somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিফবার্গার

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামনেই এইচএসসি পরক্ষা। পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি আছে। তাই বিকেল করে এক ভাইয়ার কাছে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছি।

বিকেলের এই ব্যাচে একমাত্র আমিই নতুন। নতুন হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।

আমারদের প্রাইভেট সেন্টারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পদ্মা নদী। সবাই প্রাইভেট শেষ করে পদ্মার ধার ঘেষে গড়ে ওঠা পদ্মা গার্ডেনে আড্ডা দিই। সেখানে গিয়ে কখনো সবাই সূর্যাস্ত দেখি, গাছের নিচে বসে বাদাম চিবাতে চিবাতে গল্প করি, কখনো বা নৌকায় পদ্মার চরে ঘুরতে চলে যাই। ব্যাচের কারো যদি জন্মদিন থাকে তাহলে সবাই মিলে খুব হই-হুল্লা করে সেলিব্রেট করি।

এভাবে সবার সঙ্গে থাকতে থাকতে কখন যে ঊর্মিকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেও বুঝতে পারিনি।



ঊর্মি অন্যদের তুলনায় কিছুটা আলাদা। তার মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে। আর সেও কারো গোমড়া মুখ দেখতে পারে না।

ব্যাচের প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সেলফোনের নাম্বার জানি। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ছুতায় ঊর্মির সঙ্গে প্রায় রাতেই কথা বলি।

প্রায়ই লক্ষ্য করেছি, কথা বলতে বলতে ঊর্মি বলে ওঠে এই ফোন রাখো, আমার কল আসছে। তারপরই আমাকে ওয়েটিংয়ে থাকতে হয়।

আমিও দ্বিধায় পড়ে যাই। ঊর্মি কি অন্য কাউকে ভালোবাসে!



একদিনের ঘটনা। প্রাইভেট শেষ করে সবাই নদীর ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।

কথায় কথায় নীলা বলে উঠলো, চল সবাই আজ বিফ বার্গার খাবো এবং ঊর্মিকেও আমাদের সঙ্গে বিফবার্গার খেতে হবে।

বাদ সাধলো ঊর্মি। তার এক কথা, তোরা খা গিয়ে। আমি চিকেনবার্গার খাবো।

সবাই নাছোড়বান্দা, আজ তারা ঊর্মিকে বিফবার্গার খাওয়াবেই।

ব্যাচে আমি নতুন। তাই কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কেন সবাই মিলে ঊর্মিকে বিফ বার্গার খাওয়ানোর জন্য এতো উঠেপড়ে লেগেছে! তাহলে কি ঊর্মি অন্য ধর্মের। কিছুটা হলেও যেন একটু দমে গেলাম। পরক্ষণেই ভাবলাম, হোক সে অন্য ধর্মের। একবার যখন পা বাড়িয়েছি তখন আর পেছনে ফিরে যাবো না।



দিনগুলো খুব দ্রুতই কেটে যাচ্ছিল। আমিও আগের মতোই একতরফা ঊর্মিকে ভালোবেসে যাচ্ছিলাম। তবে আর কতোদিন একতরফা ভাবে ভালোবাসা যায়! যে করেই হোক তাকে আমার কথা জানাতেই হবে। কিন্তু সে যদি আমাকে ভালো না বাসে তাহলে যে তার বন্ধুত্ব থেকেও বঞ্চিত হতে হবে। তাই বলে কি বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে চুপ করে বসে থাকা যায়!

তার চেয়ে এক কাজ করি, ব্যাচের কাউকে জিজ্ঞাসা করি ঊর্মি অন্য কাউকে ভালোবাসে কি না। যাকে আমি জিজ্ঞাসা করবো সেই যদি ঊর্মিকে আগে থেকে ভালোবাসে তাহলে তো সমস্যাটা আরো বেড়ে যাবে। তার চেয়ে বরং ব্যাচের ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলেই তো হয়।

ভাইয়া সবার সঙ্গেই বন্ধুর মতো কথা বলেন। তিনি নিশ্চয় জানেন ঊর্মি কাউকে ভালোবাসে কি না?



অন্যান্য দিনের চেয়ে আগে গিয়ে ভাইয়াকে ফাকা পেয়ে মনের কথাগুলো বলে ফেললাম।

ভাইয়া আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ভ্রু কুচকে উল্টো প্রশ্ন করলেন, কেন, তোমার শুনে লাভ কি?

নিজের ভালোবাসার কথা চেপে গিয়ে বললাম, আমার এক বন্ধু তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তাই আমাকে খোজ নিতে বলেছে।



এরপর ভাইয়া যা বললেন তার সারমর্ম হলো, ঊর্মি হিন্দু মেয়ে। তার বিয়ে হয়ে গেছে। তার স্বামী লন্ডনে থাকে। তাই আইইএলটিএস দিয়ে ঊর্মিও লন্ডনে চলে যবে। ভাইয়া আরো বললেন, আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি ঊর্মিকে জিজ্ঞাসা করতে পারো।



ভাইয়ার কাছে এসব শোনার পর মনে হলো সব ওলট-পালট হয়ে গেল। এখনো ব্যাচের কেউ আসেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই চলে আসবে। কিন্তু মনটা এতোটাই ভেঙে গেছে যে, আর এখানে থাকতেই ইচ্ছা করছে না। তাই আর দেরি না করে চলে এলাম।

এতো কিছু শোনার পরও আমার মনের ভেতর শুধুই ঊর্মি, ঊর্মি আর ঊর্মি।

রাত বারোটা পেরিয়ে সোয়া বারোটা।

তবুও অন্যান্য দিনের মতো তাকে কল দিতে ইচ্ছা করছিল না। আবার কল না দিয়েও থাকতে পারছিলাম না। কিন্তু! আমার দেরি দেখে ঊর্মিই যে আমাকে কল দিচ্ছিল।

কল রিসিভ করবো না ভেবেও রিসিভ করলাম।



কি ব্যাপার অর্ক, ভাইয়া বলছিলেন তুমি নাকি ব্যাচে এসেছিলে?

না এমনি। শরীর খারাপ করছিল। তাই আর থাকতে ইচ্ছা করছিল না।

ঊর্মি অন্যান্য দিনের মতোই কথা বলে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি আর সঙ্গে আগের মতো নরমাল হয়ে কথা বলতে পারছিলাম না। আমার কথার মধ্যে কেমন জানি আড়ষ্টতা চলে আসছিল। তারপরও ভাইয়ার কথার সত্যতা জানার জন্য ঊর্মিকে জিজ্ঞাসা করলাম, পরীক্ষার পর কি করবে তুমি?

ভাবছি আইইএলটিএস দিয়ে লন্ডনে চলে যাবো।

ঊর্মির উত্তর শুনে আমার মনে যেটুকু আশার আলো ছিল সেটুকুও নিভে গেল। তাই বললাম, ঊর্মি, তুমি এখন ফোন রাখো, তোমার স্বামী ফোনে তোমাকে ওয়েটিং পেতে পারে।

আমার কথা শুনে ঊর্মি যেন আকাশ থেকে পড়লো।

আমার স্বামী? আমার বিয়েই বা হলো কবে?

কেন লুকাচ্ছ এসব?

লুকাচ্ছি মানে? কি এসব আজে-বাজে বলছ?

আজে-বাজে হতে যাবে কেন? আইইএলটিএস দিয়ে তুমি লন্ডনে চলে যাবে না?

হ্যা লন্ডনে যাবো, তো? লন্ডনে চলে যাওয়া মানে তো আর বিয়ে হয়ে যাওয়া নয়।



তারপর আমি যখন সব খুলে বললাম তখন তো ঊর্মি হেসেই খুন। বললো, কাল আগে প্রাইভেটে যাই, তারপর ভাইয়ার বারোটা বাজাবো। আমার নামে মিথ্যা কথা বলা!

ঊর্মির এ কথা শুনে আমার যেন দেহে প্রাণ ফিরে এলো। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, মিথ্যা কথা মানে। এখনো তোমার বিয়ে হয়নি? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। তবে প্রতি রাতেই যে তুমি কথা বলতে বলতে, আমাকে ওয়টিংয়ে রেখে দিতে। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি তোমার হাজব্যান্ডের সঙ্গে কথা বলতে।

আরে বোকা, সেটা তো আমার দুলাভাই। দুলাভাই সারা দিন ব্যস্ত থাকেন, সময় পান না। তাই ঘুমানোর আগে খোজখবর নিয়ে ঘুমান।

তা না হয় তোমার বিয়ে হয়নি। কিন্তু সেদিন তুমি বিফবার্গার খাওনি কেন?

ও সেই কথা! তুমি ব্যাচে নতুন তো। আমার গুরুর মাংসে অ্যালার্জি আছে। তাই আমি সেদিন বার্গার খাইনি। তাছাড়া আমি যদি অন্য ধর্মের হতাম তাহলেও তোমার জন্য ধর্ম ছাড়তাম।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, কেন কেন? আমার জন্য ধর্ম ছাড়তে কেন? আমি তোমার কে হই যার জন্য তুমি ধর্ম ছাড়তে?

ঊর্মি আমার প্রশ্ন শুনে রেগে গিয়ে বললো, কে হই মানে? আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমাকে ভালোবাসো। কি ভালোবাসো না?

তুমি কি করে জানলে আমি তোমাকে ভালোবাসি?

ব্যাচের ভাইয়া বলছিল, তোমার এক বন্ধু নাকি আমাকে ভালোবাসে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম বন্ধু-টন্ধু কেউ নয়, তুমিই আমাকে ভালোবাসো। তাছাড়া তোমার চোখেও আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি।

ঊর্মি, কাল তাহলে আমরা বিফবার্গার খেয়ে আমাদের ভালোবাসা সেলিব্রেট করবো।

আমার কথা শুনে ঊর্মি হাসতে লাগলো। কথা বলতে বলতে হঠাৎ বলে উঠলো, অর্ক, জলদি ফোন রাখো, আমার লন্ডনের স্বামী ফোন দিচ্ছে।

এই কথা শোনার পর আমরা দুজনই হাসতে লাগলাম।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×