somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেহেদির রং না মুছতেই এসিডে ঝলসে গেল সাবিনা

১০ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নববধূ এসিডদগ্ধ সাবিনা অবশেষে মারা গেলেন। বিয়ের রাতেই এসিডের শিকার হন তিনি। শরীরের বেশির ভাগ (৫২ শতাংশ) এসিডে ঝলসে যাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করতে যখন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনো তাঁর হাতে লাগান ছিল বিয়ের মেহেদি।
৯ ফেব্রুয়ারি রাতেই জানা যায় সাবিনার অবস্থা গুরুত্বর। তাত্ক্ষণিকভাবে চিকিত্সকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। পরদিন সকালে এসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিলের পক্ষ থেকে হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছামাত্র জানতে পারলাম, এই মাত্র মারা গেলেন সাবিনা। সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছেন তিনি। সাবিনার বাবার হাতে এক কাদি কলা; আদরের মেয়েকে খাওয়াবেন বলে এনেছেন। মেয়েকে আর কোনো দিন কলা খাওয়াতে পারবেন না।
বেলা একটার দিকে চাদরে ঢাকা সাবিনার লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময়ও মেহেদি রাঙানো হাত চাদর থেকে বেরিয়ে পড়ছিল ।
সাবিনাকে এসিড মারার ঘটনায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানায় ২০ জানুয়ারি সাবিনার স্বামী বাদী হয়ে মিলন ও তার স্ত্রী হাওয়া, ভাই মঞ্জুর ও গোলাপকে আসামি করে একটি মামলা করে। ২১ জানুয়ারি প্রথম আলোয় করিমগঞ্জে নবদম্পতির ওপর এসিড নিক্ষেপের সংবাদ ছাপা হওয়ার পর বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড সাবিনা দম্পতির মামলাটি পরিচালনা করে । অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দলের সমন্বয়ক সামিয়া আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল সাবিনার মৃতু্যূর পর খায়রুলের বাড়িতে গিয়ে একটি কনটেইনার, মগ ও সামান্য পরিমাণ এসিডসহ কিছু আলামত উদ্ধার করেন। এরপর সাবিনার স্বামী খায়রুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ ধারণা করছে, খায়রুলই তাঁকে এসিড নিক্ষেপ করেছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মিলনও তার স্ত্রী হাওয়া, ভাই মঞ্জুর ও গোলাপ এখনো পলাতক। এলাকাবাসীর অভিযোগ ও পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিবেশী এক কৃষক মিলনের স্ত্রী হাওয়ার সঙ্গে পরকীয়া করতেন খায়রুল। তাঁদের এ সম্পর্কের বিষয়টি প্রতিবেশীদের কাছে ফাঁস হয়ে গেলে এ নিয়ে গ্রামে সালিস হয়। সালিসে খায়রুলকে দ্রুত বিয়ে করানোর কথা বলা হয়। এরপর খায়রুলের আত্মীয়স্বজন তাঁকে সাবিনার সঙ্গে বিয়ে দেন। খায়রুল নিজেই এসিড মারার ঘটনা সাজিয়েছেন বলে প্রতিবেশীরা মনে করছেন।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার দিবরপাল্লা গ্রামের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন (১৯)। ১৯ জানুয়ারি একই থানার টামনি পিটুয়াবন্দের বাড়ি গ্রামের খায়রুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু বাসর রাতেই এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন সাবিনা-খায়রুল দম্পতি।
গত শনিবার সাবিনার মৃত্যুর পর স্বামী খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন—শুক্রবার সাবিনাকে আমাদের বাড়িতে আনি। ওই দিন ছিল আমাদের বাসররাত। রাত দুটার দিকে সাবিনা চিত্কার করে ওঠে। আমি দেখি ঘরের দরজা খোলা, সিঁধ কাটা। সাবিনার পরনে থাকা বিয়ের নতুন শাড়িতে এসিড লেগে তার সারা শরীর ঝলসে গেছে। এসিডে আমার বাম হাতও পুড়ে যায়। প্রতিবেশীর পরামর্শে সাবিনার গায়ে পানি ঢালি। পরে দ্রুত তাকে কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিই। তারপর তাকে এখানে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে) নিয়ে আসি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, মুমূর্ষু সাবিনার শরীরের বেশির ভাগ পুড়ে যাওয়ার পরও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্রিটিশ সার্জন রোনাল্ড এইচ হাইলসও তাকে দেখেছেন। কিন্তু তাকে বাঁচান গেল না।
সাবিনার বাবা সিরাজউদ্দিন কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে , হাতে তাঁর তখনো মেহেদির রং। চোখের দুই পাতা বন্ধ। বিয়ের মাত্র কুড়ি দিনের মধ্যে মেয়ে তাঁর শুধু বাড়ি থেকে নয়, পৃথিবী ছেড়েই যে চলে গেছে। একটাই কথা, তাঁর নিরপরাধ মেয়েকে যারা এ পৃথিবী থেকে বিদায় করল তাদের বিচার হোক।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×