somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা মেয়ে আর আমি

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে ছবি আঁকছি । হঠাৎ দেখি ১টা কৌতূহলী মুখ আমার স্কেচ খাতার উপর ঝুঁকে পড়েছে ! ভীষণ মায়াবী চেহারার একটা মেয়ে ! মেয়েটার সাথে আলাপ জমাতে ইচ্ছে হল । চট করে বুদ্ধিদীপ্ত কিছু বলতে গিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । ক্যাবলার মত দেঁতো হাসি হেসে বললাম , “পেন্সিলটা কিন্তু নতুন না ।” মেয়েটা সাথে সাথে বললো , “কিন্তু পেন্সিলে আঁকা ছবিটাতো নতুন ।” তার মুখে ভুবন ভোলানো না হোক অন্তত আমাকে ভুলিয়ে দেবার মত অসম্ভব সুন্দর একটা হাসি । মনে হল যে ভিঞ্চি সাহেব যদি এ যুগের হতেন এবং এই মেয়ের দেখা পেতেন , তবে মিস (অথবা মিসেস) মোনালিসা ফেল মারতেন । বহু বছর ধরে দখল করে রাখা বিশ্ববিখ্যাত হাসির খেতাবটা এই মেয়েই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিতো !
হঠাৎ “এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস ?” বলে খেঁকিয়ে ওঠা একটা কণ্ঠস্বর শুনে চমকে গেলাম । প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে দেখি রাগি রাগি চেহারার একজন মোটা মহিলা ভ্রু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন । ওনার পাশে ১২/১৩ বছরের একটা ছেলেও দাঁড়িয়ে আছে । ঐ মহিলা ছেলেটাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন । মেয়েটা “আসছি” বলে ঐ মহিলার পেছনে পেছনে না গিয়ে উল্টো দিকে হাঁটতে লাগলো ! ঘটনা কি দেখার জন্য উঠে কয়েক পা এগিয়ে গেলাম । এবার দেখি যে মেয়েটা তার মোবাইল সেট এগিয়ে ধরে দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছে ! খুশিতে ‘আবেগাপ্লুত’ হয়ে গেলাম ! সে নিশ্চয়ই আমার মোবাইল নম্বর চাইবে । তার মোবাইল সেটে আমার মোবাইল নম্বর তুলে দেবার জন্য হাত বাড়ালাম । কিন্তু মেয়েটা মোবাইলটা আমার হাতে না দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই মোবাইল ক্যামেরাতে আমার একটা ছবি তুলে ফেললো ! বললো , “শীঘ্রই আমাদের দেখা হচ্ছে ।” সে হন হন করে হাঁটতে লাগলো কিছুটা পথ এগিয়ে যাওয়া অন্য দুজনকে ধরার জন্য । আমিও খুশিতে আত্মহারা হয়ে বেকুবের মত তাদের পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলাম ।
আমি রাস্তার এক পাশে , ওরা অন্য পাশে । চারপাশের কোন কিছুকেই তোয়াক্কা না করে আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাঁটছি । মেয়েটাও একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসছে ! এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের হলের সামনে চলে এলাম । ওরা ৩ জন ১টা রিক্সায় উঠে নিউ পল্টনের দিকে চলে গেলো ।
মনের সুখে গুন গুন করতে করতে হলে ঢুকলাম । রুমে ব্যাগ রেখে হাত মুখ ধুতে বের হয়ে ঝন্টু ভাইয়ের রুমে হৈচৈ শুনতে পেলাম । বিষয়টা কি দেখতে গিয়ে দেখি যে পোলাপান হৈচৈ করে কম্পিউটারে হিন্দি সিনেমা দেখছে । “এতে আবার হৈচৈ করার কি আছে ? ” মনে মনে ভাবতে ভাবতে ঐ রুম থেকে বের হতে যাবো , এমন সময় দেখি ঝন্টু ভাই উদাস ভাবুকের মত দরজায় দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন । এই লোকটাকে আমি একটুও সহ্য করতে পারি না । ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে একবার আমাকে র‍্যাগ দেবার কথা বলে কনকনে শীতের রাতে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় হলের মাঠে দৌড়াতে বাধ্য করেছিলেন । সেই থেকে আমি প্রতিশোধ নেবার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় আছি । আজ হঠাৎ তাঁকে এরকম উদাস ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে সামলাতে পারলাম না । এক দৌড়ে রুম থেকে বের হবার সময় দু’হাতের ধাক্কায় তাঁকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে আমার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম ।
আমাদের রুমে আর কেউ নেই । ঝন্টু ভাই উঠে এসে পাগলের মত দরজা
ধাক্কাচ্ছেন । আর তার সাথে তাল মিলিয়ে ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছেন । এদিকে আমার বুকের ভেতর ঢোলের বাজনা শুরু হয়ে গেছে । বেশ কয়েক মিনিট পার হবার পর হঠাৎ দরজা ধাক্কানো বন্ধ হল । টিভি রুমের বিকট শব্দের সাউন্ড বক্সে শুনতে পেলাম যে বগুড়াতে সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে । দরজা একটু ফাঁক করে দেখলাম যে ঝন্টু ভাই দরজার সামনে নেই ! হয়তো তিনি গোলাগুলির কথা শুনে টিভি রুমের দিকে গেছেন । মনে মনে ভাবলাম , “এই সুযোগ । পরে যা হবার হবে । এখন পালাই ।”
আমি সি, এন, জি, র মত তীব্র গতিতে দৌড়াচ্ছি । এই দৌড়েই ঘটলো যত বিপত্তি । আর মনোযোগ দিতে পারছিনা । সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে । বুঝতে পারলাম যে এতক্ষণ যা ঘটেছে তার সবই একটা স্বপ্নের ঘটনা । বিষয়টা টের পাওয়ার কারনে মনে হল যে আমার স্বপ্নটা শেষ হয়ে যাচ্ছে । তবু প্রাণপণে স্বপ্নটাকে চালু রাখার চেষ্টা করতে থাকলাম । ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন কিভাবে চালু রাখা যায় , তার কোন পদ্ধতি আমার জানা নেই । কি করবো বুঝতে না পেরে দৌড়ের গতি বাড়াতে লাগলাম । দৌড়টা কোথায় গিয়ে শেষ হবে জানি না । সে বিষয়ে কিছু ভাবতেও পারছি না । মাথায় ঘুরছে কেবল একটা কথা , “যে করেই হোক স্বপ্নটা চালু রাখতেই হবে । স্বপ্নের পরবর্তী অংশে মেয়েটার সাথে আমার প্রেম হবে । বন্ধু বান্ধবের কাছে বলতে পারবো যে বাস্তবে নাহয় নাই হল , স্বপ্নের মধ্যে তো একবার অন্তত প্রেম করেছি ।” হঠাৎ মাথায় আরেকটা চিন্তা এসে পড়লো । স্বপ্নের পরবর্তী অংশে তো ঝন্টু ভাইয়ের সাথেও আমার মোকাবেলা হবার কথা । ঐ লোক তো আমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না । স্বপ্নটার পরবর্তী অংশের কোন এক দৃশ্যে হয়তো আমাকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যাবে । আমার পাশে ছল ছল চোখে বসে থাকবে ঐ মেয়েটা ! প্রেম হবার আশায় স্বপ্ন চালু রাখবো , নাকি ধোলাইয়ের ভয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেবো ঠিক করতে পারছি না...
চোখ খুলে দেখি ঘড়িতে ৭টা বেজে আরো ৮ মিনিট পার হয়ে গেছে । ফুরফুরে মেজাজে বিছানা থেকে নামলাম ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×