somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই বসন্তের কুহুতান ও স্বপ্ন

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কি আর করা যাবে! “বসন্ত এসে গেছে। বসন্ত এসে গেছে” – ফজরের নামাজের কিছুক্ষণ পরে এমন গানে জোরেশোরে টের পেলাম বসন্ত এসে গেছে।
হলুদ ও লাল কম বেশি সবার প্রিয় রঙ। এসময়ে এসে এদুটো যাদের প্রিয় রঙ নয়, এমন মানুষ পাওয়া একটু কঠিনই বটে। লাল-হলুদ ছাড়াও চারদিক কত রঙ যে খেলা করে তার হিসেব নেই। বসন্ত বলে কথা!

আম্মা ছোট বেলায় বলতেন, আমি নাকি আরো ছোটতে লাল ছিলাম। পরে বড় হয়ে বুঝেছি, ছোট বেলায় সবাই লালেই থাকে, আসল গায়ের রঙ বের হয় পরে, বড় হলে। বড় হওয়া মানে, ভালোভাবে পড়াশুনা করে এমন একটি পেশা বেছে নেওয়া, আর নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করা, যাতে পরিবার ও সমাজের জন্য সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জিত হয়। যার যত সম্মান মূলত সেই বেশি উজ্জ্বল, সেই ফর্সা, সেই আসল লাল!

আমাদের সমাজের লাল অবশ্য কয়েক ধরণের, কেউ দুর্নীতি করে লালে লাল হয়, কেউ লস খেয়ে ব্যবসায় লালবাতি জ্বালায়, আর কেউবা লজ্জায় লাল হয়। সেই লাল যখন ললনার রুপে গড়িয়ে যায়, তখন অনেকে নিজেকে লাল মরিচের সাথে তুলনা করেন, আর হয়তো মনে মনে গাইতে থাকেন, “আমি দেখতে লালে লাল, রুপে গোলমরিচের ঝাল!”

শোষক ইংরেজদের লাল মুখো বাঁদর বলে গালাগাল করতো ভারতবর্ষের মানুষ। এখন যুগ পাল্টিয়েছে, অনেক অনেক আন্দোলন করে সার্বভৌমত্ব লাভ করেছি, স্বাধীন হয়েছি। তাই এখন রঙ দিয়ে গাল লাল করা আমাদের স্বাধীনতা। মেয়ে কিংবা ছেলে এখন সবাই সাজে। মেয়েদের সাজের তুলনা হয়না, তাঁদের তুলনা তাঁরাই। আমি তাঁদের সাজের বিরোধিতাও করছি না। তাঁরা সাজুক, আরো বেশি করে সাজুক, তাঁদের সাজলে আরো সুন্দর লাগে। সত্যিকারের সুন্দরী মনে হয়। লাল-হলুদ শাড়িতে আরও সুন্দরী লাগে। লাল লিপস্টিক, লাল টিপ, লাল চুড়িতে তাঁদের মাঝে যেন অপ্সরা নেমে আসে। অপ্সরা দেখিনি কখনো, বেহেস্ত না গেলে দেখাও হবেনা, তবে তাঁদের দেখে মনে হয়- অপ্সরা এমনই হবে হয়তো!

চারদিক সাজ সাজ রব। প্রকৃতি সেজেছে মানুষের রঙে। আর মানুষ প্রকৃতির সেরা আজব সৃষ্টি। আজ এক কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে দেখেছি, মা-মেয়ে দুজনেই একসাথে ছিলেন, দুজনেই সেজেছেন। সেই রকম সাজ! মুখের দিকে তাকিয়ে একেক সময় একেকজনকে বেশি সুন্দরী মনে হচ্ছে। মেয়েটির মুখটায় পুরোই হলুদ আভা, আর মা-টার লাল। আমার চমক ভেঙেছে তাঁদের হাত ও পায়ের দিকে তাকিয়ে। তখন মনে হয়েছে, ইস, যদি আর একটু সময় পেতো- হাত আর পায়েও রঙ মেখে নিতে পারতো, তাহলে আমার চমকটা ওভাবে ভাঙতো না!

গতকাল সকালে বাংলাদেশ বেতারে প্রিয় গান-গল্প অনুষ্ঠানে শুনছিলাম, “বসন্ত বাতাসে সইগো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।” গানটি বরাবরের মতই ভাল লাগলো। সেই ভাললাগা দিয়েই দিনটি শুরু করলাম, কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। নিজের বাসা থেকে বের হতেই কানের মধ্যে সামনের পুরাতন বাসা ভাঙ্গার কাজের শব্দ শোনার সাথে সাথে ধুলা ও উৎকট গন্ধ নাকে এসে লাগলো। একটু এগুতে না এগুতেই রাস্তার মোড়ে ডাস্টবিনের পাশে গড়ে ওঠা পাবলিক টয়লেট থেকে গন্ধ এলো, আরো এগিয়ে বনানী কাকলীতে সেই একি গন্ধ, সাথে পরিস্কার করার নিমিত্তে সপ্তাহ দুয়েক ধরে থাকা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের কালো ময়লা-আবর্জনা।

বিকেলে গেলাম মিরপুর ১০ – সেখানেও সেই গন্ধ, সন্ধ্যায় গেলাম মিরপুর ১২ তবুও সেই গন্ধ। সেই গন্ধ বাদ পরেনি কচুখেত আর মিরপুর ১৪ তেও। কিছুদিন আগে গিয়েছি পুরান ঢাকা, মগবাজার, আগারগাও তবুও পেয়েছিলাম সেই গন্ধ। গন্ধে মাথা চক্কর খায়, বমি আসতে চায়, দম প্রায় বের হয়ে যায়, তবুও চোখ খোলা রেখেই পথ চলতে হয়।

শহর উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে বারোমাস, ড্রেনের নোংরা পানি থেমে থাকে না, টিভি চ্যানেলে সেসব দৃশ্য ব্লার করে দেখানো হয়েছে, তবুও বুঝতে কিছুই বাকি থাকেনা দর্শকদের। কোন মাসে উন্নয়ন কাজ শেষ হবে, সব তিনিই জানেন! এটাও কি সেই অমর বানীর মত, শিক্ষার কোনো শেষ নাই, তেমনি উন্নয়নের কোনো শেষ নাই!

তবুও এমন দিনে নিরাশ হতে ইচ্ছা করে না। স্বপ্ন দেখি সত্যিকারের লাল-হলুদ ফুলে প্রস্ফুটিত হয়ে থাক চারপাশ আর সুগন্ধ ছড়াক, সবাই হাসুক, গান গাক, ভেদাভেদ ভুলে যাক - এমন দৃশ্যই দেখতে চাই। আর এমনটি দেখলে আমিও গাইতে থাকবো- থাক তবো ভুবনের, ধুলি মাখা চরণে, মাথা নতো করে রবো – বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।

তখন প্রিয়জন নীলাম্বরীও সাজবে প্রকৃতির সাজে, গুটিগুটি পায়ে হাঁটবো আর হাত ধরে বলবো – এই বসন্তের অনেক জন্ম আগে, তোমায় প্রথম দেখেছিলেম আমি, হেঁটেছিলেম নিরুদ্দেশের পাণে, সেই বসন্ত ভীষণ দামি এখন আমার কাছে, তোমার কাছে, আমার কাছে। বসন্ত এসে গেছে। বসন্ত এসে গেছে।।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×