শান্তি তো সবাই চায়। কিন্তু কিভাবে। অশান্তি কিভাবে হচ্ছে সেইটা ধরতে পারলে শান্তি তো না আইসা উপায় নাই
আমাদের একইসাথে দুটো কাজ করতে হবে শান্তির লক্ষ্যে:
প্রথমত : মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে যাদের আদি নিবাস, হোক তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-বাঙালি কিংবা খুবই সংখ্যা লঘু বাঙালি, ওটা তাদেরই নিবাস, তাদেরই জমা জমি ওখানে, বহিরাগত কারো ওইখানে জোর করে 'বসবাসের অধিকার' নাই। যেমন কোনো বহিরাগতের অধিকার নাই কারো জমি জমা জবরদখল করে পঞ্চগড় কিংবা ফেনিতে বসবাসের অধিকার। কাজেই জবরদখল বন্ধ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত : একই সাথে আমারদের মনে রাখতে হবে, এখন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নাই যে তারা স্রেফ জাতীয়তার প্রশ্নে গ্রনতান্ত্রিক অধিকারের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রনের প্রশ্নে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করবে। সাতকন্যা রাজ্য সাক্ষী, এই অঞ্চলে এখনো এমন কোনো শর্ত তৈরি হয় নাই যে, স্রেফ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগত স্বাতন্ত্রে আলাদ রাষ্ট্র হতে পারে। সুতরাং এই বিষয়টা আমাদের স্পষ্ট করে বলতে হবে।
তৃতীয়ত : কাজেই আমাদের সাবধান থাকতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে, ইউএনডিপি সহ পশ্চিমা লবির প্রচারনার বিরুদ্ধে, কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম, পার্বত্যবাসীরা বাংলাদেশের নাগরিক, সুতরাং ওই অধিবাসীদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেই ওই অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই শক্তিশালী সেনা উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই।
আমরা যেন ভুলে নাই যাই
এক. 'বাঙালি' ও 'মুসলিম' শাসকরা যখনই ক্ষমতায় এলো একাত্তরে তখন থেকেই ঐতিহাসিক ভাবে ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রতি অত্যাচার করে এসেছে। তাদের জন্মগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
দুই. ওখানকার সন্তুর মতো অনেক নেতারাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যতটা না ভারতীয় পরিকল্পনার অংশ হয়ে লড়েছে, তার চেয়ে অনেক কম লড়েছে, স্বেচ্ছায়, নিজের জনগনের জন্য নিজের চাহিদা অনুযায়ি।
তিন. অমন লড়াই ঠেকাতে বাংলাদেশের সেনাশাসকরা ব্যবহার সামরিক শক্তি অনিবার্যভাবেই ব্যবহার করেছে। এবং লড়াই অবসানের পর কোনো রাজনৈতিক সামাজিক কর্মসূচি নেয় নাই, দীর্ঘ মেয়াদে পার্বত্যবাসীর অধিকার নিশ্চিত ও জাতীয় সুরক্ষা, দুইটাই নিশ্চিত করার জন্য।
এখনকার কর্তব্য :
এক . অনেক পার্বত্য প্রশ্ন আসলেই খালি 'সেনাবাহীনির প্রশ্ন' তোলেন। বিএনপিও তোলে, আমাদের মনজুরুল হক ভাইজানও তোলে। মনে হয় এটা শুধু সেনাবাহীনি থাকা না থাকার প্রশ্ন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য ওইটা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ন জায়গা। ওইখানে স্থায়ি ও শক্তিশালী সেনা উপস্থিতি না থাইকা তো উপায় নাই।
দুই. যেটা নিশ্চিত করতে হবে যে, সেনা উপস্থিতি কোনোভাবেই জনজীবন কে নিয়ন্ত্রন করবে না। যেমন করেনা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের কিংবা ঢাকা ক্যন্টনমেন্টের সেনা উপস্থিতি।
তিন. সরকারকে আমাদের পক্ষ থেকে, নাগরিকদের পক্ষ থেকে চাপ দিতে হবে যে, যাতে ওখানে এমন সব রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক কর্মসূচি নেয়া হয় যাতে করে তারা আমাদের মতোই বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করে।
চার. অবশ্যই সব অবৈধ সেটেলার কে ফেরত আনতে হবে।
পাঁচ. ইউএনডিপি'র কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। যারা এই অঞ্চলে একটা ক্রিশ্চিয়ান বেল্ট তৈরি করার জন্য কাজ করছে। প্রত্যক্ষ উন্নয়ন কর্মসূচির নামে বিচ্ছিন্নতার নৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি তৈরি করতে। পার্বত্য কমিশনকে সাথে নিয়ে।
ছয়. ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কাজ করতে দিতে হবে। সক্রিয়ভাবে
সাত. যারা বাংলাদেশে বসে পার্বত্য চট্টগ্রামের 'বিচ্ছিন্নতার অধিকারের মতো বেবুঝ কথা' বলে, তাদের দৌড়েও উপর রাখতে হবে। যাতে এমন কথা বলার সুযোগ না পায়। এরা হয় গনতান্ত্রিক অধিকারের জায়গা থেকে আত্ননিয়ন্ত্রনের অধিকার আর স্রেফ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিচ্ছিন্নতার ফারাক- এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রিড়নক হয়ে যেই জাতীয়তার দাবি করা হয় সেইটার অগ্রহনযোগ্যতা ইত্যাদি বোঝেন না, নয় বুঝেও না বোঝার ভান করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৩৯