আরব আমিরাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার আবারও খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই সুখবর হয়তো বয়ে আনবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। আগাম ২৭ অক্টোবর মধ্য প্রাচ্যের দেশটি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বাংলাদেশের অন্যতম বাজারটি আবারও উন্মুক্ত হওয়ার আশা সঞ্চার হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বলশীলরা এমনটাই আভাস দিচ্ছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দুবাইয়ের সাংবিধানিক বাদশাহ শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণেই চলতি মাসে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এ সফরে নিরাপত্তা এবং সাজাপ্রাপ্তদের বিনিময় সংক্রান্ত দুটি চুক্তি সই হতে পারে।
দায়িত্বশীল সূত্রটি জানিয়েছে, শ্রমবাজার খোলার শর্ত হিসাবে এই দুটি চুক্তিরই প্রস্তাব করেছে আরব আমিরাত।
অপর দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমিরাতের বাজারে বর্তমানে ১০ লাখের মত পেশাজীবী, দক্ষ, আধা দক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশি বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন। কিন্তু বাংলাদেশি কর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালের আগস্টে আমিরাত সরকার এদেশের কর্মীদের নতুন ভিসা দেওয়া এবং ভিসা নবায়নে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেই থেকে আজ অবধি বন্ধ আছে সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এই আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারটি।
এ বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বৈদেশিক কর্ম সংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি অবশ্য জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে এবং দেশটিতে বিদেশি কর্মীদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভারসাম্য আনতে, ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া কিছুটা শ্লথ করেছে আমিরাত। তবে ভিসা দেওয়া বন্ধ হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এ বাজারটি কখনো বন্ধ হয়নি। কারণ, পুরুষ কর্মী না গেলেও মহিলা কর্মী নিয়মিত দেশটিতে যাচ্ছে। তবে আগের মত শ্রমিক রপ্তানি করতে দীর্ঘ দিনের কূটনৈতিক তৎপরতা চলছিল। এরই মধ্যে আমিরাত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সুখবর। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-আমরাত সম্পর্কের নতুন মোড় উন্মোচন হবে।
আমিরাতের বাজার বন্ধ হওয়া, সৌদি আরবে রপ্তানির হার কমে আসা এবং ইরাক, লিবিয়ার মত একাধিক দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক যাওয়ার বদলে ফেরত আসায় আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকে শ্রমিক রপ্তানি।
তাই শ্রমিক রপ্তানি বাড়াতে অন্যতম বৃহৎ এ বাজারটি উন্মুক্ত করতে দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল সরকার। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এক্সপো ২০২০ অনুষ্ঠিত এর আয়োজক নির্বাচনে প্রথম দফায় রাশিয়াকে ভোট দিলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আমিরাতকে ভোট দেয় বাংলাদেশ। গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্যারিসে চূড়ান্ত ভোটে দুবাই নগরী আয়োজক দেশ হিসাবে নির্বাচিত হয়। এরপরেই এক্সপো ২০২০ উপলক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ কাজে বাংলাদেশী কর্মীদের সুযোগ দেওয়ার মৌখিক আশ্বাস দেয় দেশটি।
বাজারটি উন্মু্ক্ত করা ও প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা চুরি, ডাকাতি, নিষিদ্ধ পণ্যের আমদানি সহ বিভিন্ন প্রতার অপরাধ কর্মে জড়িয়ে যাওয়ায় বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। এসব অপরাধ প্রবনতা বন্ধের বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত নিরাপত্তা সহায়তা এবং সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তিদের হস্তান্তর চুক্তির সুপারিশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে চুক্তি দুটি স্বাক্ষর হতে পারে। এরপরেই উন্মুক্ত হতে পারে অন্যতম এই শ্রম বাজারটি।