somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলম্ব

০১ লা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৌষ মাস চলে, শেষের দিকে অবশ্য। শীত পরেছে ভালোই। রিকশা জমাদিয়ে বাসায় ফিরছে জামিল। কুয়াশাও ভালোই জেঁকে ধরেছে পথঘাট। দশ হাত দূরেও কি আছে, ভালো করে বোঝার উপায় নেই। এবার নাকি আগেরবছরগুলোর সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেওয়া শীত পরেছে। পৌষ মাসেই এই অবস্থা, মাঘে কি হবে খোদা জানে। জামিল গায়ে জ্যাকেট পড়া, তার উপর চাদর জড়ানো। চাদরটা কিছুদিন আগেই গ্রামের বাজার থেকে ওর বউ কিনে পাঠিয়েছে কালাম কে দিয়ে, কালাম ওর শালা। মনে মনে কুৎসিত গালি দিল নিজেকে, আজকেও তাস খেলতে বসে ১৫০ টাকা হেরে এলো। রিকশাজমা দিয়ে বাসায় চলে আসতে নিয়েছিল। সাবের জোর করে ডেকে নিয়ে বসালো খেলতে, তবে সাবের কে তোয়াক্কা না করেই চলে আসতো সে।যদি না বাংলা মদ এর কথা বলতো সাবের। সেই লোভ এ বসে পরেছিল খেলতে। খেলা শেষ করে মদ্যপান করে রাত প্রায় ১.৩০ বাজিয়েছে। এখন এই নির্জনে কড়া শীতের রাতে একা একা বাসায় ফিরতে হচ্ছে। যদিও বাসায় কেও নেই যে, অপেক্ষা করে বসে থাকবে। বউটা গ্রামে, সুন্দরী বউ। মাঝে মাঝে যখন বাড়িতে যায় বেচারা বউ রে একটা রাত ও শান্তি দেয় না, পুরোটা রাত জাগিয়ে রাখে। ঢাকা তে একলা একলা ভালো লাগে না, মাঝে মাঝেই পতিতার শরণাপন্ন হতে হয় জামিলকে। তবে এই ব্যাপারটা যে কোনদিকে থেকে খারাপ, সেটা কিন্তু না। কারণ যৌন টান তো ওর ও আছে, শহরে সাথে বউ নাই, কি আর করার। নিজের মানবিক দিক ভেবে এই ব্যাপারটা কে জামিল ভালো ভাবেই নিয়েছে। আর মাগনা তো করে না। টাকার বিনিময়ে করে। পতিতারা তো পেট চালানোর জন্যই এ কাজে নেমেছে। ও তো আর টাকা না দিয়ে করে না কখনো।

জীবনটা খারাপ না, ভালোই যাচ্ছে সব মিলিয়ে। জীবনের আনন্দের কথা ভেবে আত্মতৃপ্তিতে ঠোঁটের কোনে হালকা হাসি খেলে গেলো তার।

এসব ভাবতে ভাবতে কাচঁপুর ব্রিজ এ পৌঁছে জামিল। দু’চার কদম এগিয়েছে এই মুহূর্তে একটা ট্রাক সাঁই করে গেলো ওর পাশ দিয়েই। ভড়কে গিয়েছিল সে। বুকে থু থু দিতে গিয়ে টের পেলো চাদর দিয়ে তো পুরা জবুথুবু অবস্থায় আছে। ব্যাপার না,বাসায় গিয়ে মনে করে থুথু দিয়ে নিবে, ভাবলো সে। ব্রিজ দিয়ে মোটামুটি ১৫/২০ কদম এগিয়ে কিছু দূরে আবছা ভাবে একটা অবয়ব দেখতে পেলো বলে মনে হল জামিলের। একটু থেমে ভালো করে খেয়াল করলো সে। স্থির আছে অবয়ব টা। নড়ছে না। একটু সাহস করে এগিয়ে গেলো জামিল। কাছাকাছি গিয়ে নারী মূর্তি দেখে চমকে গেলো। এতরাতে এখানে একটা যুবতী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ব্যাপারটা অস্বাভাবিক। খারাপ কিছু নাতো!! , মনে মনে ভাবে জামিল।
কাছে গিয়ে কিছুটা ভয় ও বিস্ময় মিশ্রিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে সে, “কি ব্যাপার ? কে আপনে? এইখানে কি করেন এতো রাতে?”
“আমি যেই হই আপনার কি?” , অনেক শান্ত থেকেই জামিলের দিকে ফিরে উত্তর দিলো মেয়েটা।
মেয়েটার শান্ত কণ্ঠ শুনে জামিল কিছুটা হলেও ভড়কে গেলো।
সে অবস্থায়ই আবার তাকে জিজ্ঞেস করে জামিল, “এতো রাতে এইখানে জোয়ান মাইয়া খাড়ায় আছে, বিষয়ডা বুঝতে পারলাম না। ”
মেয়েটি আবারো খুব শান্ত কণ্ঠস্বরে উত্তর দেয়, “যেইখানে যাইতেছিলেন, যান ! আমি কি করি না করি তাতে আপনের কি?”
এবার জামিল কিছুটা সাহস নিয়েই প্রশ্ন করে, “ এমন অনিরাপদ জায়গায় মাইয়া মাইনসের এতো রাতে থাকাটা শোভন না। বাড়ি কই আপনের? কাহিনী কি ? ”
“কাহিনী জাইনা আপনে কি করবেন ? দ্যাখেন তো আমি সুন্দর কি না ?”- মেয়ের জবাব।
জামিল এই প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো পুরোপুরি।
জামিলের এই অবস্থা দেখে মেয়েটা বলে,“ আমি পতিতা বা বেশ্যা না, কিন্তু আপনে চাইলে নিতে পারেন আমারে আপনের লগে, বাড়িতে বউ আছে ?”
জামিল এবার উত্তেজনায় ঘামতে শুরু করেছে এই শীতের রাতেও। কাহিনী বুঝতে পারছে না। কে না কে, এইখানে এভাবে... ঘোলাটে লাগছে সবকিছু জামিলের কাছে।
মেয়েটা বলে, “ আমার নাম সামিনা, আমি ঢাকার মালিবাগ এ গার্মেন্টস এ চাকরি করতাম, বাপ অসুস্থ বাড়িতে, টাকা নাই, তাই আইছি এই কামে। কই যামু বুঝতাছিলাম না।এদিকে কেও চেনা জানা নাই বইলা এদিকে আইছি। সময় নষ্ট কইরেন না তো, ভালো কইরা তাকায় দ্যাখেন, ভালো না লাইগা যাইবেন কই, কত পুরুষ আমারে ডাকে, জীবনে যাই নাই, এখন বাধ্য হইয়া এই পথে নামতে হইতাছে। আজকা নিয়া দ্যাখেন, ভালানা লাগলে ট্যাকা কম দিয়েন।”
একটানে এতোগুলো কথা গিলতে সময় নেয় একটু জামিল। তবে মেয়েটা যা বলছে, মুখের ভাব দেখে মন হচ্ছে সত্যি বলছে। জামিল একটু শান্ত হয় এবার। সাহস করে জিজ্ঞেস করে, “কত নিবা?” “বেশিনা, ২০০ দিলেই হইব”, মেয়েটি দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দেয়। জামিল এমনিতেই টানে আছে, এখন আবার ২০০ টাকা। অবশ্য টাকা ভালোই জমছে। আর মেয়েটা দেখতে শুনতে ভালাই। ২০০ টাকায় এমন ভালো কিছু পাওয়া কষ্টকর বটে। জামিল যেহেতু নিয়মিতই ভাড়া করে, তার এ সম্পর্কে ভালোই ধারণা আছে। কিছুক্ষণ ভেবে জামিল উত্তর দিল, “আইচ্ছা, চল”।

২/
কবির ঘরে ঢুকেই আঁতকে উঠলো। সে এসবের সাথে তেমন একটা পরিচিত নয়, আসলে একদমই পরিচিত না বলা চলে। নতুন জয়েন করেছে সে। আজই তার ফিল্ড এ কোন ক্রাইম সিনে এভাবে প্রথম আসা। খাটের উপর শুধু শরীর টা পরে আছে, মাথাটা একদম সমান করে কেটে ফেলা হয়েছে মনে হচ্ছে, যে ই কেটেছে ভালো শক্তি আছে বলতে হবে অথবা খুব সচেতনতার সাথে মেপে কোপ দিয়েছে, এর মানে ঘুমে থাকা অবস্থায় কোপ দিয়েছে। আর সে কাটা স্থানে একঝাক মাছির আনাগোনা চলছে। খাটের পাশেই মাটির মেঝে তে মাথা পড়ে আছে, আর চারপাশে রক্ত ছড়িয়ে আছে, জমাট বাঁধা কালচে রক্ত। সেখানে ও মাছিদের আড্ডা বসেছে। একবার এভাবে চোখ বুলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো কবির। খুব একটা দৃষ্টি শোভন নয় ওর জন্য দৃশ্যটা।

বেশ কিছুদিন পর...
অনেক ইনভেস্টিগেশন এর পরেও জামিলের হত্যাকান্ড নিয়ে কোনরূপ তথ্য পাওয়া যায়নি। কেস ক্লোজ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। সাবের নামে যদিও একজন যৎসামান্য টাকা পেতো, সেটা এমন কোন পরিমাণ না। তবুও সাবের কে জেরা করা হয়েছে। কোন সূত্র ধরেই সাবের কে জামিলের খুনের সাথে জড়িত পাওয়া যায়নি। সে জামিলের পাশের গ্রামের লোক। জামিলের লাশ পৌঁছে দিতেও সে সাহায্য করেছে।

৩/

বেশ কিছুদিন পর...

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেলো সাবেরের। সে মনে মনে একশ এক টা গালি দিয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। মাধবী দাঁড়িয়ে আছে, মৃত জামিলের স্ত্রী।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:২৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×