somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠগড়ায় হুমায়ূন আহমেদ, তার সাহিত্য, তার পাঠক এবং আমি

২২ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন আহমেদ এর মৃত্যুর পর, একজন বিশিষ্ট ভদ্রলোক (নাম বলতে চাচ্ছি না), হুমায়ূন আহমেদ এর সাহিত্য এবং তার সাহিত্যপ্রেমীদের নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন young nite নামক টিভি অনুষ্ঠানে!
তিনি বলেছিলেন,
১/ হুমায়ূন আহমেদ এর পাঠকরা, হুমায়ূন আহমেদ এর সাহিত্য ছাড়া আর কোন সাহিত্যের খবর রাখেন না!
২/ হুমায়ূন আহমেদ এর সাহিত্যের মান খুব কম, খুবই হালকা তার লেখা!

আমার পক্ষ থেকে তার জবাব :

দাদা, হুমায়ূন আহমেদ এর মৃত্যুর পর, সব জায়গায় হুমায়ূন সাহিত্য বিশ্লেষণের একটা হিড়িক পড়ে গেল দেখতে পাচ্ছি! আপনিও নানা জায়গায় তার সাহিত্য এবং তার ভক্ত-পাঠক নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করছেন দেখতে পাচ্ছি! তাই আমার মনের কিছু কথা আপনার সাথে শেয়ার না করে পারছি না!

#আপনি বললেন, হুমায়ূন এর ভক্তরা হুমায়ূন সাহিত্যের বাহিরের সাহিত্য সম্পর্কে খবর রাখে না!!!
এটা কেমন কথা হল দাদা? আমি মানছি যে মুষ্টিমেয় কিছু পাঠক হয়তো থেকে থাকবেন, যারা হুমায়ূন এর বাইরে খুব কম পড়েছেন। কিন্তু আপনি ঢালাওভাবে সব হুমায়ূন ভক্তকে এই ক্যাটাগরিতে কিভাবে ফেলেন দাদা?
যারা হুমায়ূন ছাড়া অন্য সাহিত্য কম পড়ে, তাদেরও কিন্তু এর পিছনে যুক্তি আছে! হুমায়ূন সাহিত্যে তারা খুজে পায় সহজ সাবলীল ভাষায় নিজের চেনা অচেনা জগতের বর্ণনা, যেটা পড়তে তাদের দাঁত ভাঙ্গে না, কিংবা বুঝতেও কষ্ট হয় না! একজন মানুষ, যিনি তার স্বল্প অবসরে মানসিক ক্লান্তি কাটাতে বই পড়েন, তাকে প্রাঞ্জল লেখাই কাছে টানবে, দুর্বোধ্য লেখা নয়, এবং এটাই কিন্তু স্বাভাবিক! তাই তারা তাদের স্বল্প সময়, যে লেখা সবচেয়ে বেশি মনের খোরাক যোগায়, সেই লেখা পড়ার পেছনে ব্যয় করেন। গোটা দুনিয়ার তাবৎ সাহিত্য তাদের কাছে টানে না, কারন এক হুমায়ূন এর বিশাল সৃষ্টিই তাদের জন্য যথেষ্ট। এবং এই কৃতিত্ব একমাত্র হুমায়ূন আহমেদ এর! কারন এই শ্রেণীর পাঠক, অন্য কোন লেখকের দরবারেও যেতে পারত (যারা শুধু হুমায়ূন পড়ে), কিন্তু অন্য লেখকেরা এদেরকে কাছে টানতে পারেনি!

এবার আসি, যারা হুমায়ূন এর পাশাপাশি বাকি সবও পড়েন, তাদের কথায়। এই শ্রেণীই কিন্তু বেশি, অথচ আপনি তাদেরকে ঢালাওভাবে বললেন যে, তারা অন্য সাহিত্যের খোজ রাখে না! আমি নিজেও এই শ্রেণীতে পরি। এই শ্রেণীর পাঠক, হুমায়ূনও পড়েন, সেই সাথে তাবৎ দুনিয়ার সাহিত্যের খোজও রাখেন। নিজ নিজ রুচি আর পছন্দ অনুযায়ী বেঁছে নেন অন্যান্য লেখকদের বই।
আমি আমাকে দিয়েই বলি, আমি আপনার তুলনায় বয়সে ছোট, তাই আপনার মতো হয়তো এখনও পড়তে পারি নি। তবে দাদা, এই বয়সেও, পাঠ্য বই এর বাইরে শুধু সাহিত্যের বই ই পড়ে গেছি। খেলাধুলা বা অন্য কাজের চেয়েও এসব বই পড়ায় আমার সময় বেশি কাটে। যা পেয়েছি তাই পড়েছি। সেটা উইপোকায় কাটা পুরনো বই থেকে শুরু করে হাল আমলের ই বুক পর্যন্ত। বেষ্ট সেলার বই থেকে শুরু করে, একেবারেই ব্যর্থ বই পর্যন্ত। একেবারে অন্ধ হবার আগ পর্যন্ত ইনশাল্লাহ পড়ে যাব।
কিন্তু আমি গর্ব করেই বলতে পারি, আমি একজন হুমায়ূন ভক্ত :)
তাই, হুমায়ূন ভক্তরা অন্যান্য সাহিত্যের খোজ রাখে না, এই অপবাদ দেয়াটা ঠিক হবে না একদমই।

## এবার আসি তথাকথিত সাহিত্য বিশ্লেষণে......
আচ্ছা দাদা, সাহিত্যের গভীরতা কি দিয়ে মাপে? কোন মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়? কারা মাপে? সাহিত্য কার বাপের সম্পত্তি দাদা?
যারা সাহিত্যের বিচার করতে আসে, তাদের সেই বিচারের অধিকারটা কে দিয়েছে দাদা?

একটা বেষ্ট সেলার বইও তো আপনার কাছে খারাপ লাগতে পারে, আবার একটা ৫ কপি বিক্রি হওয়া বইও অসাধারণ লাগতে পারে, তাই নয় কি?
একই সাহিত্য তো রুচি ভেদে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রকমের।
তাহলে, যেই পণ্ডিতরা সাহিত্যের বিচার করতে আসে, তাদের রুচিকেই কি আমাদের মানদণ্ড ধরতে হবে? তাদের রুচি যে আমাদের চেয়ে সেরা, এই সার্টিফিকেট তাদের কে দিল?
তাহলে, কার সাহিত্য গভীর, কারটা সস্তা, কারটা হালকা...... এসব বিচার কি প্রহসন নয়?
সাহিত্য রচনার তো কোন নিয়মাবলী নেই। বৈষয়িক কোন বিষয় এটা না, একান্তই মানসিক একটা ব্যাপারকে নিয়মের মধ্যে ফেলাও যায় না! তাহলে কোন সাহিত্য ভারী আর কোনটা হালকা, এই বিচারের অধিকারও কারো থাকার কথা না।

তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি এদেরকে যদি আমার কাছে সস্তা লাগে, তাহলে আপনার তো দ্বিমত থাকার কথা না! কারন রুচির ভিন্নতার জন্যই এমন হতে পারে।
তলস্তয় এর “ওয়ার এন্ড পিস” অথবা ভিক্টর হুগোর “লা মিজারেবল” কে আমি যদি হুমায়ূন এর সবচেয়ে ফালতু উপন্যাসেরও নিচে রাখি, আপনাকে কিন্তু সেটাই মেনে নিতে হবে, কারন এটা আমার রুচি!
একই কথা খাটে ড্যান ব্রাউন, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, জুল ভার্ন, মার্ক টোয়েন, সেক্সপিয়ার, শেলি, আইজ্যাক আসিমভ, আলেকজান্ডার বেলায়েভ...... মোদ্দাকথা সকল লেখকের ক্ষেত্রে।

তাই অন্য কারো বিচারে সেরা সাহিত্য মেনে নেয়ার কোন যুক্তি খুজে পাই না! কারন, ঐ ব্যাটার রুচি যে আমার চেয়ে ভাল, এই গ্যারান্টি কিন্তু নেই :D

আর, যে সিম্পল কাহিনী আর প্রাঞ্জল বর্ণনা কে অনেকের ভাষায় হালকা বলা হচ্ছে, তা ই যে আগামী দিনের সাহিত্য রচনার প্রধান স্টাইল হয়ে যাবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কি?
হুমায়ুনিয় স্টাইলই যদি আগামী দিনের সাহিত্যের মূলধারা হয়ে যায়, তাতেও কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কারন সাহিত্য উদার এবং পরিবর্তনে বিশ্বাসী! সাহিত্য গুটিকয়েক সমালোচক আর মুষ্টিমেয় পণ্ডিতের কখনোই ছিলনা অতীতে, ভবিষ্যতেই থাকবে না! ঐসব পণ্ডিতদের ইতিহাস মনে রাখেনি, মনে রেখেছে সাহিত্যিকদেরই!

যুগে যুগে জাদুকরদের হাতে পরিবর্তিত হতে হতেই তার আজকের অবস্থান। একে বেঁধে রাখার বা পাহারা দেবার সুযোগ নেই!
সেই ১৮৫৮ সালের প্যারীচাঁদ মিত্রের “আলালের ঘরের দুলাল” যে স্টাইলে রচিত হয়েছিল, সেখান থেকে পরিবর্তন করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র...
তার “বিষবৃক্ষ” কিংবা “কৃষ্ণকান্তের উইল” চলেছে বঙ্কিমিয় ধারায়......

এরপর বাংলা সাহিত্য পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ কে। যিনি “চোখের বালি” “ঘরে বাইরে” “যোগাযোগ” “গোরা” “চার অধ্যায়” “শেষের কবিতা” এরকম কিছু স্তম্ভের সাহায্যে নির্মাণ করে গেছেন নিজের ধারা।

এলো শরৎচন্দ্র, অসামান্য জনপ্রিয় আরেকজন লেখক। যার লেখায় মানুষ নিজেদেরকে দেখতে পেত, তাই মানুষের মনে স্থান করে নিতে কষ্ট হয়নি তার।
আমাদেরকে দিয়েছেন, “শ্রীকান্ত” “গৃহদাহ” “চরিত্রহীন” এর মতো সব কালজয়ী লেখা!
জন্ম দিয়েছিলেন তার নিজস্ব ধারা।

এলেন তিন বন্দ্যোপাধ্যায়!
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
এবং
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়!

প্রত্যেকেই ছিলেন জনপ্রিয়, প্রত্যেকেরই ছিল নিজস্ব আলাদা স্টাইল!

তারপর এলেন মীর মশাররফ হোসেন এর মতো মুসলিম লেখকেরা, সম্পূর্ণ আলাদা স্টাইল নিয়ে!
এরপর একে একে এলেন, মোজাম্মেল হক, কাজী ইমদাদুল হক, নজিবর রহমানেরা......

এলেন কাজী আব্দুল অদুদ, হুমায়ূন কবির, আবুল ফজল এর মতো লেখকেরা...

এরপর এলেন শওকত ওসমান, আবু রুশদ এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর মতো লেখকেরা......

হাল আমলের হুমায়ূন আহমেদ, সুনীল, সমরেশ, শীর্ষেন্দু, সেলিনা হোসেন, সৈয়দ শামসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন......

কখনও থেমে থাকেনি বাংলা সাহিত্য নির্দিষ্ট কোন ধারায়!

তাই একজন সাহিত্যিকের সৃষ্টিকর্মের প্রেক্ষিতে অন্য কারো তুলনা করা সত্যিই অনুচিত মনে করি।
অনুচিত মনে করি হালকা/ভারী বিচার করাকে।
অনুচিত মনে করি নিজের বিচারে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য অন্যরাও শ্রেষ্ঠ বলতে বাধ্য, এমন ভাবনা কে!
সর্বোপরি অনুচিত মনে করি, সমালোচক নামক প্রাণীদের অহেতুক বাগাড়ম্বরকে!

সাহিত্য নিজেই নিজের পথ চেনে দাদা, কাউকে চিনিয়ে দিতে হবে না :D

(প্রায় একবছর হয়ে গেল লেখাটা লিখেছিলাম! ক্যামনে ক্যামনে একবছর হয়ে গেল! একবারও মনে হয়নি স্যার বেঁচে নেই :( তিনি অবশ্যই বেঁচে আছেন, আমার মাঝে, আপনার মাঝে, আমাদের সবার মাঝে! )

courtesy : https://www.facebook.com/tawfirhasan
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×