somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চিন্তিত নিরন্তর
জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করে দিয়েছি চিন্তা করতে করতে। কখনো চিন্তা করার উপযুক্ত সময়ে, কখনো পড়তে বসে এমনকি খেতে বসেও চিন্তা করে সময় পার করেছি। চিন্তা করি নিজেকে নিয়েই বেশি। পরিবার, সমাজ, দেশ ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা, বহির্বিশ্ব ইত্যাদি কত ব্যাপর নিয়েই নিজ

সবুরে মেওয়া ফলে

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার বন্ধুমহলে যে বিষয়গুলো নিয়ে কথাবার্তা হত তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল মুভি আর প্রেম। ক্লাসমেটদের মধ্যে সারা বছরই প্রেমঘটিত ব্যপার নিয়ে নাটক হতেই থাকত। কে কার সাথে চোখা চোখি করছে? কার কার ‘টাচ টাচ” খেলা চলছে? কারটা ভেঙ্গে গেল? কে কার এসাইনমেন্ট রেডি করেতে সাহায্য করছে? ক্লাশ শেষে কে কে অযথা ক্যাম্পসে ঘোরাঘুরি করছে? শীতের সন্ধ্যেয় কাদেরকে একই চাদরের তলায় বসে থাকতে দেখা গেছে? এই রকম নানা কাহিনী নিয়ে আড্ডা জমতো। এমন প্রেমের অনেকেরই অনেক ভাঙ্গা গড়াই দেখেছিলাম আমরা , শুধু সবুরেরটা বাদে।

আসলে ওর নাম সবুর ছিলনা। নাম ছিল আকিফ। কিন্তু ওর প্রায় কাজেই আমরা দেখতাম খুব বেশি ধৈর্য্যশীল। একটু হুজুগে ছিল। একবার Financial Management এর একটা সমস্যার সমাধা করতে গিয়ে সারা রাত পার করে দিল। আমি বারন করলেও শোনেনি। হঠাৎ করেই টিটি (টেবিল টেনিস) খেলা শুরু করল। হলের পরিচিত যে কাউকে পেলেই অফার করতে খেলায়। নিজের হলেরটা শেষ করে অন্য হলেও যাওয়া শুরু করল। তারপরেও খুব ভাল খেলতো না সে। কিন্তু ধৈর্য্য দেখলে মাথা নষ্ট। ক্লাসের কোন বন্ধুর কোন কারনে রক্ত লাগবে, সে জোগাড় করে দিত। কারো চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন, ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে, ক্লাসরুমগুলোতে ঢু মেরে টাকা তুলে দিত। অধিকাংশ সময়তেই সে সফল ছিল। সবুরের সবরে সত্যি মেওয়া ফলত।

হঠাৎ করেই সবুরের পরিবর্তন দেখলাম। সে কেমন যেন আমাদের এড়িয়ে চলে। মূল কারন বের করতে আমাদের বেশ কয়েকজনেই ওর পেছনে লাগল। কয়েকদিন পরে আসল খবর পেলাম, ‘এই ব্যটাও প্রেমে পড়েছে’। আমি দুই অক্ষরের নামের মেয়েদের খুব ভয় পেতাম। নিতু, মিতু, নীলা, শীলা নামগুলো কেমন জানি ড্যাশিং মনে হত। ওর ভাগ্যে এমনই কেউ এসে জুটল। আমি প্রথমেই ভাবলাম এই প্রেম টিকবে না। কিন্তু আমার এই ধারনাটা সবুর অন্তত একশবার ভেঙ্গেছে। যত বারই ভাবতাম এই গেল বুঝি, ততবারই সে সফল হত।

মেয়েটি ছিল ছিপছিপে গড়নের। বেশ মেজাজি। সবুরের বেশ খেয়াল রাখত, তবে সেটা সন্দেহের বশে। ভুল বশত সবুর ক্লাশের কোন মেয়ের সাথে বসেছে, সে খবর পেয়ে গেছে। তারপরেই শুরু হত নাটক। কে তাকে খবর দিত তা আজ অবধি আমরা জানতে পারিনি।

একবার ওদের দুইজনের বেশ ঝগড়া হল খুব সামান্য একটা ব্যপার নিয়ে। সবুরের মোবাইলে ভারতীয় সিনেমার এক নায়িকার বেশ কয়েকটি ছবি পাওয়া গিয়েছিল তাই। এটা নিয়েই আমাদের বেশ কয়েকজনের সামনে সবুরের শার্টের কলার ধরে টানা হ্যচড়া করল তুলি। সবুর নির্বোধের মত ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। কোন রিএকশ্যনে গেলনা। ওর এই কাপুরুষের মত ধৈর্য্য ধরা দেখে আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল সেদিন। ভুল করল তুলি, উল্টো সেই আবার সবুরকে শাশিয়ে গেল যে , সে আর তার সাথে কথা বলবেনা। সবুর খুব মন খারাপ করে রইল। এঘটনার বেশ কয়েক ঘন্টা পরে সবুরকে পেলাম হলের বারান্দার এক কোনায় বসে থাকতে। আমার মনে হয়েছিল তুলির এমন ব্যবহারে সে খুব কষ্ট পেয়েছে। আমি সান্ত্বনা দিতে ওর পাশে যেয়ে বসলাম। পিঠের ওপর হাত বোলাতে বোলাতে বললাম, “ দোস্ত তুই তুলির আশা ছাইড়া দে, ও একটা শাঁকচুন্নি টাইপের মাইয়্যা”।

আমার কথা শুনে ওর মুখে কিঞ্চিৎ হাসি দেখলাম। একটা গাছের পাতা হাতের মধ্যে ঢলতে ঢলতে বলল, “ দোস্ত, বৌ এর হাতে মাইর খাওয়ার কি যে মজা সে তুই বুঝবিনা”। ওর এমন বেহায়ার মত কথা শুনে আমার মাথা চক্কর দিল। আমি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওর আড়াল হলাম।

এঘটনার তিন সপ্তাহ পরে পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত বরণের আমেজে তুলিকে পেলাম টিএসসি তে। দেখলাম বেশ হ্যান্ডসাম এক ছেলের সাথে তুলি বসে আছে। মাথায় গাধা ফুলের মালা জড়ানো। বেশ লাগছিল ওকে। সবুরকে সাথে দেখতে না পেয়ে আমার আনন্দিত হবার কথা ছিল, কিন্তু আমিও ছোট খাট একটা ধাক্কা খেলাম। তবে তুলি সাথে থাকা ছেলেটির প্রতি আগ্রহী ছিলনা। তার হাতে একটা কোল্ড ড্রিংকসের বোতল ছিল। একটু পর পরেই সে প্লাষ্টিকের পাইপ দিয়ে বোতলে ফু দিয়ে বুঁদ বুঁদ তুলছিল আর আড় চোখে কার দিকে তাকিয়ে যেন মিটিমিটি হাসছিল। কিন্তু পানীয় খাচ্ছিলনা একটুকুও। সবই ফুলে ফেপে নিচে পরছিল। ব্যপারটা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হল। একটু এদিক সেদিক চাইতেই এককোণে সবুরকে খুজে পেলাম। দেখলাম সে বেহায়ার মত দুই কান ধরে করুন দৃষ্টিতে তুলির দিকে চেয়ে আছে।

এমন কত ঘটনাই আমরা দেখেছিলাম ওদের মধ্যে। বারবারই সবুরের ধৈর্য্যের কাছে আমাদের আশংকা হাড় মানত। ওরা আবার একসাথে হাসতো, হাত ধরে হাঁটত, ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতো। এতে সবুরের পড়াশুনায় খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কারন সে মোবাইলে কথা খুব কম বলত। যা হত সামনাসামনি। এভাবেই ওদের বেশ কয়েকবছর একসাথে চলতে দেখেছি।

এমবিএ ফাইনালের পর রেজাল্ট প্রকাশ হতে দেরি হচ্ছিল। ততদিনে সবুরের সাথে আমার যোগাযোগ অনেক কমে এসেছে। এক বন্ধুর কাছে খবর পেলাম ও নাকি বেশ পাগলামো শুরু করেছে। ডিপার্টম্যান্টে যেয়ে উল্টো পাল্টা আচরণ করেছে। সবুর কখনোই এমন ছিলনা। আমি ওকে ফোন দিলাম। দেখি ওর আবার কি হল, রেজাল্ট প্রকাশে এক আধটু দেরি হতেই পারে। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরেও কেউ ওর ফোন রিসিভ করল না। তুলির নম্বরটাও হাড়িয়ে ফেলেছি। একটু হতাশ হলাম। অবশেষে মাঝ রাতে সবুর ফোন রিসিভ করল। আমি ওকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বললাম, “ দোস্ত আর একটু সবর কর, রেজাল্ট নিয়া এত্ত তাড়াহুড়ো করার কি হইছে”।
ওপাশ থেকে বেশ হতাশ আর কান্না ভেজা কন্ঠে সবুরকে বলতে শুনলাম, “ হে রে দোস্ত, সবুরেইতো মেওয়া ফলে’, তা না হইলে তুলি আমার সাথে ধৈর্য্য ধইরা পাঁচ বছর প্রেম না করলে কি আমেরিকা প্রবাসী পোলারে বিয়া করতে পারতো”!

সমাপ্ত...............

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×