উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কাজ করতে না চাইলে সরকারি চিকিৎসকদের চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একইসঙ্গে চিকিৎসকসহ সমাজের সব স্তরের মানুষকে ঠিকমতো আয়কর দেওয়ারও আহবান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ১৯তম মেডিকেল সম্মেলন ও বিশেষ বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, "একটা অভিযোগ আমাকে সব সময়ে শুনতে হয়। তা হলো- উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে জাক্তাররা থাকেন না। আপনারা সরকারের চাকরি করবেন, সরকারের টাকা নেবেন। কিন্তু কর্মস্থলে থাকবেন না। সরকারি চাকরি যদি ভালো না লাগে, তা হলে ছেড়ে দেন।"
মেডিকেলে পড়ার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই খরচ আসে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে। জনগণের তো চিকিৎসা পাওয়ার আকাক্সক্ষা থাকবে।"
চিকিৎসদের মানসিকতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, "বিএমএর সেক্রেটারি যখন এখানে আপনাদের দাবি উত্থাপন করছিলেন, তখন সবাই বেশ জোরে জোরেই তালি দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন বললেন- 'অন্তত একটি দিন আমরা ফ্রি চিকিৎসা দেবো', তখন কেউ তো হাত তালি দিলেন না।"
শেখ হাসিনার এই কথার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই তালি দিয়ে ওঠেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, "এখন কোন আপনারা তালি দিলেন আমি জানি না। তবে, আপনাদের এই আচরণে আমি দুঃখ পেয়েছি।"
চিকিৎসকদের ব্যবহার ভালো হলে রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায় মন্তব্য করে 'দরদী মন' নিয়ে মানুষের সেবা করার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বর্তমান মন্ত্রিসভায় পাঁচজন ডাক্তার রয়েছেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। সবাই আপনাদের যথেষ্ট মর্যাদা দেন। আপনাদের কাছে আমার একটাই দাবি- দরিদ্র মানুষ যেন স্বাস্থ্য সেবা পায়।"
চিকিৎসকদের ঠিকমতো আয়কর দেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ডাক্তারদের মধ্যে কর দেওয়ার প্রবণতা কম। আপনারা কর দিলে সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং আপনাদের করের টাকায় জনসেবাও হবে।"
কারো নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, "অনেকে দরিদ্র মানুষের জন্য অন্তপ্রাণ। কিন্তু, তাদের মাইন্ড সেট হয়ে গেছে- কীভাবে একটু কর ফাঁকি দেওয়া যায়। বিশ্বখ্যাত মানুষেরা কর ফাঁকি দিতে এদিকের টাকা ওদিকে নেয়। নয়-ছয় করে। দেশে বিদেশের অনুদান এনেও নয়-ছয় করে। কিন্তু, তারা বুঝতে চান না, তাদের করের টাকা যায় দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে।"
স্বাস্থ্যখাতে সরকারের গত দুই বছরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, নতুন স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে পঙ্গু হাসপাতালের উন্নয়নের বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি।
বেসককারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ যাতে না হয়- সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক সরকারি চিকিৎসকদের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "গ্রামে পাঠালে আপনারা মামা-কাকাদের ধরে শহরে চলে আসেন। আর, সংসদে আমাকে আর প্রতিমন্ত্রীকে গালি খেতে হয়।"
লাল-সবুজ রঙের ওষুধের মোড়ক দেখিয়ে মন্ত্রী চিকিৎসকদের বলেন, "এই লাল-সবুজ মোড়কের ওষুধ শুধু সরকারি হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য। আপনারা খেয়াল রাখবেন, এই ওষুধ যেন বাইরে কিনতে পাওয়া না যায়।"
কপি মারা হইছে বিডিনিউজ থেকে।