somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইভ টিজিং এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা

০৮ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইভ টিজিং নামক বিষ আমাদের সমাজে নতুন না হলেও এর সরূপ এখন প্রকাশ পাচ্ছে ভিন্ন ভাবে। ইভ টিজিং নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হলেও গত কয়েকদিনের কিছু ঘটনা এ বিষয় নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। নাটোরের সাহসী কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমানকে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই বখাটেদের মটরসাইকেলে চাপা খেয়ে প্রাণ দিতে হল চাঁপা রানী ভৌমিক নামক মধুখালীর এক মাকে। দু’টি হত্যাকান্ডের পেছনের কারণ একই- ইভ টিজিং-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। লক্ষ্যনীয় যে দু’জনই আক্রমনের শিকার হয়েছেন মটরসাইকেল দ্বারা। ফলে এটা ভাবাই যায় যে বখাটেরা নিজেদের বাঁচানোর জন্য মটরসাইকেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা নিঃসন্দেহে এ অসাধারণ অস্ত্রের দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ কৃতজ্ঞতাটুকু দাবী করতে পারে তাদের বাবা-মা, কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যদিও আছে। এখান থেকে বাকী বখাটেরাও শিক্ষা নিচ্ছে কি করে ইভ টিজিং-এর প্রতিবাদকারীকে মটরসাইকেল দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে তা নিছক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে নেয়া যায়। আজকে হয়তো আমরা বুঝতে পারছি, এসব বখাটেদের ধরতেও পারছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত সামনের দিনগুলোতে বখাটেরা এরকম কাজ আরো করবে তবে কোন প্রমাণ রেখে যাবে না। কেউ হয়তো জানবেই না দুর্ঘটনার নামে কতো জনকে যে হত্যা করা হবে বা হচ্ছে।

আজকের দুনিয়ায় সবাই যখন তথ্যপ্রযুক্তির পেছনে ছোটাছুটি করছে ঠিক সেই সময় আমাদের দেশের কিছু তরুণ ছেলেরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে বেরাচ্ছে। সারা দুনিয়াই ইভ টিজিংয়ের ক্ষেত্র হলেও ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে তা বেশ মোটা দাগেই দেখা যায়। ভারতের দিল্লীকে তো ইভ টিজিংয়ের রাজধানীই বলা যায়। সত্তরের দশকের শুরুতে কর্মক্ষেত্রে নারীর আনাগোনার মাঝে ইভ টিজিংয়ের প্রাথমেক সূত্রপাত হলেও অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে ইভ টিজিং এর মাত্রা এতো বেড়েছে যে তা লাল রঙ্গেই পত্রিকার পাতার হেডলাইন হচ্ছে। এরকম হেডলাইন ‘হেডেক’ তথা মাথা ব্যাথার কারন বটে। মনে তাই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক ইভ টিজিং-এর উৎস মূল কি, এর শক্তিই বা কি? কেন প্রতিনিয়ত ইভ টিজিং-এ নীল হচ্ছে আমাদের মেয়েরা? আমরাই বা কেন ব্যার্থ? এসব উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু বিষয় সামনে চলে আসে। দেখা যায় যে দোয়াতের নিচেই অন্ধকার। ফলে আলো হাতরেও পাওয়া যাচ্ছে না ইভ টিজিং-এর বিরুদ্ধে সাফল্য মিছিল।

নারী জৈবিকভাবেই পুরুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় ও লোভনীয় শব্দ। নারীকে মনে করা হয় বিনোদন যন্ত্র। তাকে নিয়ে বিনোদন করা যায়, মেতে থাকা যায় উচ্ছাসে। পুরুষ চায় নারী সহজেই এবং স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের কাছে ধরা দেবে। পুরুষের এ বৈশিষ্ঠ্যসম্পন্ন মানসিকতার জন্য এসব পুরুষকে প্রবল পুরুষ বলা যায়, যাদের কাছে নিজেদের প্রবল ইচ্ছা বা আকাঙ্খাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এটা অস্বীকার করলে ভুল হবে যে প্রবল পুরুষের সংখ্যা সমাজে নিতান্তই হাতেগনা। পুরুষের প্রতি অধস্তন হয়ে থাকা এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে নারীর পরাজয় এবং পুরুষের প্রবল পুরুষ হওয়ার শুরু। নারী বিশ্বাস করে পুরুষের নির্ভরশীলতা এবং পুরুষ এর সুযোগ নেয় , ব্যবহার করে তার স্পার্মের শক্তি। নারী হয় পুরুষের ইচ্ছার নিয়ত্তা। যখন কোন নারী তার (পুরুষের) এ ইচ্ছায় আপত্তি তোলে তখন তা আঘাত করে পুরুষের অহমে। ফলে পুরুষ তার স্বভাবসিদ্ধ বৈশিষ্ঠ্যেই এর প্রতিশোধ নিতে চায়। পুরুষের ক্ষেত্রে এই সরূপটা ঘর থেকে বের হয়ে বৃহত্তর সমাজে গিয়েও ঝাপটা দেয়। ঘরকে দমন করার মত বায়রেও পুরুষ দমন করতে চায় নারীর মন। নারীর ক্ষেত্রে তার নির্ভরশীল মানসিকতাই পুরুষের বিপরীত অবস্থানে নারীকে দ্বাড় করায়। ফলে ঘরের বায়রে নারীর সাথে পুরুষের দ্বন্দ অনিবার্য হয়ে পড়ে। পুরুষ বেছে নেয় ইভ টিজিং-এর পথ।
একজন নারী পুরুষের সামনে উপস্থাপিত হতে পারে মা হিসেবে, বোন হিসেবে অথবা স্ত্রী হিসেবে। তবে বখাটেদের কাছে নারীর এই শেষ রূপটিই সর্বোচ্চ্য আকর্ষণীয়। এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই এটি হয় একপেশে আবেদন বা আচরন। ইভ টিজিং হচ্ছে নারীর পছন্দ ও ভাললাগার বিরুদ্ধে সরাসরি বুড়ো আঙ্গুল দেখানো। “আমার যা ভাল লাগে আমি তো তাই করবো”- একথাটি একজন পুরুষ নির্লিপ্তভাবে বলতে পারলেও সমাজে একজন নারীর কাছে এ ধরণের কথাবার্তা একদমই নিষিদ্ধ। কোন নারীই চায় না সমাজ নিষিদ্ধ কথা বলে নিজের নারীত্বের মাঝে কালিমা লেপন করতে। দ্বিধা আর পাষবিকতার মাঝে নারী চরিত্র আরো কঠিন করে তুলেছে নারীর সব মেনে নেব বৈশিষ্ঠ্য। আমার স্বপ্ন আমার মাঝেই থাক না, কি দরকার লোক দেখানোর যখন স্বপ্নবাজ মন শুধু আমারই। সমাজ সংস্কারের ফেনা তুলে কি হবে? সংস্কারের জন্য তো মুখ বাষ্প করবে পুরুষেরাই, ব্যস্ত থাকবে নারী অধিকারের কথা বলে। তবে এর মাঝেও মাঝে মাঝে কিছু নারীকে রেডিক্যাল হতে দেখা যায়। এরা সব সময় সোচ্চার পুরুষের একপেশে আচরনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠনের জন্মও হয় এ সূত্রে, কিন্তু শেষ ফলাফল হয় শূন্য। রেডিক্যাল নারীরা পায় পুরুষের বিদ্ধেষ, আর সাধারন নারীরা পায় আরো শৃঙ্খলিত অসহায়ত্ব। বুক ফাটবে তবু মখ ফুটবে না- এই মানসিকতা নিয়ে আমাদের মেয়েরা প্রতিনিয়ত হজম করে যাচ্ছে বখাটেদের অত্যাচার। কখনো কখনো বখাটেরা সীমা লঙ্ঘন করলে এ সব অসহায় মেয়েরা সীমা লঙ্ঘন করে জীবনের। রিমি, সিমি বা আরো নাম না জানা অনেকের পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবার কারণ আমরা হয়তো খুজবো না, তবে সেইসব বখাটে যারা নিজেদের প্রবল পুরুষ বলে গর্ব করে তারা নিশ্চয়ই আবার খুজবে নতুন কোন রিমি বা সিমিকে। হয়তো পেয়েও যাবে, দ্বায়িত্ব নিবে পৃথিবী থেকে তাদের হারিয়ে যাবার রাস্তা দেখানোর।

তাহলে প্রতিকার কি? আমরা তো ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করছি, সোচ্চার হচ্ছি কঠোর আইন প্রয়োগের কথা বলে। কিন্তু ফলাফলে তো কোন পরিবর্তন আসছে না। আসলে পুরুষের যে জৈবিক বৈশিষ্ঠ্য তা আইন করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। কারণ আইনের শাস্তি কিন্তু খুব কঠোর না এ ক্ষেত্রে। দন্ডবিধির ৫০৯ ধারায় যে সাজার কথা বলা হয়েছে তা মাত্র এক বছরের। এতে করে অপরাধী আরো প্রতিহিংসাপরায়ন হতে পারে। শাস্তি আরো কঠোর ও দীর্ঘমেয়াদী হলে তবেই তা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ধর্মের দোহাইও কোন কাজের কথা না বরং প্রয়োজন মানবিক বৈশিষ্ঠ্যের পরিবর্তন। নারী যে শুধু বিনোদন যন্ত্র নয় তা নারীকে উপলব্ধি করতে হবে। শুধু মানব বন্ধন বা প্রতিবাদ সভা করেই নয় বরং মানুষ হিসেবে নারী যাতে নিজেকে চিনতে পারে, সে ব্যাপারে সচেতন সমাজের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ ও নারী উভয়কেই পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গোড়া ঠিক না হলে ইভ টিজিং চলতেই থাকবে, আমাদের হয়তো শুনতে হবে বখাটেদের হাতে বলি দেয়া আরো কয়েকটি নাম।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×