, স্থির।
এই দুনিয়ার এক অদ্ভুত নিয়ম। ভাল মানুষদের আল্লাহ যেন বেশি কষ্ট দেন। হয়ত পরীক্ষা করছেন উনি। যার ফল হয়ত ওনি অন্য কোন দুনিয়াতে দিবেন। আমার মোট চার জন ফুঁপি। যার মধ্যে ফেরদৌস ফুঁপি ৩ নম্বর। সব সময় খুব শান্ত ও স্থির ধরণের। কখন রাগতে দেখিনি। আমি বুঝে পাই না আমার সদ্য প্রয়াত দাদি যিনি প্রচণ্ড ভয়ানক রাগি ও ডোমেনিটিং ছিলেন তার কন্যা কি করে এত ঠাণ্ডা মেজাজের হয়?
তখন ফুঁপির বিয়ে হয় নি। ফুঁপি আমাদের সাথেই থাকতেন। তার স্কুলেই আমি পড়তাম। সবার ধারণ ছিল যে আমি মনে হয় তারই ছেলে।
একদিন ফুঁপির চোখে একটি ছোট স্পট দেখা দিল। অনেক ডাক্তার দেখানো হল। অনেক ট্রিটমেন্ট হল। ডাক্তার জানাল যে ছোট্ট একটি অপারেশন করাতে হবে। চোখে। অপারেশন হল। সেই সাথে ফুঁপির একটি চোখও নষ্ট হয়ে গেল। আমার ফুঁপির দুনিয়া এক চোখের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল।
তখন আমি এ দুনিয়াতে আগমনও করি নি।
২০১৪, জানুয়ারি মাস।
ফুঁপির রাইট বেস্টে একটি চাকার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে বিজ্ঞ ডাক্তারগণ। বলে ছোট একটি অপারেশন। কোন ভয় নেই। অপারেশন হয়।
বায়পসি রিপোর্ট আসে। ক্যান্সার র জারমস খুঁজে পায় অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
ডাক্তার বলে ছোট অপারেশন করতে হবে। আরেকটি.......................
আমি যখন এ লেখা লিখছি তখন অপারেশন হচ্ছে। পেশাগত কারণে এ ইট পাথরের শহরের জিঞ্জিরে আবদ্ধ আমি। চাইলেও যেতে পারি না আমি। যেন এক অদৃশ্য কারাগার বেধে রেখেছে আমাকে।
আমার শুধু দিনের কথা মনে পরে। ফুঁপির কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি আমি। ফুঁপি আমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে। টিফিন খাওয়াতে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




