somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭৬ সালের ১৬ই মে ফারাক্কা লং মার্চের দিনটি রাজশাহী থেকে(সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের বর্ননা থেকে)

১৬ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের অনেক পাঠকের জানা নাই যে,১৯৭৬ সালের ১৬ই মে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানির নেতৃত্বে রাজশাহীর আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গন থেকে পদ্মা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবীতে ঐতিহাসিক লং মার্চ ফারাক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়।ন্যায্য পানি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য এটিই সবচেয়ে মানবিক ও অহিংস গনমিছিল এখন পর্যন্ত।

প্রয়াত সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন যিনি বাংলাদেশের মফস্বল সাংবাদিক ও সরেজমিন সাংবাদিকতার পথিকৃত, তার একটি স্মৃতিকথা থেকে আমি সে দিনটির বিস্তারিত বিবরন পাই।তাই আমি বর্ননা করবো ওনার নিজের জবানীতে(ইষত সংক্ষেপিত,কারন কাহিনী ব্যাপক বড়)-

(মোনাজাত উদ্দিনের জবানী)-এ বছরটা আমি অনেকটা বেকার,কারন আজাদ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে।অবশ্য কয়েকটি পত্রিকার হয়ে ফ্রি ল্যান্সার হয়ে কাজ করছি উত্তর অঞ্চল প্রতিনিধি হয়ে।সে সময় ঢাকার সংবাদ পত্রিকা থেকে ফোন,কালকে ১৬ই মে ১৯৭৬ ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল হবে,(না আমাকে তা কাভারেজ করতে বলা হয়নি),ঢাকা থেকে যে দুজন সাংবাদিক আসবে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।কি আর করা যেহেতু আমার স্থায়ী কোন চাকুরী নেই।।যথারিতি তারা এলো,তাদের সব আয়োজন সম্পন্ন করলাম।তাদের আর নাম বললাম না,কারন পরবর্তী কৃতকর্মের জন্য তারা লজ্জা পাবে।রাতে তাদের একজন ডেকে বললো,হাতে ইশারা করে(বোতলের সাইজ) এখানে রাজশাহীতে এটা পাওয়া যাবে,কি আর করা যেহেতু তারা সংবাদের লোক না এনে দিলে যদি নারাজ হয়,বস্তুত চাকুরীটা আমার খুবই দরকার,তাই এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।দ্বিতীয়জন আমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে দুই আঙ্গুল ফাক করে বললো এটির ব্যবস্থা করা যাবে,আমি রীতিমত স্তম্বিত,শেষ পর্যন্ত কি তারা আমাকে মাগীর দালাল ঠাওরালো।আমি তাকে কৌশলে এড়ালাম।

পরের দিন আমরা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে গেলাম,ভাসানি তার অগ্নিবর্ষন বক্তিতা দেওয়া শুরু করলো।স্টেজের ডানদিকে এই খান দিয়েই ভাসানি ব্যক্তিতা শেষ করে নামবে।তাই বিবিসি,ভয়েজ অব আমেরিকা,রয়টার ও সব ভালো ভালো নামিদামি সাংবাদিকরা সেখানে অবস্থান নিয়েছে।আমি ও অখ্যাত সাংবাদিকরা বাম পাশে অবস্থান নিলাম,সাথে আমার পুরোন মডেলের ক্যামেরা।

ভাষন শেষ,উত্তেজনার বশে মাওলানা ভাসানি হঠাত করে ডান দিক দিয়ে না নেমে বাম দিক দিয়ে নামা শুরু করলেন ফলে বিপুল জনতা তাকে অনুসরন করা শুরু করলো।আর পড়বি তো পড় একেবারে আমার সামনে ভাসানি নিজে ফলে আমিই প্রথম তার সেই ঐতিহাসিক ছবি তোলার সুযোগ পেলাম।ছবি তুলেই গেলাম রাজশাহী টিএন্ডটি অফিসে,ঢাকায় ফোন করতে।সেখানে গিয়েই জানলাম গতরাতে বাজ পড়ে টিএন্ডটি অফিস অচল,তাই ততক্ষনাত বুঝলাম অন্য কোন সাংবাদিক এ খবর বা ছবি এখান থেকে পাঠাতে পারবেনা।

সেখান থেকে সোজা বাস স্ট্যান্ড হয়ে ঢাকা।রাত ১১টায় ঢাকা নামলাম,সেখান থেকে বংশাল সংবাদ অফিস।গিয়ে দেখি বার্তা সম্পাদক হতাশ হয়ে বসে আছে,কারন শুধু সংবাদ নয় সকল পত্রিকা কোনো তাজা নিউজ পায়নি রাজশাহী থেকে।আমাকে দেখে বার্তা সম্পাদক লাফ দিয়ে উঠলেন,জিজ্ঞেস করলো মোনাজাত তুমি?কি এনেছো,ছবি রিপোর্ট সহ?এই সবাই মেশিন স্টার্ট দেও,এক্ষূনি।মোনাজাত তুমি কি খাবে আগে বলো।তোমাকে বিধংশ দেখাচ্ছে।সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে উঠলো।

সম্পাদক আহমেদুল কবির গভীর রাত পর্যন্ত প্রেসে ছিলেন,এটির জন্য।গভীর রাতে বার্তা সম্পাদক এসে আমাকে জানালো,সম্পাদক সাহেব তোমাকে ডাকছে।
আমি আস্তে করে ওনার রুমে ঢুকলাম,সালাম দিলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন,কিছুক্ষন পর বললেন,মোনাজাত আজকে তুমি আমার কাছে কিছু চাও?

আমি আস্তে করে বললাম,স্যার একটা চাকুরী?আমার স্যার একটা চাকুরী খুব দরকার।

এবার পাঠকদের জানাই,এই অসম্ভব দামী রিপোর্টের জন্য ওনার এই অতি ক্ষুদ্র অনুরোধ সম্পাদককে বিস্মিত করেছিলো।তিনি চাকুরীটি পেয়েছিলেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×