সৌদি আরবের নারীরা তাদের বিয়ের ব্যাপারে বাবা ও পরিবারের পুরুষ অভিভাবকদের পরম্পরা ধরে চলে আসা ঐতিহ্যের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। পরম্পরা অনুযায়ী, নারীদের ভবিষ্যত্ স্বামী কে হবে, তা নির্ধারণ করে দেয় তাদের বাবা বা পুরুষ অভিভাবকরা। আর প্রাচীন এ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছে বর্তমানের সৌদি আরবের নারীরা।
বাকি জীবন অবিবাহিত থাকার সম্ভাবনা সত্ত্বেও সৌদি নারীদের একটি বড় অংশ তাদের অভিভাবকের পছন্দের বিয়ের বিরুদ্ধে লড়তে আদালত পর্যন্ত যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক এবং ভালো চাকরি করছেন।
পুরুষ অভিভাবকদের কাছ থেকে সম্মতি নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর নিজেদের পছন্দে বিয়ের ক্ষমতা দেয়ার জন্য গত ছয় বছরে ৮৬ জন সৌদি নারী আদালতের সাহায্য নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১০ সালেই এরকম ১০টি মামলা হয়েছে বলে ন্যাশনাল সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়। কিন্তু জুলাইয়ে মদিনার একটি আদালত একজন নারী চিকিত্সকের আবেদন খারিজ করে দেন। এক সহকর্মীকে বিয়ে করার বিষয়টিতে তার বাবা ও ভাই অসম্মতি জানালে এর বিরুদ্ধে তিনি আদালতে আপিল করেন। মেয়ের পছন্দের পাত্রটি তাদের গোত্রের না হওয়ার কারণে তার বাবা ও ভাই এতে অসম্মতি জানায়।
আদালত বাবার পক্ষে রায় দিয়ে বলেন যে, গোত্রের বাইরের কাউকে বিয়ে করার চেষ্টা করে তিনি অবাধ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
ন্যাশনাল সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটসের সুহাইলা জয়নাল আবেদিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের সমাজে অদ্ভুত কিছু নিয়ম চালু আছে। এখানে ১০ বছরের একটি মেয়ে বিয়ে করতে পারে, আর অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের বিয়ে থেকে বিরত রাখা হয়।’
সৌদি আরবের নারীদের বিয়ের অধিকার নিয়ে ফেসবুকে প্রচারণাকারী সালেহ বলেন, ‘আমরা এ অজ্ঞতা দূর করতে চাই। ইসলামের আগের যুগে তারা অপ্রত্যাশিত শিশুকন্যাকে হত্যা করত। আর এখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের হত্যা করছে।’
সম্ভাব্য স্বামী বিশ্বাসী ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম হলে একজন বাবা অবশ্যই মেয়ের বিয়েতে সম্মতি দিতে বাধ্য থাকবে বলে ইসলাম শিক্ষায় বলা হয়েছে।
কিন্তু সৌদি আরবের মুসলিম শরিয়া আইন ও রক্ষণশীল গোত্রীয় প্রথা একজন পিতাকে তার মেয়ের বিয়ের আগ পর্যন্ত তার ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আরোপের অধিকার দিয়েছে।
এ কারণে সরকারি কর্মকর্তাও মেয়ের বাবা বা তার অনুপস্থিতিতে ভাই বা চাচার সম্মতি ছাড়া কোনো নারীর বিয়ের অনুমতি দিতে পারেন না।
আবেদীন বলেন, ‘এমন অনেক বাবা আছেন যারা যখন তাদের গোত্রের বাইরে বিয়ে করছেন, একই সময়ে তাদের কন্যাসন্তানকে গোত্রের বাইরে বিয়ে করতে বাধা দিচ্ছেন।’
এমনকি অধিকাংশ সময়ই ছোটবেলা থেকেই তার স্বামী নির্ধারিত হয়ে থাকার কারণে বহু নারীই তার পছন্দের পুরুষটিকে বিয়ে করতে পারেন না।
একজন নারীর ৩৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত তার বাবা বা অন্য পুরুষ অভিভাবককে তার বিয়ের অনুমতি দিতে বাধা দেয়ার নিয়ম থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন সালেহ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






