somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জসিম উদ্‌দীনের 'পল্লীবর্ষা' এবং একটি নস্টালজিক সকাল

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন স্কুলে পড়ি। ক্লাস এইট। বৃষ্টি তখন আমার কাছে বেশ আনন্দের একটা বিষয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কোনদিন যদি দেখতাম যে অঝোরে বৃষ্টি নামছে, তাহলে আমাকে আর পায় কে। তখন আমাদের স্কুলের আবার একটা অদ্ভুত নিয়ম ছিল (জানিনা এখনো আছে কী'না), বৃষ্টির পানিতে মাঠ ডুবে গেলে সেদিন স্কুল ছুটি দিয়ে দেয়া হতো। মাঝেমাঝে আমরাও দু-চারজন ইচ্ছেমতো বৃষ্টিতে ভিজে (কখনো কখনো ছাদ থেকে গড়িয়ে পড়া পানিতে অথবা কলের পানিতে শরীর ভিজিয়ে) শুক্কুর ভাইয়ের কাছে গিয়ে আবদার করতাম স্কুল যেন ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। কালেভদ্রে কখনো-সখনো সেই টোঁটকা কাজে লাগতো, তবে বেশিরভাগ সময়েই মাঠে মারা যেত। বৃষ্টির কারণে কোনমতে একদিন স্কুল ছুটি হয়ে গেলে সেদিন খোকন ভাইয়ের শরবতের দোকানে ব্যাগ রেখে চলত ননস্টপ ঘোরাঘুরি। স্কুল বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশী খুশি হতাম যে কারণে তা হলো, ভারী ব্যাগটাকে আজ আর বয়ে নিতে হবে না। টিফিন বাদে সর্বমোট আট পিরিয়ড, এর মধ্যে প্রতিটি পিরিয়ডের জন্য আলাদা আলাদা খাতা, আলাদা বই, তার মধ্যে কয়েকটার আবার পার্ট-১, পার্ট-২ ও ছিল। বইগুলোর একেকটার যা সাইজ, দেখলেই মাথা ঘোরায়। সেগুলো এক ব্যাগে জায়গা হতো না বলে আমার দুটো ব্যাগে নেয়া লাগতো। একটা কাঁধে আর একটা হাতে। বই-খাতার ওজনে ভাল করে হাঁটতেও পারতাম না।

তো যাই হোক, মূল আলোচনায় আসি। এরকমই এক বাদলা দিনে, সেদিনও খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে স্কুল টাইম শুরু হবার আগে আগে বৃষ্টি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে আমরা যারা বৃষ্টি উপলক্ষ্যে ছুটির আশা করছিলাম তাদেরও মুড অফ হয়ে গেল। কী আর করার, মন খারাপ করেই কাঁধে ভারী স্কুলব্যাগটা ঝুলিয়ে ক্লাস করার জন্য রওয়ানা দিলাম। যেই প্রথম পিরিয়ড শুরু অমনি আবার ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামা শুরু হলো। এবারে মন খারাপের পরিমাণ আগের থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হলো। শালার বৃষ্টি সেই নামাই নামলি, তবে আগে নামলি না কেন?

মনের দুঃখ মনেই থেকে গেল। ক্লাস এইটে আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন Humayun Kabir স্যার। প্রচন্ড স্মার্ট এবং ফ্রেন্ডলি একজন শিক্ষক। স্যারকে আমি খুব পছন্দ করতাম, এর মূল কারণ হলো বাংলা ছিল আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় আর স্যার এই বাংলাকে এতো দারুণ করে পড়াতেন যে বলার মতো না। তো স্যার ক্লাসে ঢুকেই বুঝলেন সমস্যা কোথায়। যথারীতি নাম ডেকে সেদিন পড়াতে শুরু করলেন পল্লীকবি জসিম উদ্‌দীন এর 'পল্লীবর্ষা' কবিতাটি। এতো দারুন করে সেদিন কবিতাটি বুঁঝিয়ে বুঁঝিয়ে আমাদের পড়ালেন যে আমি একেবারে বিমুগ্ধ হয়ে গেলাম। এরপর থেকে বৃষ্টি এলেই আমি মনে মনে কবিতাটি আওড়াই।


পরীক্ষা শেষ, ভার্সিটিতে ক্লাস নেই। ছুটি পর্ব চলছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই বৃষ্টি দেখে মনে পড়লো সেই স্কুলের কথা, পুরোনো সেই বৃষ্টিময় দিনগুলোর কথা, 'পল্লীবর্ষা'র কথা আর হূমায়ুন স্যারের কথা। কয়েকবছর আগের সেই জীবনে ফিরে গেলাম। আগে যেই ক্লাসে না যাওয়ার জন্য বায়না করতাম, আজ আবার সেই ক্লাসে ফেরার জন্যই মনটা উসখুস করতে লাগলো। আহা! যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই সময়টাতে! অপূরণীয় ইচ্ছে তবুও ভালোলাগার একটা স্রোত বয়ে গেল সারা শরীর জুড়ে। নস্টালজিকতার শুরু বোধহয় এভাবেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×