somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফগানিস্তানের একজন আমির দোস্ত মুহাম্মদ খান

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দোস্ত মুহাম্মদ খান ছিলেন আফগানিস্তানের বারাকজাই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং আফগানিস্তানের একজন আমির।তিনি দুররানি রাজবংশের পতনের পর আফগানিস্তানের আমির হন। ১৮২৬সাল থেকে ১৮৩৯সাল এবং ১৮৪৫সাল থেকে ১৮৬৩সাল এই দুই মেয়াদে তিনি আমিরের দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি জাতিগতভাবে একজন পশতুন ছিলেন। তিনি তার পিতা এবং বারাকজাই গোত্রের প্রধান সর্দার পায়েন্দা খানের একাদশ পুত্র। পায়েন্দা খান ১৭৯৯ সালে জামান শাহ দুররানি কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন।দোস্ত মুহাম্মদ খানের দাদা ছিলেন হাজি জামাল খান।দোস্ত মুহাম্মদ খান ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর কান্দাহারের একটি প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা পায়েন্দা খান ছিলেন বারাকজাই গোত্রের প্রধান এবং দুররানি সাম্রাজ্যের একজন বেসামরিক কর্মচারী। তারা তাদের বংশলতিকা হাজি জামাল খান, ইউসুফ, ইয়ারু, মুহাম্মদ, উমর খান, খিসার খান, ইসমাইল, নিক, দারু, সাইফাল এবং বারাকের মাধ্যমে আবদালি গোত্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদালের সাথে সম্পর্কিত করেন। আবদালের চার পুত্র ছিল। তারা হলেন পুপাল, বারাক, আচাক এবং আলাকু।

তার বড় ভাই এবং বারাকজাই প্রধান ফাতেহ খান ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে মাহমুদ শাহ দুররানির ক্ষমতা লাভ এবং ১৮০৯সালে পুনরায় ক্ষমতা লাভে সহায়তা করেছিলেন। আক্রমণকারী শিখদের বিরুদ্ধে আটোকের যুদ্ধে দোস্ত মুহাম্মদ খান তার বড় ভাই এবং কাবুলের প্রধানমন্ত্রী উজির ফাতেহ খানের সাথে ছিলেন। ১৮১৮ সালে মাহমুদ শাহ দুররানি কর্তৃক ফাতেহ খান নিহত হন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মাহমুদ শাহ হেরাত ছাড়া তার শাসনাধীন বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ হারান এবং সেসকল অংশ ফাতেহ খানের ভাইদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। সেসকল অংশের মধ্যে দোস্ত মুহাম্মদ খান গজনি লাভ করেছিলেন। ১৮২৬ সালে তিনি সেসময়ের সবচেয়ে সম্পদশালী আফগান প্রদেশ কাবুলকে এর সাথে যুক্ত করেন।ক্ষমতারোহণের সময় থেকে তার সাথে পাঞ্জাবের শিখ শাসক রণজিৎ সিঙের সাথে দ্বন্দ্ব ছিল। রণজিৎ সিং দোস্ত মুহাম্মদ খানের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত শুজা শাহ দুররানির সাথে মিত্রতা করেছিলেন। ১৮৩৪ সালে শুজা শাহ দুররানি তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য শেষ চেষ্টা চালান। এতে তিনি দোস্ত মুহাম্মদ খানের কাছে পরাজিত হন। তবে রণজিৎ সিং সেই সুযোগে পেশাওয়ার দখল করে নেন। শিখদের পরাজিত করার জন্য জামরুদের যুদ্ধে দোস্ত মুহাম্মদ খান তার পুত্র ওয়াজির আকবর খানকে পাঠিয়েছিলেন।ব্রিটিশ, রুশ এবং কিছুটা ফরাসিদের কারনে রাজনৈতিক পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। দোস্ত মুহাম্মদ খান রুশদের ফিরিয়ে দিয়ে ব্রিটেনের সাথে মিত্রতা গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি ১৮৩৭ সাল কাবুলে আলেক্সান্ডার বার্ন‌সকে স্বাগত জানান। কিন্তু বার্ন‌স গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ডকে রাজি করাতে সক্ষম হননি। দোস্ত মুহাম্মদ খানকে পেশাওয়ার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা ছেড়ে দিতে এবং আফগানিস্তানের বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়। তার বদলে তিনি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং ১৮৩৮ সালে লর্ড অকল্যান্ড তার বিরুদ্ধে সেনা প্রেরণ করেন।


১৮৩৫ সালে দোস্ত মুহাম্মদ খান পেশাওয়ার পুনরুদ্ধারের জন্য খাইবার পাসের দিকে অগ্রসর হন। ১৮৩৬ সালে শিখ সেনাপতি হরি সিং নালওয়া এবং রাজপুত্র নাও হিনাল সিং এই সীমান্তে ছিলেন। তারা কয়েকটি দুর্গ তৈরী করেছিলেন। তার মধ্যে জামরুদ ছিল খাইবার পাসের একেবারে পূর্বপ্রান্তে। দোস্ত মুহাম্মদ আরেক প্রান্তের আলি মসজিদে আরেকটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ১৮৩৭ সালের শুরুতে নাও নিহাল সিং বিয়ের জন্য লাহোর আসেন এবং রণজিৎ সিং এবং তার দরবার বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।জামরুদের উদ্দেশ্যে দোস্ত মুহাম্মদ খান ২৫,০০০ সৈনিকের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে অনেক স্থানীয় অনিয়মিত সৈনিক ছিল। তাছাড়াও তাদের সাথে ১৮টি ভারি কামান ছিল। শিখ ঘাটিতে সৈনিক সংখ্যা ছিল ৬০০ এবং তাদের অল্প কয়েকটি হালকা কামান ছিল। আফগানরা দুর্গ অবরোধ করে এবং এর পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সেসাথে শাবকাদারের দুর্গ থেকে যাতে সহায়তা আসতে না পারে সেজন্য সেখানেও একটি দল পাঠানো হয়। জামরুদের কমান্ডার চারদিন পর্যন্ত আফগানদের ঠেকিয়ে রাখেন এবং পেশাওয়ারে হরি সিং নালওয়ার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। এরপর নালওয়া জামরুদের দিকে অগ্রসর হন।১৮৩৭ সালের ৩০শে এপ্রিল চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। আর সেই যুদ্ধে হরি সিং মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৮৩৮ সালে শিখ সম্রাট ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে অংশ নেন। আর তার ফলে ১৮৩৮ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ সহায়তায় শুজা শাহ দুররানি কাবুলের ক্ষমতা লাভ করেন। দোস্ত মুহাম্মদ খান ১৮৩৯ সালে নভেম্বর মাসে মসুরিতে নির্বাসিত হন। ১৮৪২ সালের এপ্রিল মাসে শুজা শাহ নিহত হওয়ার পর তিনি পুনরায় ক্ষমতা পান।


ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর দোস্ত মুহাম্মদ খান নিজ শাসনের ভিত্তি মজবুত করা শুরু করেন। ১৮৪৬সাল থেকে তিনি ব্রিটিশদেরকে আক্রমণের নীতিতে পরিবর্তন আনেন এবং শিখদের সাথে মিত্রতা করেন। কিন্তু শিখরা ১৮৪৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটে পরাজিত হওয়ার পর তিনি তার পরিকল্পনা ত্যাগ করে তার বাহিনীকে আফগানিস্তান ফিরিয়ে আনেন। ১৮৫০ সালে তিনি বলখ জয় করেন এবং ১৮৫৪ সালে কান্দাহারের অধিকারের মাধ্যমে দক্ষিণের আফগান গোত্রগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন।


১৮৫৫ সালে তিনি ব্রিটিশদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। ১৮৫৭ সালে তিনি ব্রিটিশদের সাথে সম্মিলিতিভাবে পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সেই বছরের জুলাই মাসে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে হেরাত প্রদেশ এক বারাকজাই রাজপুত্রের হাতে সমর্পণ করা হয়। সিপাহী বিদ্রোহের সময় তিনি বিদ্রোহীদের সহায়তা প্রদান থেকে বিরত ছিলেন। তার পরের বছরগুলোতে তিনি হেরাত ও বুখারার সমস্যার কারণে সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন। ১৮৬২ সালে পার্সিয়ানরা হেরাতের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। তিনি ব্রিটিশদের কাছে সহায়তা চান এবং তাদের বিতাড়িত করেন। ১৮৬৩ সালে মে মাসে তিনি পুনরায় হেরাত অধিকার করেন। সে বছরের ৯ই জুন তিনি মারা যান।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×