- দোস্ত, এই বর্ষায় এবার বিয়েটা করে ফেল।
- না রে দোস্ত আনোয়ার, এখন না, ঝড়টা থামুক।
- এতো রিমঝিম বৃষ্টি। ঝড় পাইলি কই?
- বিবাহ বিচ্ছেদের ঝড়।
- ওহ, এই কথা। এই ঝড়তো চলছে সেলিব্রেটিদের মধ্যে।
- কেন? আমাকে তোর সেলিব্রেটি মনে হয় না? ফেসবুকে আমার হাজারের উপরে ফ্রেন্ড। কত লাইক আর সুন্দর সুন্দর কমেন্ট পাই, দেখিস নাই তাইনা?
- ও বুঝেছি, তাহলে তুইও সেলিব্রেটি। তাহলে তোরও বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ প্রায় আসন্ন।
- ভুলভাল বকিস না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এবছরের এই সাত মাসেই ৪৮০টা বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়েছে, তাঁরা কি সবাই সেলিব্রেটি নাকি?
- আসল সেলিব্রেটি নয়, তবে তাঁরা তোর মত সেলিব্রেটিতো বটেই।
- আচ্ছা, বাদ দে এসব কথা। এই বর্ষায় তোর সংসার কেমন চলছে বল?
- ভাল না রে। বর্ষায় তুমুল বৃষ্টির মতো আমার মনেও অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে। মনে হয় সম্পর্কটা আর টিকবে নারে।
- কেন! কয়েক মাস আগেই না বিয়ে করলি! তুইতো সেলিব্রেটি নস, তাহলে তোর সংসারে ভাঙ্গন কেন?
- আমি সেলিব্রেটি নাহলে কি হবে, তোর ভাবিতো নিজেকে সেলিব্রেটিই মনে করে। অনেকটা তোর মতোই, তবে তোর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি।
- বলিস কি!
- আমি নাকি খেত। আমার সাথে তাঁর নাকি ঠিক যায় না। আমি নাকি ম্যাচিং বুঝি না, ফ্যাশানেবল নই, হ্যান্ডসাম নই। আরও নাকি অনেক বিষয় আছে সেগুলো মেনে নিতে পারছেনা, আর ভবিষ্যতেও পারবেনা। আর তাঁকে পোষার মতো নাকি আমার ক্ষমতা নাই...
- মহাবিপদ! ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিস কিন্তু।
- আমি কি সিদ্ধান্ত নিবো! যদি সিদ্ধান্ত নিতে হয় সে নিবে।
- আচ্ছা অনু, বাদ দে ওসব কথা। চিন্তা করিস না দেখিস সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
- দেখ, আমার আনোয়ার নামটা তুই কত সুন্দরভাবে ‘অনু’ বলে ডাকিস। আর আমার বউ খালি ‘আনো’ ‘আনো’ করে।
- ভালোতো, বেশি বিকৃতিতো করেনি। শুধু আনোয়ার-এর ‘য়ার’-টা বাদ দিয়ে আদর করে ‘আনো’ করে ডাকছে। তোর সমস্যা কি!
- ভালো না ছাই! প্রথম মাসটা আমিও তোর মতোই মনে করেছিলাম। কিন্তু তারপর থেকেই আসল অর্থ বুঝতে পারছি।
- কি বুঝলি শুনি?
- জামাকাপড়, শাড়ি, গয়না, কসমেটিকস কিংবা অন্যকিছু আনতেই শুধু ‘আনো আনো’ বলে। এটা আনো, ওটা আনো। রাস্তার মোড়ের দোকান, বাজার, মার্কেট, সুপার মার্কেট, শপিং মল কোনো জায়গা বাদ নাই যে জায়গায় আমারে আনতে পাঠায় নাই।
- দোস্ত, তুই মনে হয় ক্ষেপে যাচ্ছিস।
- ক্ষেপী নাইরে দোস্ত। একটু হালকা হইলাম আরকি। আমার নামটার যে কেউ এভাবে ফায়দা নিতে পারে আগে কখনও ভাবি নাই।
- দোস্ত কিছু মনে করিস না। মনো পাগলীর কথা তোর মনে আছে না? পাগলী মানুষ কখন কি বলে ঠিক নাই! আর ভাবির নামতো মনোয়ারা তাইনা। যখন ভাবি তোকে কিছু নিয়ে আসতে ‘আনো আনো’ বলে ডাকবে, তুইও ঠিক তখন মনো পাগলীর কথা মনে করে ‘মনো মনো’ করে ডাকবি। ভাবি ভাববে তুই বুঝি আদর করেই ডাকছিস। তোদের মধ্যে ভালোবাসা জন্ম নিলে দেখবি জিনিসপত্র কেনার চাপ কমে যাবে।
- আর ফেসবুক-ইন্টারনেট এসব ক্যামনে বন্ধ করবো?
- ভাবিকে বলবি চাকরীর জন্য পড়াশুনা করতে। আর ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডের দোকানে বলবি, বাসা চেঞ্জ করবি, তাই আর সংযোগটা বিচ্ছিন্ন করে দেন। আর পেপারওয়ালাকে বলে দিবি বাসায় একটা দৈনিক পত্রিকা দিয়ে যেতে। ইন্টারনেটের এ্যাভেইলেবিলিটি না থাকলে বাইরের খবর জানতে পেপার পড়বে।
- বেশ বলেছিস দোস্ত। এ্যাপ্লাই করে দেখি। ইন্টারনেট লাইন না থাকলে মোবাইল ডাটা অন করে ফেসবুক চালায় যদি?
- শোন, আগে সংসার বাঁচা। সংসার টিকলে পড়ে স্মার্টফোন-মোবাইল-ইন্টারনেট এসব কোনো বিষয় নয়। তবুও যদি সংসার না টেকে তাহলে বুঝে নিবি, ভাবি স্বাবলম্বী এবং সচেতন একজন মানুষ। তিনি নারী হয়ে তাঁর আইনি অধিকার খাটিয়েছেন। তবে তুই রবীন্দ্রনাথ ভুলে যাসনা, মনে আছে না- “রাজা, ভুল করছ এই, যে, ভাবছ জগৎটাকে কেড়ে নিলেই জগৎ তোমার হল। ছেড়ে রাখলেই যাকে পাও, মুঠোর মধ্যে চাপতে গেলেই দেখবে সে ফসকে গেছে।”
- ঠিক তাই বন্ধু। রবীন্দ্রনাথে গানে তাই বলা যায় -
“ভাবছো, হবে তুমি যা চাও,
জগৎটাকে তুমিই নাচাও,
দেখবে হঠাৎ নয়ন মেলে
হয় না যেটা সেটাও হবে।”
(বিঃদ্রঃ চরিত্রগুলো কাল্পনিক, তাই কারও সাথে নামের মিল থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আর ছবিটি গুগোল থেকে নেয়া হয়েছে)