somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ সম্পর্কে একটি চিন্তার সমাধান !!

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তার আরশ বহন করছে ৮জন ফেরেশতা। এটা জানার পর আমাদের মাথায় মানুষ হিসেবে কিছু চিত্র আসতে পারে। যেমন ৮জন বিশাল শক্তিশালী ফেরেশতা আরশকে বহন করে রেখেছে !! তারা কোথায় দাড়িয়ে এটা বহন করছে !! তারা দূর্বল হয়ে পড়ে কিনা !! আল্লাহর আরশ কি তাদের উপর নির্ভরশীল !!! ইত্যাদী

বক্তব্যের শুরুতেই বলছি এসব প্রশ্ন হল মানবীয় প্রশ্ন এবং মানবিক দূর্বলতাপ্রসূত প্রশ্ন। আমাদের কাছে যে বিষয়ের কোনো তথ্য নেই,সে বিষয়ে আমরা সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারিনা বরং অনুমান নির্ভর ছবি মস্তিষ্কে ভেসে ওঠে,যা ভুল।

আল-কুরআনে সম্ভবত সূরা আল ইমরানে আল্লাহ তায়ালা বলেন ,এই কুরআনের কিছু অংশ সরল,এটাই আলকুরআনের মূল অংশ, এর কিছু অংশ রূপক,যার জ্ঞান কেবল তোমার প্রতিপালকেরই রয়েছে। আল্লাহ আরো বলেন-যাদের মনে বক্রতা রয়েছে,তারা এই রূপক আয়াতকে নিজেদের মত করে বাকা করে উপস্থাপন করে...

৮ জন ফেরেশতার আরশ ধারন করে রাখাটা যদি আক্ষরিকভাবে সত্য হয় তাহলেও এর অর্থ এই নয় যে,আল্লাহর আরশ সেসব ফেরেশতার উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন,কোনো কিছুই তার তুলনীয় নয় সেটা তিনি সূরা ইখলাসে জানিয়েছেন।

মূলত: আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। তিনি তার যেসব সৃষ্টিকে জ্ঞান দান করেছেন(যেমন জীন, মানুষ, অবশ্য জীন,মানুষের আগেও তার এসব সৃষ্টি ছিলো। তিনি ইচ্ছা করেছেন তাই সৃষ্টি করেছেন,তবে অনর্থক কিছু করেননি) তাদের সামনে নিজের ক্ষমতা নানানভাবে উপস্থাপন করতে চান। তিনি তার সৃষ্টির মধ্যে সৌন্দর্য আনয়ন করেছেন এবং নানান উপকরণ তৈরী করেছেন। যেমন তিনি ইচ্ছা করলেই সূর্য ছাড়াই আমাদেরকে আলো ও তাপ দিতে পারেন কিন্তু তিনি আমাদের জন্যে সূর্য সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তার সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব , মরাক্রমশালীতা,দয়া,ভালোবাসা ইত্যাদী প্রকাশ করেছেন। তিনি এভাবেই করতে চেয়েছেন তাই করেছেন।

মহাবিশ্বকে তিনি বিশাল করে সৃষ্টি করেছেন ,যাতে মানুষ এর স্রষ্টার বিশালত্ব অনুধাবন করতে পারে। বিশাল এই মহাবিশ্ব এতটাই বিশাল যে এর আকার পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কল্পনা করতে পারেনি। এটি আবার প্রচন্ড গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে(আল কুরআনও তাই বলছে)। অনেকে গোলাকার একটি বল অথবা ডিমের মত এর আকার অনুমান করেছেন। আবার এটাও ধারনা করেছেন,যেহেতু এটি প্রতি সেকেন্ডে ২০ হাজার মাইল বেগে সম্প্রসারিত হচ্ছে,তাই নিশ্চয় ওপাশে শূণ্যস্থান রয়েছে,নইলে কিভাবে বড় হবে !!

এই মহাবিশ্বের পুরোটাই তারকা দ্বারা পরিপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের জানামতে মহাবিশ্বের সবথেকে কাছাকাছি যে দুটি তারকা অবস্থান করছে,তাদের একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ৪ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ আলোর গতিতে(১ সেকেন্ড= ১লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা প্রায় ৩ লাখ কি:মিHappy উক্ত কাছের তারকায় পৌছতে সময় লাগবে ৪ বছর। সূর্যও একটি তারা,যার নিজস্ব আলো ও তাপ রয়েছে। সূর্য হল মহাবিশ্বে মাঝারি সাইজের একটি তারা। এরকম হাজার হাজার কোটি তারা নিয়ে একটি ছায়াপথ গঠিত,আর এরকম হাজার হাজার কোটি ছায়াপথ রয়েছে মহাবিশ্বে। বিজ্ঞানীরা যেটুকু জানতে সক্ষম হয়েছে তা অতি সামান্য। আল্লাহ তায়ালা একটি আয়াতে বলেন-আমি নিকটতম আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত করেছি।....অর্থাৎ যে মহাবিশ্বের কথা জানলাম তা আসলে ১ম আসমান। এরপর আল্লাহ আরও ৬টি স্তর সৃষ্টি করেছেন,যেগুলো এর চাইতে আরও বিশাল। এসবকিছু মিলে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এর উপর হল আল্লাহর আরশ,এর উপর কুরসী এবং তার উপর আল্লাহ সমাসীন।

এই শেষ লাইনটি বুঝতেই ভুল হয়েছে। আল্লাহ আরশে সমাসীন,এটার অর্থ আমরা মানুষের মত বুঝেছি। আমরা মনে করেছি আল্লাহ চেয়ারে বসে আছেন। আর চেয়ার ধরে রেখেছে ৮জন ফেরেশতা। রাজা বাদশাহদের সিংহাসন দেখতে অভ্যস্ত মন বড়ই হাস্যকর চিত্র তৈরী করেছে।

মূলত: আল্লাহ আরশের উপর কিভাবে আছেন তা তিনি প্রকাশ করেননি। প্রকাশ করলেও বুঝতে পারতাম না। কারন আল্লাহ নিজের সম্পর্কে সূরা ইখলাসে বলছেন-তার শুরু নেই,তার শেষও নেই। তিনি কোনো কিছুর মত নন। যার শুরু নেই আবার শেষও নেই তাকে আরশে মানুষের মত বসানোর চিন্তা করা হল-নেহায়েৎ মূর্খতা। সঠিক উত্তর হল-"আমরা জানিনা"।

কিন্তু এই সুবিশাল মহাবিশ্ব ও আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করে এবং আরশের বিশালতা খানিকটা প্রকাশ করে আল্লাহ নিজের বিশালত্ব প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে বুখারী,মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীস অনেকটা ভুলে গেছি ...সেটা এরকম যে গোটা মহাবিশ্ব ও আসমানসমূহের তুলনা যেন একটি যুদ্ধঢালের উপর ৭টি পয়সা। আর এর সাথে কুরসীর তুলনা যেন এই ঢালসমেত পয়সাগুলোকে বিশাল মরুভূমিতে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে মরুভূমি হল কুরসী।.......

মূলত : এগুলো আমাদের মাথায় আসবে না। তবে আল্লাহ এসব সৃষ্টি করেছেন তার ইচ্ছা হয়েছে তাই। তিনি এভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। বিভিন্ন বিষয় সৃষ্টি করে,নানান যৌক্তিক মানদন্ড,ভারসাম্য তৈরী করে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই সব কিছু হয়ে যায়। কুন বললেই সবকিছু সৃষ্টি হয়ে যায়,কিন্তু তিনি অগনিত ফেরেশতা তৈরী করে তাদের জন্যে নানান কাজ বন্টন করেছেন,তাদের কাজের মাধ্যমে তারা আল্লাহর প্রশংসা করে। এর অর্থ এই নয় যে, ফেরেশতারা তাকে সাহায্য করছে। বরং তাকে কারো সাহায্য করার প্রয়োজন হয়না। এটা তার সৌন্দর্য যে তিনি ফেরেশতা তৈরী করে নানান কর্ম বন্টন করেছেন। তিনি আদেশ করলেই এক মুহুর্তে হায়াত শেষ হওয়া ব্যক্তিদের রুহ বের হয়ে নির্দিষ্ট স্থানে গমন করবে কিন্তু তিনি এ বিষয়ে মালাকুল মওতকে রেখেছেন(কোথায় কি ঘটছে সে সম্পর্কে তিনি সম্পুর্ণ অবহিত)। যেমন বুখারী বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে-কোনো আসরে আল্লাহর শ্মরন করা হলে ,বা আল্লাহর প্রশংসা করা হলে একজন ফেরেশতা তাদেরকে তার ডানা দ্বারা ঢেকে দেয়,তাকে আরেকজন ঢেকে দেয়...এভাবে আরশ পর্যন্ত পৌছে। আল্লাহ সবকিছু জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করেন....ওখানে কি হচ্ছে ??.........এটা হল তার নিজেকে প্রকাশের একটি ভঙ্গী বা স্টাইল। আল্লাহ সেসব ব্যক্তিদের অবস্থা অবলোকন করে পুরষ্কার লিখে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ফেরেশতাদের সামনে নিজের অহংকার প্রকাশ করেন এভাবে।.... আল্লাহ ইচ্ছা করলেই কবরের অবস্থাটা বাদ দিয়ে সরাসরি জান্নাত,জাহান্নামে মানুষকে পাঠাতে পারেন,তার কাছে কৈফিয়ৎ নেওয়ার কেউ নেই। কিন্তু তিনি এভাবেই তার কাজটি করতে পছন্দ করেছেন। আর শেষ বিচারে সবকিছুই তিনি ধ্বংশ করে প্রমান করবেন....একমাত্র আল্লাহ'ই অনাদী ও অনন্ত। যখন কোনো কিছুই থাকবে না,তখন থাকবে একমাত্র আল্লাহ।

শেষ কথা হল আরশের উপর যে কুরসী,সেখানে আল্লাহ সমাসীন। এটুকু বিশ্বাস করলেই যথেষ্ট। তিনি সেখানে কিভাবে আছেন,তারপক্ষে কিভাবে থাকা সম্ভব এ বিষয়ের চিন্তা এই সংকীর্ণ মাথায় আনা সম্ভব নয়। তিনি উপরে আছেন,আবার পৃথিবীও ঘুরছে। সর্বদা নীচের মানুষ উপরে,উপরের মানুষ নীচে আসছে। এমতাবস্থায় উপরে বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। তাহলে যারা পৃথিবীর নীচের দিকে এখন আছে তারা উপরে হাত তুলে কি ভুল করছে,নাকি আমরা ভুল করছি ? তবে কি তিনি আমাদের চারিদিকে বেষ্টন করে আছেন ??

উত্তর হল না, তিনি উপরেই আছেন এটাই রসূল(সাঃ) আমাদেরকে জানিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর কাছে উপর বলতে কি বুঝায়,তা বান্দার সীমাবদ্ধ চিন্তা দ্বারা বের করা সম্ভব নয়। আল্লাহ উপরে আছেন,এটা বিশ্বাস করতে হবে,মেনে নিতে হবে। এটাই যথেষ্ঠ।

তিনি কিভাবে আছেন ? এই প্রশ্নের উত্তর হল: তিনি তার মত আছেন। তার জন্যে যেভাবে থাকা শোভা পায়,সেভাবে আছেন। আমরা জানিনা। যেটুকু জানানো হয়েছে,তা যথেষ্ট। এসব নিয়ে গবেষনা আমাদের দায়িত্ব নয়। বরং আমাদের দায়িত্ব হল--আল্লাহ বলেন-"আমি জিন এবং মানুষকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যেই পাঠিয়েছি" কুরআন আর সুন্নাহ অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে পালন করতে হবে। এর মধ্যেই মানব জন্মের মূল স্বার্থকতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×