বড্ড পরাধীন মনে হয় নিজেকে, মন তাই স্বাধীনতা খোঁজে। অবাক করা একটা বিষয়, এ সময়টাতে হাসতেও কষ্ট হয়! শুষ্ক আবহাওয়ায় এমনিতেই ঠোঁট, হাত-পা চরচর করতে থাকে, আবার হাসতে গেলে না জানি কোনদিকে চড়াত করে ফেটে যায়!
শুরু হলো অগ্নি ঝরা মাস, মার্চ মাস। এ মাস স্বাধীনতার মাস। আসলে এ মাস হলো বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুদ্ধ শুরুর মাস। চারদিকে ধুলা আর ধুলা, তবে গাছে গাছে নতুন পাতার জন্ম হয়, দেখা দেয় আমের মুকুল। কোথাও কোথাও কোকিলের ডাকও শোনা যায়। তবুও কোথায় যেন একটা শূন্যতা। স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। কোথাও কেউ ধরে নেই, নেই কোনো বাধা, তবুও..
বর্তমানে বিশ্বটি কয়েকজন পাগল প্রেসিডেন্ট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সেসকল প্রেসিডেন্ট তাঁদের কাজের জন্য বা তাঁদের কথার জন্য প্রায় আলোচিত হন, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। তিনি জনসমক্ষে বলেছেন, তিনি মাসে যা বেতন পান তাতে তাঁর সংসার চলছে না। তিনি পান মাত্র ৩ হাজার ৮৬০ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় তিন লাখ টাকার কিছু বেশি, তাই আগামী বছর থেকে দ্বিগুণ বেতন গ্রহন করবেন। তাহলে ওনার সংসার চলবে বলে আশা করছেন। দেখা যাক আগামী বছর আসুক!
দুতার্তে এক দেশের প্রেসিডেন্ট, ওনার সকল সুযোগসুবিধার খরচ সরকার বহন করে তবুও সংসার চলে না, আর আমার আমিই সব, সুযোগসুবিধা দূরের কথা, নিজের অধিকারগুলিই নিজেকে পূরণ করতেই হিমশিম খেতে হয়, তাহলে আমার চলবে কি করে চিন্তা করি! বেতনের কথা জনসমক্ষে তুললাম না, যাইহোক চিন্তার অবস্থা ভয়াবহ নাজুক!
নায়ক টম ক্রুজের মত চেহারা যে প্রধানমন্ত্রীর, আর যিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল, ঠিকই ধরেছেন তিনি হলেন জাস্টিন ট্রুডো। কয়েকদিন আগে তিনি ভারতে এসে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানকার বিভিন্ন রাজ্যের কালচারের সঙ্গে মিশে যেতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু ভারত তাঁকে অবজ্ঞা করেছে বলে যেসব সিমটম দেখা গেছে বা খবর ভেসে বেড়াচ্ছে সেসব মোটেও উড়িয়ে দেয়ার মত নয়। যাহোক অন্যে যা করে করুক, ট্রুডো তাঁর হাসিমুখ কখনও বেজার করে রাখেন নাই, ওনার কাছে এমন শিক্ষাটা ব্যক্তিজীবনে হোক আর রাষ্ট্রীয় ভাবেই হোক, তা কম শিক্ষা নয়।
একের পর এক সদস্য হোয়াইট হাউজ থেকে পদত্যাগ করছেন, তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের এক কথা, হোয়াইট হাউজ একজন বিচক্ষণ ব্যক্তিকে হারালো। কিন্তু তিনি অনড়। আমেরিকাসহ অনেক দেশের অনেকেই অধিক আগ্রহে এটাই দেখতে চাচ্ছেন যে – ট্রাম্প সাহেব কবে পদত্যাগ করবেন!
শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচির দেশের গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত প্রায় আট লাখ মানুষকে বাংলাদেশে জায়গা দিয়ে গরীব দেশ হয়েও বিশ্বে উদার রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শান্তিতে নোবেল জয়ী দুজন মহিলা এসে রোহিঙ্গাদের জীবন কাহিনী শুনে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। সুচিকে বিশেষ করে অনুরোধ করছেন, রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কে শোনে কার কথা! অন্যদিকে ঐসকল রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর খেত খামার গাছপালা সবকিছু বুল্ডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। বেশি বেশি কোনোকিছুই উপরওয়ালা সহ্য করেন না। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা মায়ানমারের দিকে কিংবা সুচির দিকে তাকিয়ে বলতে পারি, আমার আল্লাহ্ই করবে তোমার বিচার।
যারা বয়সে ও অভিজ্ঞতায় বড় তাঁদের জিজ্ঞেস করেছি, আমাকে স্বাধীন হওয়ার উপায় বাতলে দিন। ওনারা যা বলেছেন তার সারমর্ম হলো এই – বিশাল আকারের পরাধীনতার মধ্যে থাকাটাই হলো বড় স্বাধীনতা। তবুও যদি স্বাধীন মনে না হয় তাহলে প্রথম লাইনটিতে অভ্যস্ত হওয়া।
জ্ঞানের জন্য পড়ুন, পড়ুন আর পড়ুন। অবশ্যই ভাল কিছু পড়ুন, যাতে আপনার জ্ঞান দিনকে দিন বৃদ্ধি পায়। সেই জ্ঞানেই এনে দিবে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। যদিও সেই স্বাধীনতা বৃহৎ কোনো পরাধীনতার বলয়ের দিকে ধাবিত করবে। তবুও জায়গা পরিবর্তনও স্বাধীনতার আরেক রুপ।
আমরা সকলে উন্নতির জন্য পরিবর্তনে বিশ্বাসী, স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তাই স্বাধীনতাকে লক্ষ্য করে নিজের ইচ্ছাকে পুঁজি করে এগিয়ে চলতে হয়, তা নাহলে মুখ থুবড়ে পরে থাকতে হয়। তাই এগিয়ে যেতে হবে, বলয় চেঞ্জ করতে হবে, তবেই না স্বাধীনতা মিলবে, অতঃপর মুক্তি। জীবনে যদি সেই মুক্তি না মিলে, তাহলে সংসার চলবে কিন্তু মন চলবে না। মন এক আজব জিনিস ভাই, স্থান যাইহোক এর গুরুত্ব হারানো কখনও ঠিক নয়।
অনেক কিছুই বলা হলো, কিছু মনে করবেন না যেন। মার্চের শুভেচ্ছা রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯