somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদ্মার ঢেউ রে - আত্মকথা ও একটি ছবি ব্লগ

২৮ শে জুন, ২০২২ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ষাটের দশকে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে ক্লান্ত দুপুরে প্রচারিত দুঃখে ভরা দুঃখের একটি গান প্রায়ই শুনতে পেতাম “পদ্মার ঢেউ রে” কার লিখা গান, কে গেয়েছেন এইসব মনে রাখার মতো বয়স তখন ছিলো না, তবে স্কুল ফিরে এই গান শুনে শুনে ক্লান্ত দুপুরে ঘুমিয়েছি এটি মনে আছে। সত্তরের দশকে এক সময় জানতে পারি এই গানটি যিনি লিখেছেন তিনি আসলেই অত্যন্ত দুঃখী একজন মানুষ - আমাদের দুখু মিয়া, আমাদের কবি - কাজী নজরুল ইসলাম।

যখন বাংলার সড়ক মহাসড়কে গর্জনধ্বনি দেখেছি “তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা” - তখনো পদ্মা আমার কাছে একটি স্বপ্ন! আমাদের বাড়ি মেঘনা ও তিতাস নদীর মাঝামাঝি এলাকায়। মেঘনা ও তিতাসের সাথে আমার সম্পর্ক যুগ যুগান্তরের - অনন্ত অনন্তকালের। ছাত্রজীবনে পদ্মা নদী দেখার সুযোগ আমার হয়নি। আমাদের সময় বেড়াতে যাওয়া খুব ব্যয়বহুল বিষয় ছিলো আর সেই আমলের মা বাবাও আমাদের একা বেড়াতে যেতে দিতেন না, বা ছাত্র ছাত্রী গ্রুপ করে বেড়াতে যাবে এমনও ছিলো না। সময় পেরিয়ে গিয়েছে সময়ের স্রোতে। জীবনে যখন প্রথম পদ্মা দেখার সুযোগ পাই ততোদিনে কর্মজীবন শুরু হয়েছে। এটি কাকতালীয় বিষয় কিনা জানিনা সেদিনও ক্লান্ত দুপুর ছিলো আমি নিজেও ছিলাম বেশ ক্লান্ত। পদ্মার তীরে যখন এসে পৌছেছি আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি একি! এ যে সাগর মহা সাগরের মতো অবস্থা! এতো বড় নদী হয়! এই আমাদের পদ্মা! হাটি হাটি পা পা করে কখন যে নদীর পানির কাছে এসে পৌছেছি তা হয়তো নিজেরও মনে ছিলো না। দুইহাত ভরে পানি হাতে নিয়েছি, পানি টিউবওয়েলের পানির মতো স্বচ্ছ ঝকঝকে পরিস্কার মিষ্টি।

পদ্মার বুকে ফেরিতে যখন পাড়ি দিচ্ছি বারবার একটি কথাই মনে হয়েছে - তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা! ঠিক তখনই কাকতালীয় আরেকটি বিষয় ঘটে! আমার জীবনে আমি দেখেছি কাকতালীয় বিষয়গুলো কখনো একা একা চলে না, এদের ভাইবোন থাকে - এরা ভাইবোন নিয়ে একসাথে চলাফেরা করে। ফেরিতে আমার পাশেই সেই সময়ের একটি আধুনিক সেডান টয়োটা স্টারলেটের স্টিরিও থেকে কিন্নর কন্ঠে একটি গান বেজে চলছে। গানটি আমার অতি পরিচিত আমার শৈশবের স্মৃতি আমার স্বপ্নে দেখা - না দেখা পদ্মা নিয়ে গান “পদ্মার ঢেউ রে” আমি পদ্মার বুকে ফেরিতে দাড়িয়ে আছি - সামনে উথাল পাথাল পদ্মার ঢেউ আর ফেরদৌসি রহমানের গলায় “পদ্মার ঢেউ রে - মোর শূণ্য হৃদয়–পদ্ম নিয়ে যা, যা রে” - কখন যে চোখের কোনে জল জমে উঠেছে আমি নিজেও জানিনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পদ্মার ঢেউ রে
গীতিকারঃ কাজী নজরুল ইসলাম
সুরকারঃ কাজী নজরুল ইসলাম
শিল্পীঃ ফিরোজা বেগম
শিল্পীঃ ফেরদৌসি রহমান
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পদ্মার ঢেউ রে —
মোর শূণ্য হৃদয়–পদ্ম নিয়ে যা, যা রে।
এই পদ্মে ছিল রে যার রাঙ্গা পা
আমি হারায়েছি তারে।।

মোর পরান–বঁধু নাই, পদ্মে তাই মধু নাই (নাই রে)
বাতাস কাঁদে বাইরে, সে সুগন্ধ নাই রে
মোর রূপের সরসীতে আনন্দ–মৌমাছি নাহি ঝঙ্কারে রে।।

ও পদ্মারে —
ঢেউয়ে তোর ঢেউ ওঠায় যেমন চাঁদের আলো
মোর বঁধুয়ার রূপ তেমনি ঝিল্‌মিল করে কৃষ্ণ–কালো।
সে প্রেমের ঘাটে ঘাটে বাঁশি বাজায়
যদি দেখিস্‌ তারে, দিস্‌ এই পদ্ম তার পায়
বলিস্‌, কেন বুকে আশার দেয়ালি জ্বালিয়ে
ফেলে গেল চির–অন্ধকারে।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------







পদ্মার ঢেউ রে গানটি যথাক্রমে বেশ কয়েকজন শিল্পী গেয়েছেন তাঁদের মধ্য অন্যতম শচীন দেববর্মণ, ফিরোজা বেগম ও ফেরদৌসি রহমান। এই তিনজনই আমার অত্যন্ত প্রিয় শিল্পী। ফিরোজা বেগম নজরুল গীতির অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন শিল্পী তিনি সরাসরি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছাত্রী ছিলেন। ফিরোজা বেগম কোনো অনুষ্ঠানে একটির বেশী গান করেছেন বলে আমার জানা নেই। তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে তিনি আমাদের দেশের খুবই জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের শিল্পী শাফিন ভাই ও হামিন ভাইয়ের আম্মা।





সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৫
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×