বড় বড় মানুষের বড় বড় চিন্তা ভাবনা, সেসব চিন্তা ভাবনা ছোট মানুষের (আমজনতা) মাথায় কুলায় না, অর্থাৎ বড় মানুষের সব চিন্তা ভাবনা বা কাজ কারবার সাধারনের সবসময় ঠিকমত বোধগম্য হয়না। সাধারন মানুষ আশায় থাকে একটুখানি ভালো থাকার। তারা আশায় আশায় দিন কাটায় আশা পূরণ হয় না। তাতে বড়লোকের কিচ্ছু এসে যায় না, তাঁদের সুখে থাকার নানান বন্দোবস্ত তাঁরা করে নিয়েছে, আর প্রতিনিয়তই নিচ্ছে, তাঁদের সম্পদ দেশের গণ্ডী পেরিয়ে এখন সচরাচর বিদেশেই যায়। যাক সেসব এখন পুরান কথা।
দেশে উন্নতির জোয়ার একথা অস্বীকার করার কোথাও কেউ নেই। স্বাবলম্বী সবাই হতে চায়, হচ্ছেও তাই। স্বাবলম্বী হয়ে অনেকেই সুখী। গরীবের এই সুখ। কিন্তু সকল শান্তি ওই বড়লোকের ঘরে। শান্তি যেখানে বেশি সেখানে প্রাচুর্যও বেশি, কিন্তু সেখানে বেশি মানুষের আনাগোনা কম। মাত্র শতকরা পাঁচ শতাংশ মানুষ বাকি পঁচানব্বই শতাংশ মানুষের সম্পদের সমান সম্পদ ভোগ করে। যাহোক সবই আল্লাহ্র ইচ্ছা। তিনি সবার রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন, এ বিশ্বাস আমাদের মনে প্রানে অটুট রাখতে হবে। তিনি যাকে ইচ্ছা দেন, আবার কেড়েও নেন।
যাহোক, আমজনতার কথায় আসা যাক, কিছুদিন আগে রাজিব নামের কলেজ পড়ুয়া ছাত্রটি দুইবাসের ঠেলাঠেলির মাশুল গুনতে গিয়ে প্রথমে এক হাত হারালো, আর পরবর্তীতে তাঁর নিজের জীবনটাই হারালো! মহামান্য আদালত নির্দেশ দিলেন, অপরাধী দুই বাস মালিক কর্তৃপক্ষ (বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন)-কে রাজিবের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জানিনা এই একমাস কয় মাসে গিয়ে ঠেকবে। তবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আদালতের স্থগিতাদেশ কার্যকরী হয়েছে অল্প সময়ের মধ্যেই। এমনকি ইলেকশন কমিশনকেও জানার সুযোগ দেয়া হয় নাই। তারপর নানান দৌড়-ঝাপ করে মহামান্য আদালত থেকেই নির্বাচনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এটাও এখন দেখার পালা- কারন কোনোটাই নিশ্চিত করে বলা যায় না! আর আমজনতাতো ম্যাংগো পিপল, এসব বিষয়ে বোঝার কিছু থাকলেও তাদের বলার কিছু থাকে না!
রাজিবের ছোট দুইভাইয়ের ভরণপোষণের ভার নিয়ে নায়ক অনন্ত জলিল বাস্তবের নায়ক সুলভ আচরণ করেছেন। তাঁকে সে জন্য জানাই লাখো সালাম। নিশ্চয়ই তাঁর এমন উদ্যোগ অনেককেই উৎসাহিত করবে। রাজিবের খবরটা মিডিয়ায় বেশ ভালো করেই স্থান পেয়েছিল, সেজন্য অনন্ত জলিলও বেশ নাম কামিয়েছে। কিন্তু এখন কাল বৈশাখী আর ঝড়বৃষ্টির সময় অসংখ্য লোক ক্ষেতেখামারে বা মাঠেঘাটে, রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় বজ্রপাতে প্রতিদিন অনেক লোক মারা যাচ্ছে, তাঁদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, এটা নিশ্চিত করে বলাই যায়, নিজের ও পরিবারের মানুষদের খাবারের অভাব না মেটানো প্রয়োজন হলে বৃষ্টিবাদলের দিনে কাজ করতে বেরুতেন না। কই সেই সব ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশেষ কারো কথা শোনা যায় না। তাঁদের জন্য খবর হয় শুধু এতোটুকুই – আজ বজ্রপাতে ২১জন মারা গেছে। আর বেশি হলে, নীলফামারীতে এতো জন, রাজশাহীতে এতো জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এতো জন। মানুষ যেখানে শুধুই সংখ্যা!
আগামী অর্থবছর নিয়ে কথা হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী অনেক বিজ্ঞ লোক, তিনি অনেক স্থানে অনেককিছুই বলছেন। ওনার সব কথা যে সবার পছন্দ হবে তা নয়। অর্থ যাদের আছে তাঁরাই তাঁর কথায় মাঝে মাঝে খানিক স্বস্তি পেয়ে থাকেন। তিনি এবার আশ্বাস দিয়েছেন, ট্যাক্স কমাবেন। এতে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনিই আবার বললেন, চিনি শিল্প বন্ধের কথা। চিনি এখন যেকোনো খান থেকে সস্তায় পাওয়া যায় তাই দেশে চিনি শিল্প টিকিয়ে রাখার পক্ষপাতী তিনি নন। আচ্ছা, চিনি দেশেও উৎপাদন হচ্ছে বলেইতো পাশের দেশ ভারত নয়তো চীন থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে, তা নাহলে ভারত/চীন যদি অল্প দামের চিনি বেশি দামে বিক্রি করে বেশি বেশি লাভ করে লাভবান হয়, তখন তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকবেনা। একটি শিল্পকে ধ্বংস না করে, কি করে এর উন্নতি সাধন করা যায়, এ শিল্প উন্নয়নের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায় কিনা তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে বাজেটে তা পাশ করা যায় কিনা এটা একটু ভেবে দেখলে সাধারন মানুষের জন্য মন্দ হয় না বলেই মনে হয় অর্থমন্ত্রী।
এবার আসি ক্ষমতায়, এটা দিয়েই লেখাটা শেষ করবো। ক্ষমতা কে না চায়! যা কিছু হয় সব ক্ষমতার বলেই। এই ক্ষমতার বল যখন যার পায়ে থাকে সেই গোল দেয়। যে গোল দেয় তাঁরই বিজয়। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মেলবন্ধন করিয়ে দলের সমর্থকরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল দিতে চায়। তা শুনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও একটু একটু হাসে। মনে মনে ভাবে আরও কতকিছু দেখবা! খালি ধৈর্য্য ধরো। আর বিশ্বের বোদ্ধাগণ ভাবেন, আরও কত কি যে দেখতে হবে ওই উপরওয়ালাই জানেন!
চতুর্থ মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহন করলেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি এমনই ক্ষমতাধর যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারণ করেন, আর নিজের দেশে নিজে প্রেসিডেন্ট হবেন না, তা কি করে হয়! যতদিন মানুষের ক্ষমতা থাকে সেই ক্ষমতা নিজ হাতে হাতছাড়া করার ক্ষমতা কারো থাকেনা। এটাই ক্ষমতার বিশেষ ক্ষমতা। আর ক্ষমতা শুধু থাকলেই চলেনা, মানুষ তা প্রয়োগ করেই জানান দেয় যে – সে কতটা ক্ষমতাবান! আসলে প্রয়োগ বা ব্যবহার করে নয়, অপপ্রয়োগ বা অপব্যবহার করেই মানুষ তাঁর ক্ষমতা (খ্যেমতা) প্রকাশ করে। যার অপব্যবহার করার ক্ষমতা যত বেশি তাকে তত বেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর মনে করা হয়।
তবে সত্য আর সততার জয় সবসময়, এর জ্বলন্ত প্রমান হলেন ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ। যিনি স্বেচ্ছায় সরকার প্রধানের ক্ষমতা ছেড়েছেন, পুনরায় জনপ্রিয়তা নিয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছেন। বয়স ৯২ বছর, বয়সটা একটু বেশি বটে, তবে চিন্তা নেই, সততা ও কাজ দেখিয়েই তিনি মালয়েশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন আরও উপরে। তাঁর চিরচেনা হাসি হাসি মুখটির মতই উজ্জ্বল একটি দেশ ও উন্নত একটি জাতি নির্মাণে তাঁর নেতৃত্বে কাজ করতে সেদেশের তরুণ সমাজ ও সাধারন জনগণ বদ্ধপরিকর। জনাব মাহাথির শুনবেন সাধারন বা আমজনতার কথা, আর সাধারন মানুষ থেকে বড় বড় ধনকুবেররাও মেনে নিবে তাঁর প্রজ্ঞাময় বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। যেখানে সততা সেখানেই সকল সুখ, আর আসল শান্তিওতো সেখানেই। আল্লাহ ওনার হায়াত বৃদ্ধি করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:১৬