একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। অর্থাৎ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।বিএনপির নেতৃত্বাধীন উভয় জোটই নির্বাচনে আসার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। বলা যেতেই পারে এবারের নির্বাচন আর যাইহোক আরেকটি ৫ জানুয়ারি হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে অনেক সাবধানে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনেক ভাল ভাল কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি সকলকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে চান। যদিও তাঁর দলের নেতাদের "নৌকার বিরোধীতাকারীদের গুলি করা হবে" বলে দেওয়া ভাষণ আমরা অনলাইনে ভাইরাল হতে দেখেছি।তবে আমরা সাধারণ জনগণ প্রধানমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখতে চাই।
তার থেকেও বেশি ভরসা রাখতে চাই নির্বাচন কমিশনের উপর। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমানে সবথেকে বেশী ক্ষমতা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। কমিশন এই তিন মাস কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। একমাত্র নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাঁদের কেউ বরখাস্তও করতে পারবে না। সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে যেকোন পদক্ষেপ নিতে পারে কমিশন। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাঁদের কি সেই সৎ সাহস আছে? তারা কি পারবে দেশের সাধারণ জনতার আশা পূরণ করতে?
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে অবশ্য সিইসি অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি কি পারবেন তার দেয়া আশ্বাস রাখতে? পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও ইসির পক্ষ থেকে এ ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেসময়ের অবস্থা আমরা সকলেই দেখেছি। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও দখলবাজির ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দলের এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হলেও কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সারাদেশব্যাপী এত বড় নির্বাচন বাস্তবায়ন আদৌ এই কমিশনের দ্বারা সম্ভব কিনা। নাকি তাঁরা একটা নামেমাত্র নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাঁয়তারা করছেন। কমিশন যদি আসলেও নিরপেক্ষ থাকতে চান তাহলেও তাঁদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তাদের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করা। যদিও তাঁদের কর্মকান্ডে মনে হয়না তাঁদের তেমন কোন ইচ্ছা আছে।নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আরো বেশি মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনী সহিংসতায় ইতঃমধ্যে দুই জন নিহত হয়েছেন। জনমনে আতংক ঘণিভূত হচ্ছে। মানুষ ভোট দিতে চায় কিন্তু ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার মত পরিবেশ নির্বাচন কমিশন তৈরী করতে পারবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। আরেকটি প্রশ্ন হল বিরোধীরা শিবির কতটা স্বাধীনভাবে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারবে, আদৌ পারবে কিনা। মাননীয় সংসদ সদস্যরা যেখানে স্বপদে বহাল থেকে, সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন সেখানে নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের কতটাই বা নিরাপত্তা দিতে পারবে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।
এতসব সমস্যা নিয়ে একটি নির্বাচন সুষ্ঠূভাবে সম্পাদন করা অগ্নিপরীক্ষারই নামান্তর। তবে জনগণ মনে করে এই অগ্নিপরীক্ষা তাঁরা উত্তীর্ণ হতে পারবেন যদি তাঁরা নিজেদের সৎ সাহস দেখাতে পারেন, নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে পারে।
১৭.১১.১৮
সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
গাইবান্ধা
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৩১