তখন সেভেন কি এইটে পড়ি। ভৌতিক গল্প, মুভি এসব বেশ ভালো লাগত। একদিন মনে হল, আমার নিজের একটা কল্পিত ভূত থাকা দরকার। একটা নাম ঠিক করে ফেললাম ভূতটার। "ওয়েকস্ফিয়ার"। ওয়েকস্ফিয়ারকে আমি ভূত বলতাম না। বলতাম পিশাচ। কারণ ভূত শব্দটা একটু নিরীহ গোছের। এর চেয়ে পিশাচ বেশি ভয়ংকর মনে হয়েছিল আমার। ওয়েকস্ফিয়ারকে কালো-জগত থেকে ডেকে আনার জন্য একটা মন্ত্রও বানি্য়ে ফেললাম। এখনো ভুলিনি মন্ত্রটা -
"গেরি-মিউফালাস-গিমবাডাম-মারভালি-সিফিলিম-বাকুরা-কিউলিমিগ-ফেরাসিস-মরভিলা"।
এটা আবার, একটা বিশেষ ধরনের ভয়ংকর-সুর লাগিয়ে বলতে হোতো। ভূতের নাম এবং মন্ত্র দুটোই একটু ইংরেজী টাইপের। এই ব্যাপারটা প্রথমে খেয়াল করিনি। পরবর্তিতে খেয়াল হলেও আর পরিবর্তন করতে ইচ্ছে হয় নি। ততদিনে আমি ওয়েকস্ফিয়ারের ভয়ংকর সব কান্ডকারখানার গল্প বলে, আমার ছোট ভাই-বোনের কাছে এটাকে বেশ বাস্তব করে তুলেছি।
ওয়েকস্ফিয়ার যখন আমার ওপর ভর করত, তখন আমার কন্ঠটা একটু মোটা হয়ে যেত আর চোখ দুটো হয়ে যেত বড় বড়। হঠাৎ হঠাৎ যখন হেসে উঠতাম, তখন কোনো আওয়াজ হোতো না। শরীরটা একটু দুলে উঠত কেবল, আর দাঁত গুলো বের হয়ে যেত। হাসিটা শেষ হোতো দাঁতে দাঁত চাপা অবস্থায় এবং একটা মুচকী হাসি তখনো লেগে থাকতো। নি:শ্বাস নিতাম একটু আওয়াজ করে। এইসব অভিনয় করতে করতে আমার ছোট ভাই-বোন দুজনকে বলতে থাকতাম ওয়েকস্ফিয়ারের নিজের অভিজ্ঞতাগুলো। ওরা ভয় পেতো। এবং মজা পেতো। আমারো বেশ মজা লাগতো ওদের ভীতু এবং আগ্রহী চাহনি দেখে।
অনেকদিন পর আজ হঠাৎ ওয়েকস্ফিয়ারকে মনে পড়ল। মনে মনে একটু হেসে নিলাম।
বলতে ইচ্ছে করল, "ধন্যবাদ ওয়েকস্ফিয়ার। সেই ছেলেমানুষী সময়গুলোর জন্য।"
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪৫