এক দুষ্টু ছেলের মিসকলের যন্ত্রণায় বিরক্ত ও অতিষ্ট এক ভদ্রলোক । তিনি এই বিরক্ত থেকে বাঁচতে এক পর্যায়ে নিজের নাম্বারটি পরিবর্তন করে ফেললেন। তিনি হয়ে গেলেন পুরাই মিসকলমুক্ত, তাঁর জীবনে নেমে এলো শান্তি আর শান্তি। এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর একদিন অতি উৎসাহী হয়ে নিজে কতটা সুখে আছেন তা প্রকাশ করতে, আর মিসকলদাতা কতটা যন্ত্রণায় আছে তা অনুভব করে তিনি নতুন নাম্বার দিয়েই কল দিলেন ওই মিসকলদাতাকে। তিনি মনের আনন্দে প্রথমে কিছুক্ষন গালি দিলেন, আর শেষে ভদ্রভাবে বললেন, শালা - নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলছি, এবার কেমনে মিসকল দিবি?
পরবর্তীতে ওই শালা তার দুলাভাইয়ের সাথে আবারো দুষ্টামি করেছিলো কিনা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এদেশে মোবাইল ব্যবহার যখন মাত্রই সাধারন মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছিল, মোবাইল অপারেটরগুলো মিনিট প্রতি সাত টাকা করে কাটছিলো, তখন মিসকল ছিল বেশ জনপ্রিয়, আর এই কৌতুকটা তখনকারই। এখনও এমন ঘটনা ঘটে অহরহ, তা নিজের সাথে না ঘটলেও অন্যের সাথে যে ঘটে তা আমরা জানি।
নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো, তেমনি অন্যের ভাল কাজ নিজের বলে চালিয়ে দেয়ার উদাহরণ আমরা সবাই দেখেছি। ঠিক তেমনি তার উল্টোটা যদি ঘটে তাহলে তা কি কোনো দোষের বিষয়! আমার মনে হয় না।
ফেসবুকে সবকিছু প্রকাশ করা যায় না। মানুষ দিন দিন মনুষ্যত্ব হারাচ্ছে, তাই চোখে চোখ রেখে অর্থাৎ ফেস টু ফেস কথা বলতে পারে না, লজ্জা পায়, তাই ফেসবুকের মাধ্যমে কথা বলে। এ নিয়ে আমার প্রিয় গায়ক নতিকেতা রিসেন্টলি ‘ফেসবুক’ নামে একটি গান প্রকাশ করেছেন। বরাবরের মত এটিও আমার বেশ ভাল লেগেছে।
কথাগুলো এরকম-
এমন কিছু অনুভূতি গতি প্রকৃতি
যা ফেসবুকে শেয়ার করা যায় না।
বৃষ্টি হলে ঠিক কেমন লাগে,
একলা ঘরে কুকড়ে শুয়ে
জ্যোৎনা আলো পড়ছে ছুঁয়ে
কম্বলেতে একা স্বপ্ন অনুরাগে।
ঠিক কেমন লাগে?
আজ ডা: রাশেদ আমীন মারা গেছেন। তিনি ছিলেন হার্টের ডাক্তার, অথচ তিনি নিজেই মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে হার্ট এ্যাটাকে মারা গেলেন। গুলশান আজাদ মসজিদে তাঁর জানাজায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। জোহরের নামাজের আগে একব্যক্তিকে আরেকব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে শুনলাম - ডা: রাশেদ আমীনের লাশ কি এনেছে? জীবিত থাকলে নিশ্চয় এ কথা আর একটু শ্রদ্ধাভরে বলতেন। সে যাইহোক, মারা গেলে ব্যক্তির কিছুই করার থাকেনা, ওনাকে অন্যেরাই ওঠায়, গোছল করায়, শোয়ায়, নামের সাথেও মরহুম যুক্ত করে দেয়। নামাজ শেষে যে কয়জন মরহুম ডা: রাশেদ আমীনকে দেখেছেন, তাঁদেরেই একজন বলেছেন, অপূর্ব, হাসি হাসি মুখ নিয়ে যেন ঘুমিয়ে আছেন। মাসআল্লাহ। আল্লাহ ওনাকে বেহেস্ত দান করুন।
আজ সাংবাদিক মুন্নি সাহাকে দেখলাম বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় গিয়ে রিপোর্ট করেছেন। এক বয়স্ক লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। সেই বৃদ্ধ নিজেকে বার বার রোহিঙ্গা মুসলমান বলে পরিচয় দিচ্ছিলেন। ফিরতে চাচ্ছিলেন নিজের দেশ বার্মায় (মিয়ানমারে)। তাঁরা বাংলাদেশে থাকতে চায়না, নিজের দেশের সেনা-পুলিশরা তাঁদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, মানুষদের গুলি করে আর কেটে মেরে ফেলছে। তাই জীবন নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। তবে তাঁরা বাংলাদেশের বোঝা হতে চায় না।
তাঁদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের মাটিতে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। খাবার-দাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে। ভিটে হারানো মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁদের নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ তাঁর সীমান্তে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ প্রশংসাও পাচ্ছে। আশাকরি আন্তর্জাতিকভাবে মায়ানমারের মগদের (সেনাবাহিনী) ঠান্ডা করা হবে।
কবরের মত করে খুরে দুইজন মানুষকে শোয়ায়ে প্রথমে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর দাজ্য তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করা হয়। এমন একটি ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। তবে মানুষের প্রতি মানুষের এমন বর্ববরতা বড়ই দু:খজনক। মগদের এমন নিষ্ঠুরতম নির্যাতন কি মগদের উপর চালালে তারা সহ্য করবে? যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, তাঁরা বলছেন - সেখানে রীতিমত যুদ্ধ হচ্ছে। একাত্তরে বাংলাদেশে যেমন হয়েছিল। কখনও কখনও তারচেয়েও ভয়াবহ। পাকিস্থানি হানাদাররা যেভাবে বাংলাদেশের অসহায় নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছিল, যন্ত্রণাময় মৃত্যুর হাত থেকে বাদ যায়নি কোলের শিশুও, রেপ করেছিল অসংখ্য নারীকে, তেমনটি বর্তমানে মায়ানমারেও চলছে। সেখানে যুদ্ধ চলছে, পুরাই যুদ্ধ। স্বপ্ন দেখি আর একটি প্রান যাওয়ার আগে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে। রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
রাজা দেয় প্রতিশ্রুতি হ্যান গারেগা -ত্যান গারেগা
কারেগা কচু, আসলে শালা পকেট ভরেগা।
নচিকেতার ‘উল্টো রাজার দেশে’ গানের একটি কলি। শোনা যাচ্ছে মায়ানমারে এমন গণহত্যা চালিয়ে একটি শ্রেণি লাভবান হতে চাচ্ছে। ব্যবসা করছে। এতে চীন মায়ানমারকে সমর্থন করছে। আরে বাপ, মানুষতো মানুষই, চীন সমর্থন দিচ্ছে বলে মায়ানমারে অবস্থিত মুসলমান রোহিঙ্গাদের কচুকাটা করে মারতে হবে, গুলি করে হত্যা করতে হবে, নারীদের সম্ভ্রম কেরে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করতে হবে, শিশু কিশোর কেউ কি মৃত্যু থেকে রেহাই পাবে না?
চীন বড় দেশ আমরা সবাই জানি, মায়ানমারও বাংলাদেশের তুলনায় বড়। কিন্তু কত বড় জানেন? দিগুণ বলবেন নাকি তিনগুণ বলবেন, পাঠক আপনি বলুন। মায়ানমার ৬৭৮,৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। আর জানেনইতো বাংলাদেশ ১৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার! আর জনসংখ্যার কথা কি বলবো, শুধুমাত্র ঢাকা আর রংপুর বিভাগেই মায়ানমারের মোট জনসংখ্যার বেশি লোক বাস করে। সেখানে এখনও ৪৯ ভাগ জমিতে গাছপালা রয়েছে। আর এবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জানানো হয়েছে বাংলাদেশে মাত্র সাত ভাগ জমিতে গাছপালা রয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের দেশেতো রোহিঙ্গাদের রাখার ব্যবস্থাই নাই, তবুও জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় দিয়েছি। ছোট দেশ হলেও বড় মনের পরিচয় দিয়েছি। আর ওরা এতো বড় দেশ হয়েও নিজের দেশের মানুষকে মেরে ফেলছে, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। আজতো আরও ভয়াবহ খবর শুনছি, কয়েক মাইল পথ কয়েকদিন ধরে হেটে যেসমস্ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছে তাঁদের পথেও মগরা মাইন (বোম) পুতে রেখেছে!
যখন কোনো মানুষ অন্য কোনো অবাধ্য মানুষকে বাধ্য করতে পারেনা, ব্যবস্থা নিতে পারেনা, তখন তাঁর উচিৎ আল্লার হাতে ছেড়ে দেওয়া, আর নিজে ধৈর্য্য ধরা, সবর করা। ঐ অবাধ্য লোককে আল্লাহ নিজেই শাস্তি দিয়ে দেন, ঠান্ডা করে দেন অথবা ধ্বংস করে দেন। এটা শুধু মানুষ নয়, জাতির ক্ষেত্রেও। যে চীনের সাপোর্টে আজ মায়ানমার সেনাদের এমন দাপট, সেই দাপট চূর্ণ হতে বেশি সময় লাগবে না। সেনারা ভুলে গেলে চলবে না, পূর্বে তাদের দেশের সাথে চীনের কেমন সম্পর্ক ছিল।
অনেক কথা বললাম, মন খারাপ হয়ে গেলো মনে হয়, অযথা উত্তেজিত হবেন না, যার কাজ তাঁকেই করতে দেন। অপ্রাসঙ্গিক একটি একটি কৌতুক দিয়ে আজকের আলোচনা শেষ করি।
বাতেন ভাই শান্তিপ্রিয় মানুষ। ভাবী যেন তাঁর চেয়েও খানিকটা বেশি শান্তিপ্রিয় । তাঁদের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। বাতেন ভাই একটু একটু লেখাপড়া জানেন। তবে তাঁর বড় গুণ হলো মনের মধ্যে প্যাচগোজ নাই। তাঁর অভাবের সংসার হলেও সেখানে সুখের অভাব নেই। তাই তিনি মাঝেমাঝে ভাবেন নোবেল শান্তি পুরস্কারটা তাঁর বউয়েরই প্রাপ্য। তিনি একবার শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার পথে বিপদে পড়লেন, এমনটি আগে কখনও ঘটেনি, যাহোক - যাত্রীদের নাম-পরিচয় লেখার জন্যরেলের টিকেট কাউন্টার থেকে একটি ফরম দেয়া হয়েছে। বাতেন ভাই কোনো রকমে প্রথমে তাঁর, পরে বউয়ের ও ছেলের নাম লিখলেন। আর লিঙ্গের ঘরে যথাক্রমে লিখলেন - আছে, নাই ও ছোট!