somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিয়া

২০ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-একদেশে ছিল এক রাজা, আর একদেশে ছিল এক রাণী, তাদের ছিল ছোট্ট একটা মেয়ে………………

-বাবা, আমি আজ এ গল্প শুনবোনা

-কেন রে মা? কি হয়েছে?

-বাবা, প্রতিদিন তুমি রাজা আর রাণীর গল্প বলো, আজ অন্য একটা গল্প বলো না বাবা। প্লীজ, প্লীজ প্লীজ বাবা

বাবার সাথে এভাবেই আহ্বলাদ করছিল টিয়া, হঠাৎ-ই মা এর হুংকার,

-বাপ-বেটি মিলে খুব গল্প চলছে, তাই না? রাত ক’টা হল ঠিক আছে? রাশেদ কাল না তোমার সকাল ন'টায় মিটিং? আর রাত জাগতে হবেনা, আমি লাইট বন্ধ করছি। টিয়া মামণি, এবার ঘুমাও, কাল না হয় নতুন গল্পটা শুনবে, আচ্ছা?

-আচ্ছা মা, দেখো এই আমি ঘুমাচ্ছি

বলেই, চোখটা বন্ধ করে ফেলে টিয়া। মা-বাবা তার মেয়ের এমন কান্ড দেখে হেসে উঠে, দু'জন-ই টিয়াকে চুমু খায়।

মা এর কোলে ছোট্ট টিয়া আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে।জ্যোৎস্না-র আলো-তে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ রাশেদ সাহেব আর সুমনা।

-রাশেদ কি দেখছো?

-কিছু না

-ঘুমোবেনা?

-ঘুম আসছেনা, আচ্ছা সুমনা, জানো, আমার কাছে না সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে

-সত্যি-ই তাই। মনে আছে রাশেদ, তুমি-তো বিয়ের আগের থেকে-ই মেয়ে মেয়ে করে একদম পাগ্ল ছিলে, একবার তোমাদের পাশের বাসার ভাইয়ার মেয়েকে দেখে কেঁদে-ই দিয়েছিলে তুমি। দেখেছো, আল্লাহ-কে বেশী করে ডাকলে যা চাওয়া হয় উনি তাই দেন। দেখেছো?

-সুমনা, তোমাকে বুঝাতে পারবোনা, তুমি আমাকে কতো বড় একটা গিফট দিয়েছো। আমি সত্যি-ই অনেক বেশী ভাগ্যবান

একটু হেসে সুমনা,

-রাশেদ, তুমি যে কী করতে, রাস্তায় পিচ্চি মেয়ে দেখলেই তুমি তাকিয়ে থাকতে, মুখে তোমার একটা-ই কথা, সুমনা আমাকে একটা মেয়ে দাও, আমাকে একটা মেয়ে দাও, বিয়ের আগে এভাবে বলতে তুমি, আমি তো লজ্জায় কিছুই বলতে পারতাম না

-হা হা হা, খুব মনে আছে, তোমার ফর্সা গাল গুলো লজ্জায় বেগুনী হয়ে যেতো।আমার দিকে তাকাতেই পারতেনা তুমি। সুমনা, ইস্ বেগুনী খেতে ইচ্ছে করছে।

কথা বলতে বলতে রাশেদের হাত-টা নিয়ে খেলা করছিল সুমনা, হঠাৎ রাশেদের উদ্ভট কথায়ে খেপে গিয়ে হাত-টা সরিয়ে নিলো।

-এই হল, আবার খাওয়ার কথা, রাশেদ তুমি একটু-ও বদলালেনা। যাও ঘুমাও এভাবে উদ্ভট কথা শুনে আর কাজ নেই আমার, কাল বেগুনী ভাজবো, যত খুশি খেও।

-রাগ করলে জান? আমি আসলে, হঠাৎ বেগুনী খেতে ইচ্ছে করছিল…

-আই, ভাল হবেনা বলে দিচ্ছি, যাও ঘুমাও, ঘ্যাণ ঘ্যাণ আমার ভাল লাগেনা।

আচমকা, রাশেদ সাহেব একটা চুমু বসিয়ে দিলেন সুমনার গালে।

-কি হচ্ছে, হচ্ছে-টা কী? টিয়া উঠে যাবে-তো

সুমনার কানে আস্তে আস্তে রাশেদ সাহেব বলেন,

-সুমনা, তুমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ, তোমায় আমি অনেক অনেক অনেক ভালবাসি, আমার মেয়ের মা তুমি, আমার বউ তুমি, তুমি আমাদের সবকিছু……

অজান্তে-ই চোখে পানি আসে সুমনার।

-হয়েছে, অনেক হয়েছে, এবার ঘুমাও-তো, কাল সকালে উঠতে না পারলে দেখো কী করি, ঠিক এক বালতি পানি ঢেলে দিবো দেখো

-আচ্ছা আচ্ছা, ঘুমোচ্ছি। সুমনা….

-কী?

-তোমার হাত-টা দাও একটু দাও-না ধরে ঘুমো-ই।

-আচ্ছা, এই নাও, এবার ঘুমাও।

রাশেদ সাহেব সুমনার হাত দু’টো ধরে। চোখ বুজে, স্বপ্ন দেখে তাদের মেয়ে-কে নিয়ে, সুমনা-কে নিয়ে।

***************************************************

সবে মাত্র মিটিং শেষ করে রুম থেকে বের হয়ে মুঠোফোন-টা অন করতে-ই সুমনার এসএমএস,

-রাশেদ, তুমি জলদি বাসায় এসো, টিয়া-কে পাওয়া যাচ্ছেনা, আমি তোমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছি, জানি তুমি মিটিং-এ তাই অফিসে ফোন করে কিছু বলিনি, এসএমএস দিলাম তোমাকে, ফোন-টা অন করতে-ই আমাকে কল করো।

রাশেদ সাহেব ক্ষাণিক ক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন, বুঝে উঠতে পারে না কি করবেন। বসকে বলে সোজা বাসায় পৌছোন।

দরজা খুলতে-ই সুমনা রাশেদ সাহেব-কে জড়িয়ে ধরেন। কান্নায় রাশেদ সাহেবের জলপাই রঙের সার্ট-টা ভিজে যায়। নিজেকে সামলে রাশেদ সাহেব বলেন,

-সুমনা, কেঁদোনা, কী হয়েছে আমাকে বলো। কোথায় টিয়া? কী হয়েছে খুলে বলো…

-আমি টিয়া-কে নিয়ে মীনা বাজার গিয়েছিলাম, ক্যাশে টাকা দিতে ওকে কোল থেকে নামিয়ে ব্যাগ খুলছি, হঠাৎ দেখি টিয়া নেই, অনেক খুঁজেছি, মীনা বাজারের সবাই খুঁজেছে কিন্তু কোথাও ওকে পাওয়া যাচ্ছেনা। কী হবে এখন? কোথায় খুঁজবো আমাদের টিয়া-কে.....

হাউ হাউ করে কেঁদে উঠেন সুমনা।

-আচ্ছা আমি দেখছি, কেঁদোনা তুমি, আমাদের টিয়া-র কিচ্ছু হবেনা ইনশাল্লাহ

বেরিয়ে পড়ে রাশেদ সাহেব, কিছু দূর সামনে যেতে-ই একটা রেল ক্রসিং।এরপর-ই মীনা বাজার।বেশ কিছু লোক ওখানে ভিড় করে আছে, রিক্সা ওয়ালার কাছে জানতে পারলেন কিছুক্ষণ আগেই একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে এখানে। কথা-টা শুনে-ই বুকের মাঝে অজানা এক ব্যথা অনূভব করেন। অনেক আজব ভাবনা মনে আসছে তার।রেল ক্রসিং এর কাছে যেতে-ই কিছু রক্ত দেখতে পান তিনি, চোখ-টা ছল ছল করে উঠে।বাসায় গিয়ে কী জবাব দিবেন সুমনার কাছে ভাবতে থাকেন, মাথা-টা ভন ভন করে ঘুরছে উনার। ATN NEWS-এক্সিডেন্টের পুরোটা খবর না দেখে-ই শোক সামলাতে না পেরে মুর্ছা যান সুমনা।

***************************************************

-সুমনা, সুমনা, উঠো সুমনা।

সুমনা উঠে-ই রাশেদ সাহেব-কে জড়িয়ে কান্না জুড়ে দেয়

-সুমনা, শুনো, সুমনা…

হঠাৎ-ই একটা আওয়াজে সুমনার ঘুম ভেঙ্গে যায়।

-মা

পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তাদের লক্ষী টিয়া তাকে ডাকছে।

-মা, মা কান্না করছো?

সুমনা বুঝতে পারেনা কিছু, আরো জোরে কান্না করে জড়িয়ে ধরে টিয়া-কে। সে কান্না যেন থামতেই চায়-না।

-রশিদ সাহেব বলেন, আর বলোনা, রেল ক্রসিং-এ যেয়ে দেখি একটা বাছুর মারা গিয়েছে, চারিদিক কি রক্ত। এরপর, মীনা বাজার গিয়ে দেখি, দিব্যি তোমার মেয়ে খেলা করছে। সেলস ম্যানদের কাছে জিজ্ঞাস করতেই, বলে আপনি মেয়ের বাবা? কি লক্ষী মেয়ে আপনার! দেখুন কেমন করে খেলছে? আমাদের store-এ ধুকে পড়েছিল, এরপর খোঁজা-খুঁজি করার পর আমরা পেয়েছি, আপনার মিসেসের কাছ থেকে রেখে দেয়া ফোন নাম্বার-টা তে ডায়াল করতে-ই আপনি হাজির। দেখেছো, আমাদের পাগলী মেয়ে-টার কান্ড।

সুমনা এখনো কাঁদছে, রশিদ সাহেব সুমনার কাছ থেকে টিয়া-কে কোলে নিয়ে বলেন,

-আজ আমরা বাইরে খাব, আচ্ছা মামণি? যাও তোমার মা-কে বলো, রেডি হয়ে নিতে।

চোখ মুছতে মুছতে সুমনা,

-আজ সরষে ইলিশ পাকিয়েছি, যাও গোস্ল করে এসো, খাবে, বাইরে না হয় অন্য একদিন যাওয়া যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×