somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গত শতকের টুকরো স্মৃতি।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের স্কুলজীবনে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই বিদ্যালয়ের দুইদিনব্যাপী ক্রীড়ানুস্টান হতো।এতো চমৎকার অনুস্টান আমি আর আমার এই বয়স পর্যন্ত কোথাও দেখি নাই।আসলে খেলার এতো আইটেম আজকাল বিভিন্ন কারনে ব্যয় সঙ্কোচন কর্মসুচীতে ফেলা হয়েছে।অনুস্টানের দ্বিতীয় দিন বিদ্যালয়ের পুরুষ প্রাক্তনদের ম্যারাথন দৌড় ছিলো।সেটা আমাদের আমিন ভাইয়ের পৈত্রিক সম্পত্তি ছিলো।কারন আর কেউ তাকে কখনো বিট দিতে পারেনি।আর প্রাক্তন ছাত্রীদের জন্য ছিলো মিউজিক্যাল পিলো।চেয়ারের সার্কেলের মধ্যে বালিশ ঘুরতো,গান বন্ধ হলে যার হাতে বালিশ থেকে যেতো সে এই কলঙ্কের বোঝা নিয়ে পদত্যাগ করতো।এভাবে সেকেন্ড লাস্ট জন বালিশ নিয়ে ধরা খেলে টিকে থাকা শেষ আপা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ১৫৪ সিট নির্বাচনের মতো জিতে যেতো।

পরবর্তীতে বিভিন্ন কারনে কয়েকটি ইভেন্ট বাদ পড়ে।বর্শা নিক্ষেপের ইভেন্টে আমাদের বাপ্পী ভাই একতরফা জিতে যেতো।উনার পেটানো সিক্স পেক বডি দেখলেই বোঝা যেতো উনি আদিম যুগের শিকারী গোত্রের কোন দক্ষ শিকারী ছিলেন।উনি মুল মাঠ পার করে ফেলতেন,অতিরিক্ত মাঠে গিয়ে এই বর্শা ল্যান্ড করতো।আসলে ৭০-৮০ এর দশকে নিউটেন আর ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থীরা আজকের ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় অনেক পরিনতই ছিলেন।কিন্তু আজকের সেইসব ছাত্র-ছাত্রীরা বলতে গেলে সে তুলনায় শিশুই।তাই আমাদের স্কুলের পালোয়ান ছাত্র বাপ্পী ভাই,গাজী সরোয়ার,গালিব আর ডেগরা বাবু যখন বিদায় নেই,সেই সাথেই বিদায় নেয় বর্শা ও লোহার বল গোলক নিক্ষেপ।কারন সেগুলো ছুড়ে মারার লোক আর ছিলো না।

তারপরে চাকতি বা ডিসকার্স থ্রো বিদায় নেয় ৯৩-৯৪ সালে যখন আমাদেররই এক ছাত্রী সেটা নিক্ষেপ করতে গিয়ে দুই ছাত্রী আর এক শিক্ষিকাকে গুরুতর জখম করে তখন।এরপর বাদ যায় বেগুন খেলা।সেটা ছিলো এমন একটা নির্দোষ খেলা যেটার প্রানঘাতি দিকটা বাদ যাওয়ার আগমুহুর্ত পর্যন্ত বোঝা যায়নি।ব্যাপারটা ছিলো এমন,দুরে কতগুলো পাত্রে পানিতে প্রতি পাত্রে একটা বেগুন ভাসতো।প্রতিযোগিরা(যাদের হাত বাঁধা থাকতো দড়িতে,যাতে কেউ হাত দিয়ে মুখে বেগুন তুলে নিতে না পারে, কারন আমাদের আবার একটু সততার অভাব ছিলো) দৌড়ে গিয়ে মুখ পাত্রে চুবিয়ে বেগুন কামড়ে নিয়ে যে আগে পৌছাতে পারতো,সেই জয়ী।কিন্তু হাত বাধানো অবস্থায় সেটা কতটূকু কঠিন তা আর কহতব্য নয়।কিন্তু সেবার আমাদের মুসা আর মাসুদ (ওর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলো,আমরা বলতাম মালেক মুক্তিবাহিনী কাকা,যিনি মেজর জলীলের মতো চুল দাড়িবিশিস্ট ছিলেন।তেমনি হুঙ্কার দিয়ে কথা বলতেন)

এই বেগুন তোলাকে জীবনের মুল লক্ষ্য মনে করে যখন মুখে বেগুন খিঁচে দৌড় লাগায়,তখনি প্রবল বেগে দৌড়ানোর সময়,যেনো এর সাথে তাদের ভিটে মাটি রক্ষার প্রশ্ন জড়িত,তারা দুজন ক্যারিয়ারিস্ট বালক পায়ে পায়ে ল্যাং লেগে একেবারে আক্ষরিক অর্থেই কাঁতলা মাছের মতো দুজন দুদিকে উড়ে যেয়ে পড়ে।এতে তাদের বুক সরাসরি মাটিতে ল্যান্ড করাতে মুখের বেগুন বেরিয়ে পড়ার সাথে সাথেই প্রানও নির্গত হওয়ার উপক্রম হয়।মুসার বাবা আর মালেক মুক্তিবাহিনী আমাদের শিক্ষকদের কাঁকে কাঁকে মামলায় জর্জরিত করবে আর কাঁকে কাঁকে এল এম জিতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করবে তা জানিয়ে দেয়।শিক্ষকরা জানাই,আর কখনো এমন খেলা হবে না।চিকিতসার পাশাপাশি তারা একএক জনকে দুটো করে প্রাইজ দেয়ার ঘোষনা দেয়।কিন্তু বাবারা ঘোষনা দেয়,এই দুই দুইটা মুন্নু সিরামিকের নুন্নু মার্কা সিরামিকের প্লেটের জন্য তাদের আদরের নান্না মুন্নারা তো আরেকটু হলেই গেছিলো।ফলে কিছু নগদ ক্ষতিপূরন সহ প্রাইজ বিতরন হলে দেশের স্বার্থে দশের স্বার্থে তারা এল এমজির সেফটি ক্যাচ অফ করে।

মালেক মুক্তিবাহিনী কাকার আরেকটা ব্যাপার ছিলো,উনার পুত্র-কন্যাদের প্রতি দারুন অপত্য স্নেহ।কেউ তাদের মারলে উনি যেভাবে গোঁফ-দাড়ি ঝাকিয়ে প্রবল ক্ষোভের সাথে দূস্কৃতকারীকে খুজে বেড়াতে,তাতে সেই নরাধমের মুতু-পুতু হয়ে যেতো।আমাদের ছামদানী ভাই,আরেক গোঁয়ার লোক,একবার কাকুর ছেলে মাসুদকে পিটায়।আমরা সবাই বুঝে গেছি যে,ছামদানী ভাইয়ের জীবনের শেষমুহুর্ত এসে গেছে।আর উনি ভয়ে আতঙ্কে নিজেকেই নিজে সান্তনা দিচ্ছে আর আমাদের বলতেছে,কি করবে রে,খুন করবে।তো করুক দেখি,আমিও দেখে নিবো,তোরা আমার পাশে থাক।আমার ভাইদের খবর দে।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আছে,আমি কোন দোষ করি নাই।তোরা স্বাক্ষী দিবি না,ভাই।

এসময়ই মালেক কাকা টাইফুনের মতো এসে খুব ধীরে ধীরে টেনে টেনে বললো,আমার মাসুদরে কোন শুয়োরের বাচ্চা গায়ে হাত দিছে?ছামদানি ভাই রক্তশুন্য মুখে বললো,আমি কাকা।উনি হুঙ্কারের সাথে বললো,কেনো দিলি রে হারামজাদা।যেই মা দশ মাস দশদিন পেটে গর্ভধারন করছে,হেওতো এতো বড় সাহস পায় নাই,তুই কে?আইজ তোর পেটে পাড়া দিয়া রানে রান টাইন্যা ছিড়া ফালামু।কিন্তু সোভাগ্যবশত ছামদানী ভাইয়ের ভাইয়েরা জ্বিলানী,ইয়াজদানী,রব্বানী,ছবহানী,নুরানীরা সময় মতো এসে যাওয়াতে তিনি রান ছিন্ন হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যেয়ে আল্লাহর রহমতে এখন বৌ-বাচ্চা নিয়ে বেশ সুখে আছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×