somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তাঝুঁকি ও অনিয়ম : কারারক্ষী, কারাবন্দী ও আমরা

২৯ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের নিজেদের মধ্যে কেউ অপরাধ করুক, কিংবা অপরাধী হলেও তাঁকে জেলে যেতে হোক তা আমরা কেউ চাই না। যখন কারা কর্তৃপক্ষই জানান যে, ‘কারাগারে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে, নিরাপত্তাঝুঁকি তো আছেই’, তখনতো শত্রু হলেও তাঁর কারাবাস আমরা প্রত্যাশা করিনা। আর সেই জেলখানা যদি হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার তাহলেতো কথাই নাই।

কারাগারে কেন এই শঙ্কা আর ঝুঁকি সেটা একটু দেখা যাক। ‘ভবন থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। সামান্য বাতাসে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ছে।’ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত নতুন নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার চালু হওয়ার মাত্র একটি বছর সম্পন্ন হয়েছে, তাতেই দেয়াল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে, কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে যাচ্ছে, কারা চত্বরে নিরাপত্তার জন্য রাখা বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়ছে, তাও বলে হালকা ঝোড়ো বাতাসেই!

এরই মধ্যে দশটি খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে। তারমধ্যে তিনটি খুঁটি রিপ্লেস করার কথা জানা গেছে। তবে জেনে রাখা ভাল, কারাগার চত্বরে বৈদ্যুতিক খুঁটি আছে মোট ২৬০টি। অতএব কারাবন্দী বা কারারক্ষীদের যে যেখানে থাকেন না কেন তাঁদের অতিরিক্ত সাবধানে থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে খুঁটি যেন মাথায় ভেঙ্গে না পড়ে। বিশেষ করে ঝড়ের দিনে!

জানিনা কারাগার চত্বরে আমগাছ-জামগাছ আছে কিনা। ঝড়ের দিনে কারও যদি পল্লীকবির ছড়া আওড়াতে আওড়াতে আম-জাম কুঁড়াতে ইচ্ছে করে আর জায়গাটাকে মামার বাড়ি মনে হয়, তাহলে সে একটু সুর করেই গাইতে পারে - ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুঁড়াতে সুখ; পাকা জামের শাখায় উঠি, রঙিন করি মুখ! কিন্তু সাধুকে বিশেষ সাবধান হতে হবে, খুঁটির আঘাতে মাথা যেন রঙ্গিন হয়ে না যায়, তাহলে আবার জীবন সাদা হয়ে যাবে!

‘বন্দীদের দুটি ভবনের জানালা-দরজা ঠিকমতো লাগানো যায় না। কিছু দরজা বাঁকা হয়ে গেছে।’ অপরাধী হিসেবে বন্দী তাঁরা হয়েছে ঠিকই, প্রাইভেসি না থাক তবুও নিরাপত্তা বলেতো কিছু আছে তাইনা। এমনিতে বৃষ্টিবাদলের দিন, জানালা দিয়ে বৃষ্টি ঢুকে ঘর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে! আর শীত আসলে কি হবে তাহলে! ঠাণ্ডায়তো অবস্থা কাহিল হয়ে যাবে নিশ্চয়। আর দরজা বাঁকা হতে হতে সেগুলোও যদি আর লাগানো না যায় তাহলে কি কোনো নিরাপত্তা থাকলো? দরজা না লাগা বন্দীদের জন্য ভাল হলেও, নিশ্চয় নিরাপত্তা রক্ষীদের জন্য ভাল নয়।

‘বন্দীদের সাক্ষাৎকার ঘর খুবই অপ্রশস্ত। সেখানে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি কথা বলতে থাকলে তা ঠিকমতো শোনা যায় না।’ এক বন্দী ব্যক্তির সাথে তার স্বজনরা প্রতিদিনতো দেখা করতে যান না, মাঝে মাঝে যান, তাও বিশেষ কোনো সংবাদ জানাতে বা মামলা প্রক্রিয়ার আপডেট জানাতে, অল্প সময়ে অল্প কিছু কথা বলতে সেটাও যদি ঠিকভাবে না হয় তাহলে কেন দেখা করার সিস্টেমটা রাখা!

‘কারারক্ষী ব্যারাকের জানালা ভেঙে পড়েছিল, সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। মাস দুয়েক আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনটি আবাসিক ভবনে ঢোকার তিনটি লোহার গেট ভেঙে পড়েছিল। সেগুলো গণপূর্ত অধিদপ্তর মেরামত করে দিয়েছে।’ কারারক্ষীদের ব্যারাকের এই অবস্থা হলে আর নিরাপত্তা কোথায়! নাকি নিরাপত্তাটাও মেরামতের বিষয়?

‘১৯৪ একর জমিতে এই নতুন কারাগার স্থাপনা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪০৬ কোটি টাকা। এই স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্বে ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর। কারাগারের ৩০টি ভবন নির্মাণ করেছে ২০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আরও নয়টি ভবন নির্মাণাধীন। কারা অধিদপ্তর দুই দফা পরিদর্শন করে প্রথমে ৭২ ধরনের এবং পরে ৩৬ ধরনের ত্রুটি ও সমস্যা চিহ্নিত করে।’ এতো কিছুর পরেও স্থাপনা নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে কিনা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চাইলে, জানানো হয়, ‘তদন্ত করছি, শেষ হোক তারপর বলতে পারব কী কী অনিয়ম হয়েছে।’

নতুন কারাগারে বর্তমানে বন্দী আছেন প্রায় সাত হাজার। সে যাইহোক, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণে তদন্ত রিপোর্ট না পেলেও এত্তো অনিয়মের আভাস পেয়ে এখন যেন নিজেরেই অপরাধী মনে হচ্ছে। ফাঁসিতে ঝুলতে ইচ্ছে করছে। গাইতে ইচ্ছে করছে; ‘একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি। হাসি হাসি পরবো ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।’ এবার শুনি ‘ফাঁসির মঞ্চে ওঠার সিঁড়ি এত খাড়া ও অপ্রশস্ত যে তার ওপরে ওঠা যায় না।’ তাহলে কি ঠিকভাবে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ারও ব্যবস্থা নাই! মরে কি শান্তি হবে? না, মনে হয় না। যা শালার – মরেও শান্তি নাই!


(ছবি ও সংবাদের উৎস - প্রথম আলো)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×