একজন মানুষ ক্ষুধায় কতোটা কাঁতর হলে পাথর গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খায়। একজন মানুষ কতোটা অসহায় হলে কাঁটায় ভরা বিষাক্ত ক্যাকটাস চিবিয়ে খায়। একজন বাবা-মা কতোটা অসহায় হলে তার দুই সন্তানকে ফেলে রেখেই পাড়ি জমায় শুধুমাত্র নিজেরা বাঁচার জন্য। একজন শিশু কতোটা নিঃস্ব হলে পুরো শৈশব-কৈশোর কাটিয়ে দেয় ক্যাকটাসের পুষ্টিগুণহীন লাল ফল খুঁজতে খুঁজতে। পানির অভাব কতোটা তীব্র হলে একজন মানুষ তার সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয় কখনো গোসল না করেই।
আমরা মুখে বিশ্বায়নের কথা বলি, বিশ্ব পরিবর্তনের কথা বলি, জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলি। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে কতটা মারাত্মক হতে পারে তা কী আমরা একবারও ভেবে দেখেছি, অনুভব করার চেষ্টা করেছি? আসলে ভরপেটে শহরে উঁচুদালানগুলোর আরামদায়ক কামরায় বসে কল্পনার ঘোড়া হয়তো চাঁদ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু এই মানুষগুলোর কষ্টের ধারেকাছেও আমাদের কল্পনা কখনো পৌছাতে পারে না। পারা সম্ভবও নয় কখনো।
বাংলাদেশ নিজে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির হুমকির মুখে আছে। হুমকির মুখে আছে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের লাখো জনগন। উপকূলীয় এলাকায় এখনো এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে উপহার হিসেবে কাউকে টাকা না দিয়ে এক বোতল পানি দিলে তাদের মুখে হাসি ফোঁটে। সুপেয় পানির সেখানে এতটাই অভাব। .যদিও এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তারা বিন্দুমাত্রও দায়ী নয় তবুও তাদেরই এজন্য সবচেয়ে বেশী ভুগতে হয়, কষ্ট করতে হয়।
সারা বিশ্বে কার্বণ নিঃসরণের প্রায় ২৫ ভাগই করে যুক্তরাষ্ট, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা কখনোই একথা স্বীকার করেননি। গত প্যারিে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনে বারাক ওবামা এই প্রথা ভেঙ্গে প্রথমবারের মতো জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেন এবং এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য ফান্ড গঠনেরও প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময় থেকেই প্রেসিডেন্ট পদে সম্প্রতি বিজয়ী হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের কথাই অস্বীকার করে আসছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর এই তহবিলও তিনি ভেঙ্গে দেবেন।
আগে থেকেই যারা শুধুমাত্র ক্যাকটাস এবং পাথর গুড়ো খেয়ে বেঁচে আছে ট্রাম্পের এই গোড়ামী এবং অদূরদর্শীতার কারণে ভবিষ্যতে তাদের কপালে হয়তো সেটুকুও জুটবে না। আফ্রিকার হতদরিদ্র এবং দূর্ভাগা সেই মানুষগুলোর জীবনের কষ্ট্রের কথা তুলে এনেছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টোফ। ক্রিস্টোফের চোখে অন্তত একবার তাকিয়ে দেখুন আপনার এতদিনের অগ্রাহ্য করা দুনিয়াটাকে, আর প্রস্তুতি নিন এভাবেই চলতে থাকলে একদিন ওদের মতোই পরিস্থিতির শিকার হতে হবে আপনাকে, আমাকে, আমাদের সবাইকে।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নিকোলাস ক্রিস্টোফের কলামটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৫